রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিবাদ সমাবেশ ঘিরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, লাঠিচার্জ, ইটপাটকেল ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ এবং রাবার বুলেট ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বেলা ১১টায় ছাত্রদলের এক সমাবেশকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। ব্যাপক সংঘর্ষের একপর্যায়ে পন্ড হয়ে যায় সমাবেশ। আতঙ্কে দিকবিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে উপস্থিত লোকজন। কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের উদ্যোগের প্রতিবাদে এ সমাবেশ কর্মসূচি ছিল ছাত্রদলের। সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। সমাবেশ শুরুর আগেই ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ শুরু হয়। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা প্রেস ক্লাবের মূল ফটকের ভিতরে অবস্থান নেয়। পুলিশ এ সময় প্রেস ক্লাবের ভিতরে কাঁদানে গ্যাস ও রারাব বুলেট ছোড়ে। জবাবে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরাও ইটপাটকেল ছোড়ে। একটি অংশ তোপখানা রোডের বিভিন্ন গলি ও সচিবালয় রোডে অবস্থান নিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ সারা দেশের জেলা সদরসহ সব সাংগঠনিক ইউনিটে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ছাত্রদল। এদিকে ঘটনাস্থল প্রেস ক্লাবের আশপাশ থেকে পুলিশ ছাত্রদলের ১৭ নেতা-কর্মীকে আটক করে। ছাত্রদলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঘটনাস্থলে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, ছাত্রদল সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সহ-সভাপতি মামুন খান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এজাজ শাহ, ইডেন কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব সানজিদা ইয়াসমিন তুলি, ঢাকা দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক এম এ গাফফার, ছাত্রদল ঢাকা মহানগর পূর্ব সহ-সভাপতি শাকিল চৌধুরী ও সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক মেহেদী হাসান উপস্থিত ছিলেন। তাদের মোট ৪৯ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে গেলে সেখানে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। পেশাগত দায়িত্ব পালনে থাকা এটিএন বাংলার সিনিয়র ক্যামেরাপারসন মামুনসহ কয়েকজন সাংবাদিকও আহত হন। এ ছাড়া জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিতরে পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনায় প্রেস ক্লাবের পাঁচ-ছয়জন কর্মচারী আহত হন। বেলা ১১টায় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল জাতীয় প্রেস ক্লাবের চত্বরে এসে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশ তাকে অনুমতি ছাড়া সমাবেশ করা যাবে না বলে জানিয়ে দেয়। ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলসহ নেতারাও ছিলেন সেখানে। পুলিশের সঙ্গে কথা বলার পরপরই হাবিব-উন-নবী খান সোহেল জাতীয় প্রেস ক্লাবের মূল গেট দিয়ে বাইরে এসে ফুটপাথে নেতা-কর্মী নিয়ে সমবেত হন। তখন পুলিশ অ্যাকশনে যায়। শুরু হয় লাঠিপেটা। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা প্রেস ক্লাব চত্বরে আশ্রয় নিয়ে প্রতিবাদ জানাতে থাকে। সেখান থেকে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছোড়ে কেউ কেউ। পরে পুলিশের একটি দল প্রেস ক্লাবের ভিতরে ঢুকেও লাঠিপেটা করে এবং কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। একপর্যায়ে ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মী বেরিয়ে সড়কে বসে পড়েন। এ সময় পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে তুলে দেয়। এর পরই উপস্থিত ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। আশপাশে ভাঙচুরও চালায় তারা। তাদের ধাওয়া করে পুলিশ। যাকে সামনে পায়, তাকেই লাঠিপেটা করে। বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশের ধাওয়ার মুখে বিএনপি-ছাত্রদলের কিছু নেতা-কর্মী জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিতরে ঢুকে পড়েন। সেখানে ঢুকে নেতা-কর্মীদের লাঠিপেটা করে পুলিশ। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে কিছু কর্মী বিএমএ ভবনের কোনায় অবস্থান নেয়। তারা সেখান থেকে স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়। তাদের মধ্যে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মী, পুলিশ ও সাংবাদিক রয়েছেন। ঢামেক সূত্র জানিয়েছে, সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রদলের সদস্য, পুলিশ, সাংবাদিকসহ অন্তত ৪৫ জন আহত অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া জানান, আহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্য মুকিমকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে মোস্তফা, রায়হান, সাঈদ, হেনা আক্তার, দ্বীন ইসলাম, সুমাইয়া, সোহেল, হাসিনা, আসলাম, বাবু, রাখাল চন্দ্র ভৌমিক, জাহিদ জামান, শামীমা, শাহজাহান, সাবিনা, ফারুক, আলামিন, জুয়েল, কামাল, মিঠু, হুমায়ুন আহমেদ, সোহেল সরকার, রুবেল আহমেদ, জসিম, সজীব, নিখিল, রাব্বিসহ ৪০ জন আহত অবস্থায় ভর্তি হন। পরে নেতা-কর্মীদের চিকিৎসার খোঁজ নিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান ও প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী হাসপাতালে যান। ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, ‘দেশপ্রেমিক লেখক মুশতাক হত্যার বিচার দাবিতে ছাত্রদল আয়োজিত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশে ন্যক্কারজনক পুলিশের হামলা প্রমাণ করে, স্বৈরাচার সরকার সব মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণ করে ফ্যাসিস্ট কায়দায় ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। কিন্তু ছাত্রদল দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতাকে নিয়ে জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও গণমানুষের অধিকার আদায় করবে ইনশা আল্লাহ।’ পুলিশ বলছে, ছাত্রদলের সমাবেশ করার অনুমতি ছিল না। কেউ জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিতরে অনুমতি ছাড়া অনুষ্ঠান করতে পারে। কিন্তু জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে অনুমতি ছাড়া সমাবেশ করা যাবে না। পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার সাজ্জাদুর রহমান বলেন, সমাবেশ করার জন্য ছাত্রদল কোনো অনুমতি নেয়নি। তারা অনুমতি না নিয়ে প্রেস ক্লাবের ভিতর থেকে প্রায় ৫০০ কর্মীসহ সড়কে নেমে পুলিশের ওপর হামলা করেছে। প্রেস ক্লাবের ভিতর থেকে ইটপাটকেল ছুড়ে মারা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের সাত থেকে আটজন সদস্য আহত হয়েছেন। এ ছাড়া কয়েকজনকে হেফাজতে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
ছাত্রদলের তিন নেতাকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ : ছাত্রদলের তিন নেতাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। যাদের তুলে নেওয়া হয়েছে তারা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক, স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু হায়াত মোহাম্মদ জুলফিকার জেসান এবং সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ছাত্রদল নেতা আতিক মোর্শেদ।