সোমবার, ২৯ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

সাংবাদিকরা বারবার কেন হামলার শিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

যে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি, আন্দোলন, সংগ্রাম, সহিংসতার ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে বারবার হামলার শিকার হচ্ছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। হেফাজতে ইসলামের গত দুুই দিনের সহিংস কর্মসূচি ঘিরে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় বাংলাদেশ প্রতিদিন ও নিউজ টোয়েন্টিফোরের তিনজন সংবাদকর্মীসহ      ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অন্তত ২০ জন গণমাধ্যমকর্মী হামলার শিকার হয়েছেন। এমনকি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের নানাভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন করা হচ্ছে। নানা অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ প্রচারের জন্য দেওয়া হচ্ছে প্রাণনাশের হুমকি। সাংবাদিকদের ওপর হামলা, মামলা, নির্যাতন, নিপীড়ন এখন শুধু রাজধানী ঢাকায় সীমাবদ্ধ নেই। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও কারণে-অকারণে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। এই দুই দিনে আহত সাংবাদিকদের অনেকেই  হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। কেউ কেউ হাসপাতালে ভর্তিও হয়েছেন। সাংবাদিকদের হামলার ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকেও কোনো রকম বক্তব্য বা সহানুভূতি পর্যন্ত জানানো হয় না। রাজনৈতিক কোনো হাঙ্গামা, আন্দোলন, উত্তেজনা, সহিংসতার ছবি ধারণ বা সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিকরা নির্বিচারে হামলার শিকার হচ্ছেন। কখনো কখনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সরকারি কর্মকর্তাসহ খোদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সাংবাদিক নির্যাতন করছেন। অনেক সময় কর্তব্যরত সাংবাদিকদের চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকি দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। সরকারও এ ব্যাপারে প্রতিকারমূলক তেমন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। হামলাকারীরা বরাবরের মতোই থেকে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। সাংবাদিক নির্যাতন-নিপীড়নের কোনো ঘটনার সুরাহাও হয় না কখনই। সরকারও এতে আন্তরিক নয় বলে মনে করেন বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক নেতারা।

গণযোগাযোগ ও গণমাধ্যম বক্তিত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আ আ স ম আরেফিন সিদ্দিক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সাংবাদিকদের ওপর হামলা নতুন কিছু নয়। অতীতে যারা হামলা করেছে, আমরা ধরে নিতে পারি সেই হামলার ধারাবাহিকতা গত দুই দিন আমরা দেখেছি। যারা জঙ্গিবাদী, সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত তারাই হামলা করেছে সাংবাদিকদের ওপর। সাংবাদিকরা যদি তথ্য তুলে ধরতে না পারেন তাহলে দেশের মানুষ কোনো তথ্য পাবেন না। আজ যারা হরতাল দিয়েছে, কী কারণে? আরেকটি দেশের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করছেন এর বিরুদ্ধে। এই সফরের বিরোধিতা থাকতে পারে। এর একটি ভাষা আছে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতি আছে। সেটি না মেনে রাস্তায় দেয়াল তুলে, সহিংসভাবে আন্দোলন শুরু করেছে। এটি কোনো আন্দোলনের স্বাভাবিক ভাষা নয়। যারা আন্দোলন করছে তাদের বক্তব্যও সাংবাদিকরা তুলে ধরছেন। সাংবাদিকরা যদি তাদের বয়কট করতেন তাহলে তাদের বক্তব্য কি সারা দেশে পৌঁছাতে পারত? সাংবাদিকরা তাদের কথা লেখার পরও সেই সাংবাদিকদের ওপর তারাই আবার হামলা করছে, আহত করছে। অনেক সাংবাদিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।’ তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যম সচল রাখা সবার দায়িত্ব। তথ্য পাওয়ার অধিকার সবার রয়েছে। গণমাধ্যম সেই তথ্য মানুষের সামনে তুলে ধরে। যারা এ হামলার সঙ্গে জড়িত, অতীতে আমরা দেখেছি সরকারের একটি অংশ তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে। সরকারের ভিতরে যারা এই সহিংসবাদীদের সহযোগিতা করছেন, তাদেরও চিহ্নিত করতে হবে। সরকারকে এ হামলার বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। সুস্থ সাংবাদিকতা আমাদের সচল রাখতেই হবে।’

বিশিষ্ট সাংবাদিক নেতা, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও ডেইলি অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সাংবাদিকরা রাষ্ট্র ও সমাজের যে কোনো অশান্ত পরিবেশ, সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকেন। মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষায় প্রকৃত সাংবাদিকরা কাজ করেন। সেই সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। এটা থেকে স্পষ্ট হয় যে, যারা সহিংসতা ছড়াতে চায়, সমাজে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে, তারা চায় না সাংবাদিকরা দায়িত্ব পালন করুক। অতীতেও আমরা দেখেছি রাষ্ট্র ও সমাজের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত শক্তি সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছে। গত দুই দিনের ঘটনায় একইভাবে সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয়েছে সেই চিহ্নিত শক্তি।’ তিনি বলেন, ‘এই চিহ্নিত শত্রু শুধু গণমাধ্যম নয়, পুরো রাষ্ট্রকাঠামোকে আঘাত করেছে। এর অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাংবাদিকরা আক্রমণের শিকার হয়েছেন। যারা জঙ্গিবাদী তারাই এ হামলার জন্য দায়ী। তাদের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের আরও বেশি সোচ্চার হয়ে কাজ করতে হবে। এটিকে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে সাংবাদিকতা দিয়ে। লেখনী দিয়ে। আমাদের দায়িত্ব সঠিক চিত্র তুলে ধরা। জ্বালাও-পোড়াও করে যারা রাষ্ট্রকে স্তব্ধ করে দিতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া সাংবাদিকের দায়িত্ব হবে। একই সঙ্গে গণমাধ্যমের ওপর এ হামলাকে চিহ্নিত করতে হবে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশের ওপর হামলা হিসেবে।’

সিনিয়র সাংবাদিক জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু বিচার হতে হবে। দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারকে সবার আগে আন্তরিক হতে হবে। হেফাজতে ইসলামের মোদিবিরোধী কর্মসূচিতে গণমাধ্যমকর্মীদের বেধড়ক পেটানো হয়েছে। অনেক সময় ইচ্ছা করেও সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়। এসব হামলা কিন্তু যে কোনো ধরনের সহিংসতা বা আন্দোলনের প্রকৃত তথ্য তুলে আনার ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার বিকাশে এসব ‘সাংবাদিক হামলা-নির্যাতন’ বন্ধ করা খুবই জরুরি বলে মনে করেন এই সাংবাদিক নেতা।

আরেক সিনিয়র সাংবাদিক জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ এ প্রসঙ্গে বলেন, সাংবাদিক নির্র্যাতন স্বাধীন সাংবাদিকতার অন্তরায়। অনির্বাচিত সরকার বছরের পর বছর ক্ষমতায় থাকায় সাংবাদিক নির্যাতন বেড়েছে বলে তিনি মনে করেন। অনেক সময় সরকার, জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছত্রচ্ছায়ায়ও সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। অথচ সরকার এসব ঘটনার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এটি খুবই উদ্বেগজনক বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে দেশব্যাপী সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় এক যুক্ত বিবৃতিতে এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের বিচার দাবি করেছেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী ও সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান। বিবৃতিতে বলা হয়, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে একাত্তর টিভির স্টাফ রিপোর্টার ইশতিয়াক আহমেদ (ইশতিয়াক ইমন) ও বাংলাভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার দীপন দেওয়ানসহ অন্তত ১০ জন সাংবাদিক খোদ রাজধানীতে হামলার শিকার হয়েছেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়।

সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ১৯৯৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ২২ বছরে বাংলাদেশে অন্তত ৩৫ জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন। একদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও নানা রকম ভয়ভীতি-হুমকির কারণে সাংবাদিকতার পরিসর সংকুচিত হয়ে উঠছে, অন্যদিকে শারীরিকভাবে হামলা ও হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে সাংবাদিকদের। এসব হামলা-নির্যাতন সাংবাদিকতা পেশাকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে এবং তথ্য প্রকাশে বাধা দেওয়ার মধ্য দিয়ে তা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকেও খর্ব করছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সাংবাদিক নেতারা অভিযোগ করে আসছেন, সাংবাদিক নির্যাতন ও সাংবাদিক হত্যার যথাযথ বিচার না হওয়া স্পষ্টতই অপরাধীদের দায়মুক্তি দিচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হলে সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধে সদিচ্ছার প্রমাণ রাখতে হবে সরকারকে।

রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে বিভাগীয় শহর কিংবা মফস্বল- সর্বত্রই চলছে এই নির্যাতন। স্থানীয় প্রভাবশালী, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা বা সদস্য সবার বিরুদ্ধেই বিভিন্ন সময় সাংবাদিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। লোকচক্ষুর অন্তরালে তুলে নিয়ে নির্যাতন থেকে শুরু করে প্রকাশ্য দিবালোকে জনসমক্ষে মারধরের শিকার হচ্ছেন, নির্যাতিত হচ্ছেন সাংবাদিকরা। কিন্তু দেশে একের পর এক সাংবাদিক হত্যা আর নির্যাতন-নিপীড়নের বিচার নেই। হত্যা ও নির্যাতনের অসংখ্য মামলা বছরের পর বছর ঝুলে আছে। বিচারের কোনো অগ্রগতি নেই। বিচার না করায় দেশে এখন সাংবাদিক নির্যাতন নিত্যকার বিষয় হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, বায়তুল মোকাররম এলাকায় বিক্ষোভ-সংঘর্ষের সংবাদ সংগ্রহ ও ছবি তোলার সময় এই সাংবাদিকরা ন্যক্কারজনক হামলার শিকার হন। বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলার সময় অস্ত্রধারী চার ব্যক্তির ছবি তোলায় দেশ রূপান্তরের ফটোসাংবাদিক রুবেল রশীদকে লোহার রড দিয়ে পেটাতে থাকলে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। একই সঙ্গে তার মূল্যবান ক্যামেরা ও ব্যাগ ছিনিয়ে নেয় হামলাকারীরা। রুবেল জানিয়েছেন, ওই অস্ত্রধারীরা পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থার লোক ছিলেন না। ছবি তুলে ফেলার কারণেই তারা তাকে বেধড়ক মেরেছেন। পরে রুবেল রশীদকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এদিকে গতকাল নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় হেফাজতে ইসলাম ও পুলিশের সংঘর্ষের সময় নিউজ টোয়েন্টিফোরের স্টাফ রিপোর্টার মৌ খন্দকার ও গাড়িচালক রাজু তালুকদার, বৈশাখী টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার আশিক মাহমুদ, ইনডিপেনন্ডেন্ট টেলিভিশনের রিপোর্টার খালেদ রায়হান, নিউএজের সিনিয়র রিপোর্টার মোক্তাদির রশিদ রোমিও আহত হন। এ ছাড়া নোয়াখালীতে হেফাজতে ইসলামের ছোড়া ইটের আঘাতে আহত হন এশিয়ান টিভির জেলা প্রতিনিধি মানিক ভূঁইয়া, ৭১ টিভির জেলা প্রতিনিধি মিজানুর রহমান, বাংলা টিভির জেলা প্রতিনিধি ইয়াকুব নবী ইমন ও ক্যামরাপারসন মনির হোসেন।

শুক্রবার বায়তুল মোকাররমে হেফাজতে ইসলাম ও পুলিশের সংঘর্ষের সময় প্রথম আলোর ফটোসাংবাদিক হাসান রাজা ও আশরাফুল আলম, ডেইলি স্টারের ফটোসাংবাদিক এমরান হোসেন ও প্রবীর দাস, দেশ রূপান্তরের হারুনুর রশীদ রুবেল, বাংলাদেশ প্রতিদিনের ফটোসাংবাদিক জয়ীতা রায়, নিউএজের আবদুল্লাহ অপু, বিডিনিউজ২৪.কমের ফটোসাংবাদিক মাহমুদুজ্জামান অভি, ডেইলি সানের রিয়াজ আহমেদ ও সারাবাংলা ডট নেটের ফটোসাংবাদিক হাবিবুর রহমান আহত হন। ঢিলের আঘাতে  ৭১ টিভির সাংবাদিক ইশতিয়াক ইমন এবং পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে আহত হন বাংলাভিশন টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার দীপন দেওয়ান ও বাংলানিউজ২৪.কমের স্টাফ রিপোর্টার শেখ জাহাঙ্গীর আলম। শুক্রবার চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে হেফাজতে ইসলাম ও পুলিশের সংঘর্ষের সময় দৈনিক পূর্বকোণ পত্রিকার হাটহাজারী থানা প্রতিনিধি খোরশেদ আলম আহত হন। এর আগে বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলায় আহত হন প্রথম আলোর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আসিফ হিমাদ্রী ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আবিদ হাসান রাসেল।

সাম্প্রতিক অন্যান্য ঘটনাতেও দেখা গেছে, এমন সংঘাত-সংঘর্ষের সময় সাংবাদিকরা যেমন পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলার শিকার হয়েছেন, তেমনি অস্ত্রশস্ত্র-লাঠিসোঁটা নিয়ে বিক্ষোভ বা সমাবেশে হামলাকারী রাজনৈতিক সন্ত্রাসীদেরও টার্গেট হচ্ছেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাংবাদিকদের কোনো সুরক্ষা দিচ্ছে না। উপরন্তু কখনো কখনো নিজেরাই চড়াও হচ্ছেন সাংবাদিকদের ওপর। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে এমন হামলায় সাংবাদিকরা প্রাণও হারাচ্ছেন। সম্প্রতি নোয়াখালীর বসুরহাটে পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জা এবং তার প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের অপর একটি গ্রুপের কর্মসূচিতে দুই পক্ষের সমর্থকদের সংঘর্ষের ভিডিও ধারণের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান দৈনিক বাংলাদেশ সমাচারের নোয়াখালী প্রতিনিধি বুরহান উদ্দিন মুজাক্কির। কিছুদিন আগে চট্টগ্রামের সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার চার দিন নিখোঁজ থাকার পর আহত অবস্থায় ছাড়া পেয়েও আতঙ্কে চিৎকার করে উঠেছিলেন, ‘আমি আর নিউজ করব না, আমাকে আর মারবেন না প্লিজ।’ এর ফলে মুক্ত গণমাধ্যমের বৈশ্বিক সূচকেও বাংলাদেশের অবস্থান নেমেছে তলানিতে। গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টারস উইদাউট বর্ডারসের (আরএসএফ) প্রেস ফ্রিডম ইনডেস্কে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫০তম।

সর্বশেষ খবর