মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা
বসুরহাটে ১৪৪ ধারা

শোকসভার ব্যর্থ চেষ্টা কাদের মির্জার র‌্যাব-পুলিশ টহল

নোয়াখালী ও ফেনী প্রতিনিধি

নোয়াখালীর বসুরহাট পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারির মধ্যে শোকসভার ব্যানার টানিয়ে আবদুল কাদের মির্জার অনুসারীরা জড়ো হলেও র‌্যাব-পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। সকাল থেকে বেশ কয়েকবার পৌর মেয়র মির্জার অনুসারীরা রূপালী চত্বরে শোকসভার মঞ্চ করে সেখানে ব্যানার ও চেয়ার দিয়ে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন। প্রতিবারই র‌্যাব-পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় মির্জা মঞ্চের পাশে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে কয়েকজন নেতা-কর্মী নিয়ে অবস্থান করছিলেন। সন্ধ্যায় রূপালী চত্বরে কাদের মির্জাও সাংবাদিক বোরহান উদ্দিন স্মরণে শোকসভার আয়োজন করেন এবং বোরহান হত্যার জন্য মিজানুর রহমান বাদলের সমর্থকদের দায়ী করেন। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদলের নেতৃত্বে টেকের বাজারে প্রতিবাদ সভা হয়েছে। সভায় সাংবাদিক বোরহান উদ্দিন হত্যায় মির্জা কাদেরের সন্ত্রাসী বাহিনীকে অভিযুক্ত করা হয়। বসুরহাট সীমান্তে ফেনী-বসুরহাট সড়কের চাঁদপুর এলাকায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে কাদের মির্জাকে হুঁশিয়ার করে বক্তারা বলেন, নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে যদি আর একবার কথা বলেন আপনার চোখ তুলে ফেলব। হাত ভেঙে ফেলব। তারা বলেন, আজ আমরা ফেনীর সীমান্তে দাঁড়িয়ে কথা বলছি। সামনে আপনার বাড়িতে গিয়ে আপনাকে পেটানো হবে। ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলা আওয়ামী লীগ এ সমাবেশের আয়োজন করে। সাংবাদিক বোরহান উদ্দিন মুজাক্কির হত্যার বিচার দাবিতে গতকাল বেলা আড়াইটায় রূপালী চত্বরে শোকসভা আহ্বান করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। একই স্থানে বিকাল ৩টায় সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়ে রাখেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল। একই স্থানে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণাকে ঘিরে পৌর এলাকায় গতকাল সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। ফলে সকাল থেকে বসুরহাট বাজারে অনেকটা অঘোষিত হরতাল অবস্থা বিরাজ করে। বন্ধ থাকে বেশির ভাগ দোকানপাট। এদিকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদলের নেতৃত্বে টেকের বাজারে প্রতিবাদ সভা হয়েছে। সাংবাদিক বোরহান উদ্দিন হত্যার বিচার ও কাদের মির্জাকে বহিষ্কার দাবিতে প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, কাদের মির্জা গত দুই মাস ধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে বিশেষ করে আমাদের প্রিয় নেতা ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে নানা ধরনের কটূক্তি করে আসছেন। বক্তারা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তাকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান। মির্জা কাদেরের উদ্দেশে বক্তারা বলেন, তার দিন শেষ হয়ে আসছে। তার সন্ত্রাসী বাহিনী সাংবাদিক বোরহান উদ্দিনকে গুলি করে হত্যা করেছে। বক্তারা এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল, চর এলাহী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক, সড়ক ও সেতু মন্ত্রীর ভাগিনা ফখরুল ইসলাম রাহাত, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব রশিদ মঞ্জু, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা ফখরুল ইসলাম সবুজ প্রমুখ।

বসুরহাট সীমান্তে ফেনী-বসুরহাট সড়কের চাঁদপুর এলাকায় সড়ক অবরোধ করে কাদের মির্জার বিরুদ্ধে প্রতবাদ সমাবেশ হয়েছে। দাগনভূঞা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন মাস্টারের সভাপতিত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা বক্তৃতা করেন। বক্তারা বলেন, মির্জা কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সস্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সস্পাদক নিজাম হাজারীসহ ফেনীর বিভিন্ন উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে অশালীন বক্তব্য দিয়ে আসছেন। তাকে দল থেকে ও বসুরহাট থেকে বহিষ্কার করতে হবে। তাকে বসুরহাট থেকে ফেনীর সীমান্ত দিয়ে যাতায়াত করতে দেওয়া হবে না। তার কারণে বসুরহাটে আজ চরম অশান্তি বিরাজ করছে। বক্তারা কাদের মির্জাকে উদ্দেশ করে বলেন, আলজাজিরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে। আপনি কি তাদের এজেন্ট? আপনি কি জাতীয় নেতা? আপনি নোয়াখালী নিয়ে কথা বলেন। ফেনী নিয়ে ও পুরো দেশের নেতাদের বিরুদ্ধে কেন কথা বলেন? আপনি ’৯৬ সালে অটো পাসে বসুরহাট পৌরসভার চেয়ারম্যান হয়েছেন। এখন কীভাবে আপনি অটো পাসের কথা বলেন? আপনি সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি যে করেছেন তা কি ভুলে গেছেন। সমাবেশে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সস্পাদক ও সোনাগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন, ফেনী জেলা যুবলীগের সভাপতি ও দাগনভূঞা উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন, ফেনী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী, সুশেন শীলসহ বিভিন্ন উপজেলার চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও জনপ্রতিনিধিরা বক্তৃতা করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর