অতীত অভিজ্ঞতার কারণে আফগানিস্তান ইস্যুতে বাংলাদেশের সতর্ক থাকার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন প্রবীণ কূটনীতিক ও ভারতে বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার তারিক এ করিম। অবশ্য তিনি একই সঙ্গে বাংলাদেশের পূর্ব-পশ্চিম দুই দিক থেকেই বিপদ ঘটার শঙ্কা দেখতে পাচ্ছেন। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এ মনোভাব প্রকাশ করেন।
তারিক এ করিম বলেন, আফগানিস্তান দেশ হিসেবে একটা সুপ্ত বিস্ফোরণোন্মুখ অবস্থানে রয়েছে। আর আফগানিস্তানকে শুধু আলাদাভাবে চিন্তা করার সুযোগ নেই। কারণ আফগানিস্তান ঐতিহাসিকভাবেই উপমহাদেশের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর আফগানিস্তান বিষয়ে আমাদের রয়েছে অতীত অভিজ্ঞতা। সেখান থেকে ফেরত আসা মুজাহিদিনদের নানা কর্মকান্ডের বেশ কিছু উদাহরণ রয়েছে। আফগানিস্তান থেকে আল কায়েদা সাউথ এশিয়া ইতিমধ্যেই ইসলামিক অব স্টেট সাউথ এশিয়া গঠনের ঘোষণাও দিয়েছে। তাই স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে আফগানিস্তানের তালেবানদের পুনরুত্থানে নানা ধরনের আশঙ্কা আছে। তাই অবশ্যই আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। সতর্ক থাকার কোনো বিকল্পও নেই। তিনি বলেন, আফগানিস্তান আমাদের পশ্চিম দিকে, আমাদের পূর্ব দিকেও আরেকটা দেশ অস্থিতিশীল অবস্থানে আছে। আমি দুই দিকেই একই সঙ্গে বিপদ ঘটার আশঙ্কা দেখতে পাই। তাই আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাগুলোর খবর, আফগানিস্তানের অধিকাংশ এলাকা তালেবান ইতিমধ্যে নিজেদের দখলে নিয়েছে। একই সঙ্গে দেশের বহু এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ চালিয়ে যাচ্ছে গোষ্ঠীটি। যে কোনো মূল্যে দেশের দখল নিতে চায় তারা। যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়ার মধ্যে কান্দাহার, কুন্দুজ, বাঘলান, হেরাত, গজনি, ফারইয়াব এবং ময়দান ওয়ারদাক প্রদেশের নানা স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে তালেবানের। ইতিমধ্যে দেশের ৮৫ শতাংশ এলাকা দখলের দাবি করেছে তালেবানরা। আলোচনার জন্য রাশিয়া গিয়ে গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তালেবান প্রতিনিধিরা দাবি করে, আফগানিস্তানের ৩৯৮টি জেলার মধ্যে ২৫০টি জেলা তারা দখল করেছে। এরপর আফগানিস্তানের চীন সীমান্ত দখলের খবরও এসেছে। বিপদ বিবেচনায় বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের প্রত্যাহার বা সরিয়ে নিয়ে আসার ঘটনাও চলছে। আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব সেনা প্রত্যাহার করার ঘোষণা বাস্তবায়নের প্রায় শেষ দিকে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আফগানিস্তান থেকে দেশটি ‘৯০ শতাংশের বেশি’ সেনা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে মধ্য এশিয়া অঞ্চলে ইসলামী উগ্রপন্থিদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়া নিয়ে ক্রমেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে বিভিন্ন দেশ।