বৃহস্পতিবার, ২০ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

মিক্সড ডোজ নিয়ে আলোচনা

চীন থেকে সরাসরি টিকা কেনায় অনুমোদন

জয়শ্রী ভাদুড়ী

মিক্সড ডোজ নিয়ে আলোচনা

দেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সংকটে দ্বিতীয় ডোজে অন্য টিকা দেওয়া নিয়ে চলছে আলোচনা। প্রায় ১৪ লাখ মানুষের দ্বিতীয় ডোজের টিকা পাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। তাই দুই কোম্পানির দুই ডোজ মিলে করোনাভাইরাসের মিক্সড ডোজ টিকা দেওয়া যাবে কি না সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছে পরামর্শ চেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র ও পরিচালক ডা. রোবেদ আমীন গতকাল স্বাস্থ্য বুলেটিনে বলেন, ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে আমরা সংশয়ে আছি টিকা পাব কি না। ভারত ছাড়াও আমেরিকা, কানাডার সঙ্গে সরকার আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী টিকার মিক্সড ডোজ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। এ নিয়ে চলছে বিস্তর গবেষণা। যেমন প্রথম ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়ে দ্বিতীয় ডোজে অন্য কোনো কোম্পানির টিকা দেওয়া যাবে কি না। অর্থাৎ দুই ডোজে দুই ধরনের টিকা দেওয়া যাবে কি না। সম্প্রতি স্পেনের এক জার্নালে প্রকাশিত একটি লেখায় দেখা গেছে, তাদের     বিজ্ঞানীরা মিক্সড ডোজ নিয়ে গবেষণা করছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রথম ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এবং দ্বিতীয় ডোজ মডার্না কিংবা ফাইজারের মতো এমআরএনএ টিকা দেওয়ার ফলে মানুষের শরীরের অ্যান্টিবডি ৩০-৪০ গুণ বেড়েছে, যা করোনা প্রতিরোধে সহায়ক। আবার যারা প্রথম ডোজ এমআরএনএ এবং দ্বিতীয় ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন, সে ক্ষেত্রেও অনেক বেশি অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার প্রমাণ তারা পেয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের ভাবার সময় এসেছে, যখন একই টিকা অনেক পরিমাণে রাখতে পারছি না, বিভিন্ন রকম টিকা আমাদের কাছে এসেছে। সে ক্ষেত্রে এই মিক্সড ডোজ টিকা চালু করা যাবে কি না। এ বিষয়ে টিকা-সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির কাছে মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে।’ ফুরিয়ে আসছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার মজুদ। আর মাত্র এক সপ্তাহ চলবে দেশে মজুদকৃত টিকা। টিকার চালান ফুরিয়ে আসায় ১৪ লাখ মানুষের দ্বিতীয় ডোজের টিকা পাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। সমস্যা সমাধানে বিকল্প উৎস থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। এর মধ্যেই বাংলাদেশকে চীন উপহার হিসেবে দিয়েছে ৫ লাখ ডোজ টিকা। এই টিকা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাবেন ইন্টার্ন চিকিৎসক, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পে কর্মরত চীনের নাগরিক এবং চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ডোজের টিকা আগামী সপ্তাহের মধ্যে ফুরিয়ে যাবে। প্রতিষ্ঠানভেদে তা আরও দু-এক দিন কমবেশি হতে পারে। গতকাল পর্যন্ত ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯১২ জনকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩৬ জন। দ্বিতীয় ডোজের জন্য অপেক্ষায় আছেন ১৯ লাখ ৪৩ হাজার ৭৬ জন। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে আছে ৭ লাখের কিছু বেশি টিকা। ঔষধ প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ৮ জানুয়ারি ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার অনুমোদন দেওয়া হয়। সেরামের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী টিকা সরবরাহ নিশ্চিত না হওয়ায় ২৭ এপ্রিল রাশিয়ার মস্কোর গামালিয়া ইনস্টিটিউটের তৈরি স্পুটনিক-ভি এবং ২৯ এপ্রিল চীনের বেইজিং ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্টের উৎপাদিত সিনোফার্মের টিকাকে জরুরি প্রয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়। এ অবস্থায় রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি ও চীনের সিনোফার্মের টিকা বাংলাদেশে উৎপাদনের কথা ভাবা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি ওষুধ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান টিকা উৎপাদনে আগ্রহও দেখিয়েছে। তবে টিকা উৎপাদন শুরু করতে চার-পাঁচ মাস সময় লাগবে। সে পর্যন্ত টিকা কর্মসূচি চলমান রাখা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

সিনোফার্মের টিকা সরাসরি ক্রয়ে নীতিগত অনুমোদন : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জরুরি বিবেচনায় চীনের সিনোফার্মের তৈরি সার্স-কোভ-টু ভ্যাকসিন সরাসরি ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। গতকাল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সভা শেষে অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আক্তার। কালকের বৈঠকে করোনা রোগীদের জন্য ৪০টি অক্সিজেন জেনারেটর ক্রয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আক্তার সাংবাদিকদের জানান, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীন সিএমএসডি কর্তৃক কভিড-১৯ সংক্রমিত রোগীর ব্যবহারের জন্য ৪০টি অক্সিজেন জেনারেটর সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহ অভিজ্ঞতায় অক্সিজেন সংকট এবং অক্সিজেনের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে। দেশটিতে শুধু অক্সিজেনের অভাবে প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। ভারত সরকারও অক্সিজেনের জোগান দিতে পারছে না। ভারতের এই পরিস্থিতিও বিবেচনায় রাখছে সরকার। এ জন্য দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনায় ৪০টি অক্সিজেন জেনারেটর কিনছে সরকার। সময় স্বল্পতার কারণে জরুরি ভিত্তিতে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এসব জেনারেটর কেনা হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আক্তার সাংবাদিকদের জানান, অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ চীন থেকে করোনাভাইরাসের টিকা সংগ্রহের একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করলে কমিটি এতে অনুমোদন দেয়। প্রস্তাবটি হচ্ছে জনস্বাস্থ্য সংরক্ষণ ও করোনা সংক্রমণ রোধে জরুরি বিবেচনায় চীনের তৈরি সার্স-কোভ-টু ভ্যাকসিন সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ক্রয়ের প্রস্তাব। প্রস্তাবটি নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটি ভ্যাকসিন ক্রয়ের একটি প্রস্তাব। এটি সিনোফার্মের ভ্যাকসিন। এখানে কী পরিমাণ, কত দিনের মধ্যে আনা হবে এসব কিছু বলা হয়নি। শুধু চীনের সিনোফার্ম থেকে সার্স-কোভ-টু ভ্যাকসিন প্রয়োগের প্রস্তাব ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর স্বীকৃতি দিয়েছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে চীন থেকে টিকা সংগ্রহ করার অনুমোদন দিয়েছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। কী পরিমাণ সংগ্রহ করা হবে এবং কত টাকা লাগবে তা জানা যাবে যখন এ-সংক্রান্ত ক্রয় প্রস্তাব কমিটির সভায় উপস্থাপন হবে।

সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ৫ হাজার ৬২৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও মেইনটেনেন্স ড্রেজিংয়ের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আক্তার বলেন, অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য দুটি এবং ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ১০টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। ক্রয় প্রস্তাবগুলোর মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের দুটি, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দুটি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দুটি, বিদ্যুৎ বিভাগের একটি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের একটি, জননিরাপত্তা বিভাগের একটি এবং বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের একটি প্রস্তাবনা ছিল। ক্রয় কমিটির অনুমোদিত ৯টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ৮ হাজার ৭৮৪ কোটি ২৮ লাখ ৪৩ হাজার ৯৩ টাকা। মোট অর্থায়নের মধ্যে জিওবি থেকে ব্যয় হবে ২ হাজার ৫১৮ কোটি ২৮ লাখ ৭৯ হাজার ৪৯০ টাকা এবং দেশীয় ব্যাংক ও বিশ্বব্যাংকের ঋণ ৬ হাজার ২৬৫ কোটি ৯৯ লাখ ৬৩ হাজার ৬০৩ টাকা।

বৈঠকে বরিশালে ৩৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি চালের সাইলো নির্মাণ কাজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব জানান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন খাদ্য অধিদফতর কর্তৃক ‘মডার্ন ফুড স্টোরেজ ফ্যাসিলিটিজ (এমএফএসপি)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর জিডি-২৭ এর আওতায় বাংলাদেশের সব খাদ্য গুদামে সফটওয়্যার স্থাপন, ডেটা সেন্টার স্থাপন, ইন্টারনেট কানেকশন, মনিটরিং সিস্টেম স্থাপন এবং সফটওয়্যার সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি সরবরাহ কাজের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২৬১ কোটি ৭০ লাখ ৭৬ হাজার ৬০৯ টাকা। যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে (১) বেক্সিমকো কম্পিউটার্স লিমিটেড, (২) বাংলাদেশ এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড (৩) টেক মহিন্দ্র লিমিটেড, ইন্ডিয়া, এবং (৪) টেক ভ্যালি নেটওয়ার্কস লিমিটেড।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর