পরীমণির কথিত মা নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীকে গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর পান্থপথ এলাকা থেকে আটকের পর রাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পরীমণির নানা অপকর্মের নেপথ্যে চয়নিকার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তাকে আটক করা হয়েছিল।
গতকাল চার দিনের রিমান্ডের প্রথমদিনে পরীমণিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার দেওয়া তথ্যেই চয়নিকা চৌধুরীকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে রাত ১০টায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার। চয়নিকাকে আটকের পরপরই রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে অভিনেত্রী পরীমণির কস্টিউম ডিজাইনার জিমিকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। গতকাল সন্ধ্যায় আটকের সময় চয়নিকা চৌধুরী গাড়ি থেকে আতঙ্কিত হয়ে বলছিলেন- আমাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আমি কিচ্ছু জানি না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চয়নিকা চৌধুরী সন্ধ্যায় বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলের লাইভ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ফিরছিলেন। এ সময় পান্থপথ সিগন্যালে তার ব্যক্তিগত গাড়ি দাঁড় করায় ডিবি পুলিশের একটি দল। গাড়িতে চয়নিকা চৌধুরী ও তার ছেলে অনন্য চৌধুরী ছিলেন। কিছুক্ষণ পর চয়নিকা চৌধুরীর গাড়িতে একজন নারী পুলিশসহ ডিবির দুজন সদস্য উঠে পড়েন। ডিবির এক কর্মকর্তা চয়নিকা চৌধুরীকে জানান, তাকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হবে। এরপর গাড়িটি দ্রুতই স্থান ত্যাগ করে। এ সময় সেখানে গণমাধ্যমের অনেক কর্মী উপস্থিত ছিলেন। প্রথমে পুলিশ সদস্যরা তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি প্রথমে গাড়ির গ্লাস খুলতে রাজি হচ্ছিলেন না। পরে দরজা খুলে পুলিশ সদস্যরা চয়নিকা চৌধুরীর গাড়িতে ওঠেন।সূত্র জানায়, আটকের এক ঘণ্টা পরও চলচ্চিত্র পরিচালক চয়নিকা চৌধুরীকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নেওয়া হয়নি। তাকে নিয়ে মতিঝিলের দিকে যায় গোয়েন্দা দল। পরে কমলাপুরের দিকে যাওয়ার তথ্য মেলে। সেখান থেকে তাকে নিয়ে রাজারবাগের দিকে যায় গোয়েন্দাদের গাড়ি। এরপর চয়নিকা চৌধুরীর গাড়ির সঙ্গে থাকা গণমাধ্যমকর্মীদের গাড়ি থামিয়ে দেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
ডিবি সূত্র জানায়, লাইভ অনুষ্ঠান দেখার পরই তারা চয়নিকার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হন। সোনারগাঁও রোডে একটি বেসরকারি টেলিভিশন ভবনের নিচে অবস্থান নেন পুলিশ সদস্যরা। তিনি অনুষ্ঠান শেষে বের হলে তাকে ঘিরে ফেলেন গোয়েন্দারা। চয়নিকা চৌধুরী ও পরীমণির মধ্যে যে সখ্য রয়েছে, তা সবারই জানা। চয়নিকা চৌধুরীকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করে থাকেন পরীমণি। উত্তরা বোট ক্লাব কান্ডের পর পরীমণির পাশে ছায়ার মতো দেখা গেছে তাকে। এর আগে গত বুধবার সন্ধ্যায় বনানীর বাসা থেকে ঢাকাই সিনেমার অন্যতম নায়িকা পরীমণিকে আটক করা হয়। রাত আটটার পরে তাকে বাসা থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনার পর থেকেই নজরদারিতে ছিলেন চয়নিকা।
গতকাল দুপুরেই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি-উত্তর) যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ গণমাধ্যমকে আলোচিত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী পরীমণির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে এক নারীকে নজরদারিতে রাখার কথা জানান। তাকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলেও জানিয়েছিলেন। এ সময় তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি নাম প্রকাশ না করে বলেন, সেই নারী পরীমণির খুবই ঘনিষ্ঠ।
রাতে ডিবি সূত্রে জানা গেছে, পরীমণি ও চয়নিকা চৌধুরীকে ডিবি কার্যালয়ে মুখোমুখি করে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে যোগসাজশ করে বিভিন্ন সময়ে অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। সেগুলো তদন্তে আলোচিত এই পরিচালক ও নায়িকাকে মুখোমুখি করা হয়।
ডিবির (উত্তর) যুগ্ম-কমিশনার হারুন অর রশিদ চয়নিকা চৌধুরীকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, পরীমণি ও রাজের মামলা তাদের কাছে ছিল। মামলার তদন্তের স্বার্থে তারা যে কাউকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন। নানা অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রয়োজন হলে আবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে ডাকা হবে।
অনেকটা হঠাৎ করেই আলোচনায় আসতে শুরু করেছেন শোবিজ জগতের তারকারা। চাকচিক্যময় জগতের আড়ালে একে একে বেরিয়ে আসছে কিছু তারকার ভিন্ন রূপ। যারা রাজধানীর অভিজাত এলাকায় নিয়মিত পার্টির নামে মদের আসর জমাতেন। আর সেসব পার্টির মূল লক্ষ্য ছিল বিত্তবানদের ডেকে নিয়ে ফাঁদে ফেলা।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, পার্টিতে অংশ নেওয়াদের চাহিদামতো মডেলদের সরবরাহ করে আদায় করা হতো মোটা অঙ্কের অর্থ। কখনো আপত্তিকর ছবি কিংবা ভিডিও ধারণ করে করা হতো প্রতারণা। এখন পর্যন্ত গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে ১০-১২ জনের একটি সিন্ডিকেটের তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে চয়নিকা অন্যতম। যারা রাজধানীর অভিজাত এলাকা- গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরাসহ বিভিন্ন ফ্ল্যাট ও অফিসে নিয়মিত পার্টির আয়োজন করতেন। সেসব পার্টিতে বিত্তবান ও ব্যবসায়ী যুবকদের ডেকে তাদের পছন্দমতো শোবিজ জগতের পরিচিত বা স্বল্প পরিচিত মডেলদের সরবরাহ করা হতো। এর বিনিময়ে আদায় করা হতো মোটা অঙ্কের অর্থ। এই চক্রে মডেলসহ আরও বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। যারা বর্তমানে নজরদারিতে রয়েছেন। সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তাদেরও পর্যায়ক্রমে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।