মঙ্গলবার, ৩ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

দর্জি মনিরের যত কাণ্ড ফটোশপ কারসাজি থেকে তদবির

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা-মন্ত্রীর সঙ্গেই মনির খান ওরফে দর্জি মনিরের ওঠাবসার ছবি। কোনো ছবিতে সরকারের সিনিয়র কোনো মন্ত্রীর সঙ্গে একান্তে কথা বলছেন। কোনোটাতে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছাকাছি বসে আছেন। ফটোশপ কারসাজিতে মহাওস্তাদে পরিণত হওয়া এ দর্জি মনিরের থেকে গোয়েন্দারা যত তথ্য পাচ্ছেন ততই অবাক হচ্ছেন। গোয়েন্দারা বলছেন, ফটোশপ কারসাজিতে এমন পারদর্শী তারা আগে কখনো দেখেননি। তার প্রতিটি ছবিই ফটোশপে কারসাজি করা; যা খালি চোখে দেখে বোঝার উপায়ই নেই। এভাবেই মনির জমির দালালি ও তদবির বাণিজ্য করে অঢেল সম্পদের মালিক। আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদস্যপদ থেকে অব্যাহতির পর গ্রেফতার হেলেনা জাহাঙ্গীরকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শেষ না হতেই এবার আলোচনায় এলেন মনির খান ওরফে দর্জি মনির। যিনি ?‘বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ’ নামে একটি ভুঁইফোড় সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ ক্ষমতাসীন দলটির অনেক নেতার সঙ্গেই তার ছবি রয়েছে। জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে তার সব ছবিই ফটোশপে কারসাজি করা। তিনি ভুঁইফোড় সংগঠনটি খুলে বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরের অনেক নেতাকে টাকার বিনিময়ে পদ দিয়েছেন। এ ছাড়া জমির দালালি ও তদবির বাণিজ্য করে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। কেরানীগঞ্জ ও সাভারের অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত ঢাকা-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতেও জোর চেষ্টায় ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ছবি কারসাজি করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে তাকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি-উত্তর) যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ গণমাধ্যমকে জানান, মনির খান প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ব্যক্তির ছবির সঙ্গে নিজের ছবি জুড়ে দিয়েছেন। তিনি অসদুদ্দেশ্যে এসব ছবি ব্যবহার করেছেন। তাকে আটক করে পুলিশ হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। জানা গেছে, ফেসবুক আইডিতে মনির খানের পরিচয় অংশে লেখা আছে ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটিতে সহসম্পাদক ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য হন। এ ছাড়া তিনি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। এর মধ্যে রয়েছে বাংলার রূপসী গার্মেন্টস লিমিটেড, যার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। ‘বাংলাদেশ সময় প্রতিদিন’ নামে একটি পত্রিকার প্রধান উপদেষ্টাও তিনি। ফেসবুকে দেখা যায় মনির খানের কাভার ফটোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার একটি ছবি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আরও কিছু ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেছেন তিনি। এ ছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার সঙ্গে তার ওঠাবসার ছবি দেখা যায়। ভালো করে খেয়াল করলে বোঝা যায় খুব সূ²ভাবে সম্পাদনার মধ্যমে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ছবির জায়গায় নিজের ছবি বসিয়ে সেগুলো প্রচার করছেন মনির খান। ফটোশপে কারসাজি করা এসব ছবির বেশির ভাগেই তার চেহারা অন্যদের তুলনায় বড় দেখাচ্ছে। প্রসঙ্গত, চাকরিজীবী লীগ নামে একটি ভুঁইফোড় সংগঠনের জন্ম দিয়ে আলোচনায় আসা হেলেনা জাহাঙ্গীরকে ২৯ জুলাই রাতে গ্রেফতারের পরপরই আলোচনা শুরু হয় দর্জি মনিরকে নিয়ে।

সর্বশেষ খবর