বৃহস্পতিবার, ৩ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা
পাচারের গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার

বস রাফি হৃদয় বাবু আর মেহেদীর ভয়ংকর সিন্ডিকেট

মাহবুব মমতাজী

ভারতে এক বাংলাদেশি তরুণীর ওপর যৌন নির্যাতনের ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা প্রায় সবাই বাংলাদেশি। এরপর একে একে বেরিয়ে আসতে থাকে নারী পাচারে গড়ে তোলা সিন্ডিকেট সদস্যদের নাম। সাতক্ষীরায় অভিযান আর ঢাকায় এক ভুক্তভোগীর মাধ্যমে পাচারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে এই সিন্ডিকেটে ঢাকার কিছু নারীর নামও পেয়েছে তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। যাদের বেশির ভাগই মডেলিং আর পারলার ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তদন্তের স্বার্থে বস রাফি, ডালিম, হৃদয় বাবু এবং মেহেদী ছাড়াও অন্যদের নাম এখনই প্রকাশ করতে চাচ্ছেন না পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তারা। ভারতীয় নাগরিকসহ এই সিন্ডিকেটের সদস্য অন্তত অর্ধশত। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিগত কয়েক বছরে অন্তত ৩ হাজার নারীকে ভারতে পাচার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে শুধু মেহেদীই পাচার করেছেন ১ হাজারের বেশি নারী। উদ্ধার হওয়া নথিগুলোতে সিন্ডিকেটের হোতা হিসেবে যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন- সবুজ, সাগর, রুবেল, মেহেদী, বস রাফি, হৃদয় বাবু ও ভারতীয় নাগরিক অখিল। এ ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের আরও পাঁচজনের নাম পেয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া উদ্ধার হওয়া ডায়েরিতে ভারতীয় মোবাইল ফোন নম্বর পাওয়া গেছে। একটি ফোন নম্বর পাওয়া গেছে মালয়েশিয়ার। আর উদ্ধার হওয়া ডায়েরিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ভিকটিম জেসমিন মীমের মোবাইল নম্বর এবং অন্য ভিকটিমের নাম ও মানব পাচারে জড়িত ব্যক্তিদের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার হওয়া পাঁচ নারী উদ্ধারের তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মালয়েশিয়ার মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে ধারণা করা হচ্ছে- ভারত হয়ে মালয়েশিয়ায়ও নারী পাচারের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে বাংলাদেশ হয়ে প্রথমে কলকতার শোভাবাজার, এরপর বেঙ্গালুরু, পুনে ও কেরালায় বিভিন্ন স্পা এবং হোটেলে নারীদের পাচার করা হয়েছে। আর বাংলাদেশ থেকে অবৈধ পথে পাচারের যেসব রুট ব্যবহার হতো সেগুলোর মধ্যে আছে সাতক্ষীরার দাবকপাড়া কালিয়ানী, যশোরের অভয়নগর, বেনাপোল এবং মেহেরপুরের কিছু সীমান্তবর্তী এলাকা। কয়েকজন ভিকটিমের পরিচিত ১০-১২ জন তরুণী এখনো নিখোঁজ। সামাজিক মর্যাদার কথা ভেবে তাদের স্বজনরা থানা-পুলিশের কাছে সেসব বিষয় জানাননি। তবে তদন্ত কর্মকর্তারা মনে করছেন, পাচার হওয়া প্রায় সবাই দেশের কোনো না কোনো এলাকায় নিখোঁজ হিসেবেই রয়েছেন। 

সূত্র জানায়, র‌্যাবের অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে আশরাফুল ইসলাম ওরফে আশরাফুল মন্ডল ওরফে বস রাফি। তিনি তামিল ভাষা রপ্ত করেছিলেন। নারী পাচারের ক্ষেত্রে তার ভাষাগত দক্ষতা ব্যাপক ভূমিকা রাখে। ৮ বছর আগে থেকে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে তার যাতায়াত। ৫ বছর ধরে তিনি অন্তত ৫০০ নারী পাচার করেছেন। দুই বছর আগে থেকে টিকটক হৃদয়ের মাধ্যমে অর্ধশতাধিক তরুণীকে পাচার করেছেন বস রাফি। গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ জানান, মেহেদী হাসান বাবু ১ হাজারের বেশি নারী পাচারে জড়িত বলে স্বীকার করেছেন। তিনি প্রায় ৭-৮ বছর ধরে মানব পাচারে জড়িত। তার কাছ থেকে জব্দ করা মোবাইল ফোন ও ডায়েরি থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পাচারকারীরা মাত্র ২০-৩০ হাজার টাকায় এ দেশ থেকে নারীদের বিক্রি করেছে।

সিআইডির একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রেমের ফাঁদে ফেলে এ দেশ থেকে পাঁচ নারীকে ভারতে পাচার করা হয়েছিল। তাদের উদ্ধারের পর কলকতায় ভারতীয় পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে পাচারকারীরাও গ্রেফতার হয়েছে। তাদের ও পাচারের শিকার হওয়া নারীদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সিআইডি। নারী পাচারের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১২৬টি মামলা সিআইডিতে তদন্তাধীন। এর মধ্যে ভারতে নারী পাচারের ঘটনায় মামলা আছে ১৫টি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর