বৃহস্পতিবার, ২০ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

অ্যাপসে পাচার হচ্ছে শত কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

অ্যাপসে পাচার হচ্ছে শত কোটি টাকা

ডিজিটাল কারেন্সি ব্যবহার করে অর্থ পাচারের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে স্ট্রিমকার নামে একটি বিশেষ অ্যাপ। মানুষকে আকৃষ্ট করতে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সুন্দরী তরুণীদের লাইভে এনে পাতা হয় ফাঁদ। অনেকে ওই তরুণীদের খুশি করতে টাকা দিয়ে অনলাইন কারেন্সি কিনে তা উপহার দেন। তরুণীদের দিয়ে পাতা এই ফাঁদের মাধ্যমে স্ট্রিমকার অ্যাডমিনরা হাতিয়ে নেন শত কোটি টাকা। পরে তা পাচার করা হয় বিভিন্ন দেশে।

এভাবে চক্রটি বিভিন্ন ব্যাংক, ক্রিপ্টো কারেন্সি ও হুন্ডির মাধ্যমে শত কোটি টাকা পাচার করেছে বলে দাবি পুলিশের। মঙ্গলবার নোয়াখালীর সুধারামপুর, ঢাকার সাভার ও বনশ্রী এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের চার সদস্যকে

গ্রেফতারের পর এ তথ্য জানিয়েছে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)। এরা হলেন জমির উদ্দিন, কামরুল হোসেন ওরফে রুবেল, মনজুরুল ইসলাম হৃদয় ও অনামিকা সরকার।

গতকাল ঢাকার বারিধারায় এটিইউ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসপি মাহিদুজ্জামান বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একটি বিশেষ অ্যাপ স্ট্রিমকার। বাংলাদেশে এই অ্যাপ সরকারিভাবে নিষিদ্ধ হলে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এগুলো তারা ব্যবহার করছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে মূলত চ্যাটিং করে থাকে। এ ছাড়া অন্যান্য অপশনের মধ্যে জুয়াও রয়েছে। ব্যবহারকারীরা সাধারণত সুন্দরী মেয়ে ও সেলিব্রিটিদের জন্য আড্ডা দেওয়ার জন্য এ অ্যাপটি ব্যবহার করেন। এতে ইউজার আইডি ও হোস্ট আইডি নামে দুই ধরনের আইডি রয়েছে। হোস্টরা একটি হোস্ট এজেন্সির মাধ্যমে এই অ্যাপে হোস্টিং করেন। সুন্দরী মেয়ে এবং সেলিব্রেটিরাই সাধারণত এই এজেন্সির মাধ্যমে হোস্ট আইডি খোলেন। এতে বিন্স এজেন্সি ও হোস্ট এজেন্সি নামে দুই ধরনের এজেন্সি রয়েছে। বিন্স এজেন্সিসমূহ বিদেশি এই অ্যাপটির অ্যাডমিনদের কাছ থেকে বিন্স ক্রয় করে ব্যবহারকারীদের কাছে বিক্রি করে। এই অ্যাপের ব্যবহারকারী বিন্স ও হোস্টদের সঙ্গে লাইভ স্ট্রিমিংয়ে আড্ডা দেওয়ার জন্য গিফট হিসেবে টাকা দিয়ে ডিজিটাল কারেন্সি ক্রয় করে। এখানেও বিন্স ও জেমস নামে দুই ধরনের ডিজিটাল কারেন্সি রয়েছে। প্রতি ১ লাখ বিন্সের মূল্য ১ হাজার ৮০ টাকা এবং প্রতি ১ লাখ জেমসের মূল্য ৬০০ টাকা। কিন্তু এক বিন্স সমান এক জেমস। ব্যবহারকারীরা হোস্টদের গিফট হিসেবে বিন্স দিলেও ওই বিন্স হোস্টদের কাছে এলেই তা জেমসে পরিণত হয়। সঞ্চিত জেমসের পরিমাণের ওপরই নির্ভর করে হোস্টদের ইনকাম। তবে হোস্টদের মাস শেষে বেতন পাওয়ার জন্য শুধু সঞ্চিত জেমসই যথেষ্ট নয়। তাকে প্রতিদিন এবং প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য লাইভ স্ট্রিমিংয়ে থাকতে হয়। তবে লাইভে থাকার জন্য সুন্দরী মেয়েদের প্রতি মাসে দেওয়া হয় নির্দিষ্ট পরিমাণ বেতন। বিন্স ও জেমস এই দুটি ডিজিটাল কারেন্সিই স্ট্রিমকারের চালিকাশক্তি। দেশীয় বিন্স এজেন্সিসমূহ সাব-এজেন্সি নিয়োগসহ কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দরী মেয়েদের বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে লোভনীয় অফার দিয়ে লাইভ স্ট্রিমিংয়ে এনে ইউজারদের সঙ্গে প্রতারণাও করে থাকে। বাংলাদেশে যারা বিন্স এজেন্সি পরিচালনা করে তারা হুন্ডি, হাওয়ালা, ক্রিপ্টো কারেন্সি ও ব্যাংকের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। এটিইউর এসপি মোহাম্মদ আসলাম খান বলেন, বাংলাদেশে এ ধরনের ১২ থেকে ১৫ জন এজেন্ট রয়েছে, যারা প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি ব্যাংকের মাধ্যমে দেশের বাইরে অর্থ পাচার হওয়ার তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। তাদের ধারণা অনুযায়ী স্ট্রিমকার অ্যাপ ব্যবহারকারী ওই চক্র প্রায় শত কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার করেছে। প্রতারক চক্রের গ্রেফতার চার সদস্য ও তাদের পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে সাভার থানায় আইসিটি আইনে মামলা করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর