করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী গত বুধবার থেকে গণপরিবহনে ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। তবে বাসের সংখ্যা না বাড়ায় আগের দিনের মতো গতকালও সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে দেখা গেছে রাজধানীবাসীকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদে দাঁড়িয়েও বাসে উঠতে না পেরে অনেকে পায়ে হেঁটে বা রিকশায় রওনা দিয়েছেন গন্তব্যে। কেউ ফিরে গেছেন বাসায়। অফিসগামী যাত্রীদের অনেকেই নির্ধারিত সময়ে পৌঁছাতে পারেননি কর্মস্থলে। এ নিয়ে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল সরেজমিন দেখা গেছে, অধিকাংশ বাসেই দুটি সিটে একজন করে যাত্রী বসা। প্রতিটা স্টপেজে শত শত মানুষ বাসে ওঠার জন্য অপেক্ষা করছে। একটা বাস দাঁড়ালেই আসন পেতে রীতিমতো যুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছেন যাত্রীরা। ধাক্কাধাক্কি করে অপেক্ষাকৃত তরুণরা বাসে উঠতে পারলেও বিপাকে পড়তে দেখা গেছে বয়স্ক মানুষ ও নারীদের। নর্দা বাস স্টপেজে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় দাঁড়িয়ে বাসে উঠতে না পেরে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে উত্তরায় কর্মস্থলে রওনা দেন পারলার কর্মী সেঁজুতি। তিনি বলেন, এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে। তার ওপরে এক দিনের বেতনের টাকায় সিএনজির ভাড়াই উঠবে না। না গেলে চাকরিটাও থাকবে না। বাসে উঠতে না পেরে গতকাল রাজধানীর কয়েকটি স্থানে সড়ক আটকে বিক্ষোভ করেন যাত্রীরা। সকাল ৯টার দিকে খিলক্ষেতে সড়ক আটকে বিক্ষোভ করেছেন অফিসগামী যাত্রীরা। তাদের বিক্ষোভে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল বিঘিœত হয়। পরে যাত্রীদের কেউ রিকশায়, কেউ অটোরিকশায় গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, উত্তরা থেকে আসা বাসগুলো অর্ধেক যাত্রী নিয়েই খিলক্ষেত আসায় এখান থেকে কেউ বাসে উঠতে পারছিল না। দু-একটি বাসে সিট খালি থাকলেও স্বল্প দূরত্বে যাওয়ার কথা বললে যাত্রী তুলছিল না। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেশির ভাগ অফিস, কারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পুরোদমে চলছে। চাকরিজীবীদের কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে। অর্ধেক যাত্রী বহনের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হলে দ্বিগুণ গণপরিবহনের ব্যবস্থা করা দরকার। সেটা না হওয়াতে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। নিয়ম মানছে না হিউম্যান হলার : এদিকে বাসগুলো অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করলেও রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে চলাচলকারী হিউম্যান হলারে গতকালও গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। আবার সরকার গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানোয় তারা যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়াও আদায় করছে। গতকাল খিলগাঁও রেলগেট থেকে গুলিস্তান রুটের প্রতিটি লেগুনায় গাদাগাদি করে যাত্রী নিতে দেখা গেছে। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে জানতে চাইলে এক চালক বলেন, ঢাকায় লেগুনার অনুমোদন নেই। তাই স্ব^াস্থ্যবিধিও নেই। যাত্রীরাই জোর করে উঠছে। আমাদের কী করার আছে? এবার লঞ্চ ভাড়া বাড়ল ৬০ শতাংশ : যাত্রী ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনার সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য লঞ্চ মালিক সমিতির দাবি অনুযায়ী লঞ্চের বর্ধিত ৬০ শতাংশ ভাড়া ইতিমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে। তবে কেবিনের ক্ষেত্রে বর্ধিত ভাড়া কার্যকর হবে না। নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি লঞ্চে ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহনের বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা কঠোরভাবে পালনের আহ্বান জানান। এ সময় জানানো হয়, গত বুধবার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে লঞ্চ মালিকরা যাত্রী ৫০ শতাংশ কমিয়ে নৌ সার্ভিস অব্যাহত রাখতে লঞ্চে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। গতকাল তা অনুমোদন করা হয়।