রবিবার, ১৩ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

সন্তানকে থাপ্পড় দেওয়ায় হত্যা!

নিজস্ব প্রতিবেদক

সন্তানকে থাপ্পড় দেওয়ায় হত্যা!

সন্তানকে চড়-থাপ্পড় দেওয়ায় ফুফু নিকিতা আক্তার ও ভাতিজি জেসমিন আক্তারের মধ্যে বাগ্বিতন্ডা ও একপর্যায়ে হাতাহাতি শুরু হয়। এ সময় ঘরে থাকা শিলপাটার শিল দিয়ে ফুফুর মাথায় আঘাত করেন জেসমিন। এতে নিকিতা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে বঁটি দিয়ে উপর্যুপরি কোপাতে থাকে জেসমিন। এতেই নিকিতার মৃত্যু হয়। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত জেসমিন আক্তার হত্যাকান্ডের কথা এভাবেই স্বীকার করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানের নর্দ্দা এলাকায় ভাতিজির শিলের আঘাতে ফুফু নিকিতার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত জেসমিন আক্তারকে ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে নিকিতার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। শুক্রবার নিকিতার মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এরপর নিকিতার মরদেহ গ্রামের বাড়ি শেরপুর সদরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তার দাফন সম্পন্ন হয়।

পুলিশ জানায়, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গুলশানের নর্দ্দায় এ হত্যাকান্ডটি ঘটেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জেসমিন আক্তার তার ফুফুকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নিকিতা আক্তার-মুরাদ দম্পতি রাজধানীর গুলশানের নর্দ্দা এলাকায় নিজ বাসায় থাকতেন। এ দম্পতির কোনো সন্তান নেই। এদিকে, দুই-একদিন আগে ভাতিজি জেসমিন তার দুই মেয়েকে নিয়ে ফুফু নিকিতার বাসায় বেড়াতে আসেন। বৃহস্পতিবার ভোরে নিকিতা যখন ঘুমিয়ে ছিলেন তখন জেসমিনের বড় মেয়ে ঘরে পানি ফেলে দেয়।

এতে নিকিতার ঘুম ভেঙে যায়। বিরক্ত হয়ে ভাতিজির ওই মেয়েকে তিনি থাপ্পড় মারেন। এতে জেসমিন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে তার ফুফু নিকিতাকে জিজ্ঞাসা করেন কেন তার মেয়েকে মারলেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাগ্বিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে নিকিতা তার হাতের কাছে ঝাড়ুজাতীয় কিছু দিয়ে জেসমিনকে আঘাত করেন। তখন জেসমিন ক্ষোভে ঘরে থাকা শিল দিয়ে ফুফু নিকিতার মাথার পেছনে আঘাত করেন। এরপর নিকিতা ফ্লোরে পড়ে গেলে বঁটি দিয়ে উপর্যুপরি কোপাতে থাকে জেসমিন। ঘটনাস্থলেই নিকিতার মৃত্যু হয়।

নিহত নিকিতার ভাই আজাদ হোসেন বলেন, এ হত্যাকান্ডের বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারি না। জেসমিনই বলতে পারে কী কারণে সে আমার বোনকে হত্যা করেছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, স্বামীর সংসারে শান্তিতে ছিল না নিকিতা। প্রায় আমার বোনের ওপর নির্যাতন চালাত তার স্বামী মুরাদ। এমনিতে মুরাদ কিছ্ ুকরত না। বাসায় থাকত। প্রায়ই আমার বোনের জায়গাজমি তাকে লিখে দেওয়ার কথা বলত। আর এতে নিকিতা রাজি না হলেই তাকে মারধর করত। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় আমার বোনের সঙ্গে কথায় কথায় খারাপ আচরণ ও মারধর করত মুরাদ। তবে আমরা বোনের হত্যাকারী জেসমিনের কঠোর শাস্তির দাবি করছি।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই মোহাম্মদ রেজাউল আলম বলেন, গত বৃহস্পতিবার নিকিতা হত্যার ঘটনায় তার ভাই আজাদ হোসেন বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় জেসমিন আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, তার বড় মেয়েকে চড় দেওয়ায় এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন জেসমিন। পরে জেসমিন আক্তার আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর