চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দিনভর উত্তাপ ছড়িয়েছে কাউন্সিলর প্রার্থীদের অনুসারী সমর্থকরা। কেন্দ্র দখল, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া এবং ভোটারদের বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘাতে জড়িয়েছে কর্মী-সমর্থকরা। এমনকি নিজের পছন্দের প্রার্থীর ভোট ‘নিশ্চিত’ করতে ইভিএমের গোপন ভোটকক্ষেও অবৈধভাবে প্রবেশ করে ভোট দিতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে।
তবে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) পক্ষ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) এস এম মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া নগরীতে বড় কোনো সংঘাত হয়নি। সুষ্ঠুভাবেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।’
ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর থেকেই নগরীর ৩৯ ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৪টি ওয়ার্ডে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নির্বাচনী পরিবেশ। কেন্দ্র দখল, ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের এজেন্টদের বের করে দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থীদের অনুসারী ও সমর্থকরা। সংঘাত, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, গোলাগুলি, ককটেল বিস্ফোরণে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ওয়ার্ডগুলো। শুধু ভোট কেন্দ্র নয়, কিছু কেন্দ্রের বুথও ছিল কাউন্সিলর প্রার্থীর অনুসারীদের দখলে। নির্বাচন চলাকালে সংঘাতের ঘটনায় দুজন নিহত ও কমপক্ষে অর্ধশতাধিক আহত হয়। রণক্ষেত্রে পরিণত হয় নগরীর আলোচিত লালখান বাজার ওয়ার্ড। আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হাসনাত বেলাল এবং এ এফ কবির মানিক অনুসারীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ঘটে। এতে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়। আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর অনুসারীদের মধ্যে নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনী সংঘাতের বলি হন আলাউদ্দিন আলো নামে এক দিনমজুর। এ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী ও বিদ্রোহী প্রার্থী মো. মাহমুদুর রহমানের অনুসারীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত হয় কমপক্ষে ২০ জন। নগরীর আরেক ওয়ার্ড চান্দগাঁও ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ, বিদ্রোহী ও বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘাত হয়। এতে আহত হয় ১৫ জন। ১২ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে নির্বাচনী মাঠে উত্তাপ ছড়িয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল আমিন ও বিদ্রোহী সাবের আহমদের সমর্থকরা। এ ওয়ার্ডে নির্বাচন চলাকালে একজন নিহত এবং কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরা শুধু নিজেদের মধ্যে সংঘাতের মধ্যেই থেমে থাকেননি, তারা ভাঙচুর করেছে ইভিএম মেশিন ও ভোট কেন্দ্র। নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরু থেকে সহিংস হয়ে ওঠা পাঠানটুলী ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর ও বিদ্রোহী আবদুল কাদের ওরফে মাছ কাদের অনুসারীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। একই অবস্থা ছিল ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড, ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ড, ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ড, ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ড, ১২ নম্বর সরাইপাড়া ওয়ার্ড, ২৫ নম্বর রামপুরা ওয়ার্ড, ২৭ নম্বর দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ড, ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গীবাজার ওয়ার্ডের।