সংকট নিরসন করে টিকা কর্মসূচি চলমান রাখতে বিকল্প পথে হাঁটছে দেশ। টিকা পেতে তিন উৎসে চলছে জোর চেষ্টা। চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র থেকে টিকা কিনতে সরকারি-বেসরকারিভাবে চলছে আলোচনা। এর মধ্যে চীন, রাশিয়ার টিকা জরুরি অনুমোদন দিয়ে চলছে কেনা ও উৎপাদন প্রক্রিয়া। চেষ্টা চলছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের চুক্তির পাওনা টিকা আনার। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নার টিকা আনার বিষয়ে চলছে আলোচনা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, উপহার হিসেবে চীনের দেওয়া ৫ লাখ ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা ১০ মের মধ্যে বাংলাদেশে পৌঁছাতে পারে। চীন আমাদের বলেছে ৫ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে দেবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটা আনার ব্যবস্থা করছে, হয়তো ১০ মের মধ্যে বাংলাদেশে আসতে পারে। সরকার চীন থেকে যে টিকা কিনতে চায় সেগুলো আসতে আরও সময় লাগবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘টিকা কেনার জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। চীন তাতে সম্মত হলে আলোচনা শুরু হবে। রাশিয়ার সঙ্গেও আমাদের আলোচনা হয়েছে। তারা টিকা দিতে চায়, উৎপাদনও করতে চাচ্ছে। আমরা দুটি দেশের সঙ্গেই কথা বলে রাখছি।’
গত ২৭ এপ্রিল রাশিয়ার গামালিয়া ইনস্টিটিউটের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা ‘স্পুটনিক ভি’ জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ। এরপর ২৯ এপ্রিল চীনা কোম্পানি সিনোফার্মের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকাকেও সবুজ সংকেত দেওয়া হয়। এর আগে গত ৮ জানুয়ারি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার অনুমোদন দিয়েছিল দেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। রাশিয়া থেকে ৪০ লাখ ডোজ টিকা কেনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে, এগিয়ে চলছে চীন থেকে টিকা কেনার কাজও। কিন্তু এর বাইরে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে রাশিয়া ও চীন থেকে প্রযুক্তি এনে দেশীয় প্রতিষ্ঠানে টিকা উৎপাদনে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে চুক্তিমাফিক নির্ধারিত সময়ে টিকা না পেয়ে বিকল্প পথে টিকা পাওয়ার চেষ্টা করছে দেশ।ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশে তিনটি প্রতিষ্ঠানের টিকা তৈরির সক্ষমতা আছে। এগুলো হলো- ইনসেপ্টা, হেলথ কেয়ার ও পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস। শুরুতে ইনসেপ্টার সঙ্গে যোগাযোগ হবে। চীনা ও রাশিয়ানরা এসে দেখবেন। তারা পর্যালোচনা করবেন। এরপর তাদের মধ্যে সমঝোতা হবে টিকা উৎপাদনের জন্য। ইনসেপ্টার প্রতি মাসে ৮ মিলিয়ন টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা আছে বলে তিনি জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানি মডার্নার তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা আনার জন্য বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানি রেনাটা ফার্মাসিউটিক্যালস সরকারের কাছে আবেদন করেছে। গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠান শেষে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, মডার্নার টিকা আনার জন্য রেনাটা ফার্মাসিউটিক্যালস আবেদন করেছে। এ-সংক্রান্ত কাগজপত্র ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরে পাঠানো হয়েছে। ‘তারা যাচাই-বাছাই করে দেখছেন, ওই কোম্পানির সক্ষমতা আছে কি না, তারা আনতে পারবেন কি না।’ মডার্নার টিকা শূন্য ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। দেশে এ ধরনের ব্যবস্থা আছে কি না তা জানতে চান সাংবাদিকরা। জবাবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের ক্যাপাসিটিতে আমরা এটা ঢাকায় রাখতে পারব। কিন্তু ঢাকার বাইরে এই টিকা সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত নেই।’ এই টিকার বাইরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকে পাওয়া যাবে ফাইজার-বায়োএনটেকের ১ লাখ ডোজ টিকা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৬৫৬ জন এবং দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়েছেন ২৮ লাখ ৫ হাজার ৬৯৪ জন। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে চুক্তি অনুযায়ী পাওয়া ৭০ লাখ ডোজ টিকা ও ভারত সরকারের উপহার হিসেবে ৩২ লাখ ডোজ টিকা দিয়ে চলছে গণটিকাদান কর্মসূচি। কিন্তু ভারতে করোনা পরিস্থিতির অবনতির কারণে ও কাঁচামালের সংকটে টিকা রপ্তানি বন্ধ করেছে ভারত সরকার। গত দুই মাসে সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কোনো টিকার চালান আসেনি দেশে। এ পরিস্থিতিতে টিকা সংকটে প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। হাতে নেই পর্যাপ্ত দ্বিতীয় ডোজের টিকাও। চুক্তির বাকি টিকা পেতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সেরামের ডিলার বেক্সিমকো ফার্মার তরফ থেকে চলছে জোর চেষ্টা।