শনিবার, ৭ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

ছয় দিনে ৩২ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

আজ থেকে আগামী পাঁচ দিনে সারা দেশে ক্যাম্পেইন চালিয়ে ৩২ লাখ মানুষকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হবে। গতকাল টিকা কার্যক্রম নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম এ পরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরেন। রাজধানীর মহাখালীতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের সভাকক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকাদানের পরিসর বাড়াতে যাচ্ছে সরকার। এর অংশ হিসেবে ৭ থেকে ১২ আগস্ট ছয় দিনে সারা দেশের ১৫ হাজারের বেশি টিকাদান কেন্দ্রে প্রায় ৩২ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এর আগে ৭ আগস্ট থেকে সাত দিনে প্রায় ১ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যের কথা বললেও শেষ মুহূর্তে তা কমিয়ে আনা হলো। এর আগে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী সবাইকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনার কথা বলা হলেও ছয় দিনের কর্মসূচিতে তা হচ্ছে না বলে জানালেন খুরশীদ আলম। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘১৮ বছর বয়সীদের অনেকের ভোটার আইডি কার্ড নেই। এতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। তাই টিকাদানের বয়স ১৮ না করে ২৫ নির্ধারণ করা হয়েছে।’ তবে ওই বয়সসীমার ওপরে যারা আগেই সুরক্ষা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন, তাদের নিবন্ধনের সময় উল্লেখ করা কেন্দ্রে গিয়েই এসএমএস পাওয়ার ভিত্তিতে টিকা নিতে হবে। আর ইউনিয়ন, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন এলাকায় ছয় দিনের বিশেষ ‘ক্যাম্পেইনের’ টিকাদান আলাদাভাবে পরিচালিত হবে। পঁচিশোর্ধ্ব যারা নিবন্ধন করতে পারেননি, তারাও এ সময় টিকা নিতে পারবেন বলে জানালেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক। তিনি বলেন, ‘পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়স্ক জনগোষ্ঠী, নারী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগোষ্ঠী এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।’

যেভাবে চলবে ছয় দিনের টিকাদান : ৭ আগস্ট : দেশের সব ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে টিকা কার্যক্রম শুরু হবে। ৮ ও ৯ আগস্ট : ইউনিয়নের যেসব ওয়ার্ডে ৭ তারিখ অন্য রোগের নিয়মিত টিকাদান চালু ছিল, সেসব ওয়ার্ডে এবং পৌরসভার বাদ পড়া ওয়ার্ডে টিকা দেওয়া হবে। ৭ থেকে ৯ আগস্ট : সিটি করপোরেশন এলাকায় টিকাদান চলবে। ৮ ও ৯ আগস্ট : দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় টিকাদান হবে। ১০ থেকে ১২ আগস্ট : ৫৫ বছরের বেশি বয়সী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মাঝে টিকাদান কার্যক্রম চলবে। সারা দেশে ৪ হাজার ৬০০টি ইউনিয়ন, ১ হাজার ৫৪টি পৌরসভা, সিটি করপোরেশন এলাকার ৪৩৩টি ওয়ার্ডে চলবে এই বিশেষ টিকাদান কর্মসূচি। ১৫ হাজারের বেশি টিকাদান কেন্দ্রে ৩২ হাজার ৭০৬ জন টিকাদানকারী এবং ৪৮ হাজার ৪৫৯ জন স্বেচ্ছাসেবী এই কর্মসূচিতে যুক্ত থাকবেন। এখন পর্যন্ত ১ কোটি ২ লাখ ৮৯ হাজার ৭৯৭ জন মানুষকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। নিবন্ধন করেছে ১ কোটি ৯৬ লাখ ৩২ হাজার ৫২৬ জন। ঢাকায় যারা নিবন্ধন করছেন তারা ২০ থেকে ২৫ দিন পর টিকা গ্রহণের এসএমএস পাচ্ছেন। কারণ ওই সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের পক্ষে একসঙ্গে এত মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব নয়। সরকারের হাতে এত টিকা নেই যে এই মানুষগুলোকে দিতে পারবেন। তাহলে কি এমন প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল যে সারা দেশে এত বড় ক্যাম্পেইন চালু করছেন এবং যারা নিয়মিত নিবন্ধন করছেন তাদের কবে টিকার আওতায় আনতে পারবেন- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বে টিকা কূটনীতি আছে। যে টিকা বেশি আকারে আমাদের কাছে দেওয়া হয়েছে সেটি হচ্ছে সিনোফার্ম। এই টিকা সিঙ্গেল ডোজ, সিঙ্গেল ভায়েল। এর আগে আমরা এনেছিলাম অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সেটা ছিল ১০টি ডোজের একটি ভায়েল। এটি বেশি পরিমাণে সংরক্ষণ করা যায়। ঈদের আগে আমাদের টিকা গ্রহণের পরিমাণ কম ছিল। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ক্যাম্পেইনের ঘোষণা দেওয়ার পর গত ১০ দিনে আমরা দেখলাম প্রায় ৩০ লাখ মানুষ টিকা গ্রহণ করেছে। এটাও একটা বড় বিষয়।’

তিনি আরও বলেন, আমরা যদি বড় আকারে টিকা ক্যাম্পেইন না করতে পারি, তাহলে বিরাট জনগোষ্ঠীকে কাভার করা যাবে না। এটা আমাদের কাছে একটি পাইলট প্রজেক্ট। এ থেকে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করছি।’ স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা, এমআইএস পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান, ইপিআই কর্মসূচির ব্যবস্থাপক ডা. মওলা বক্স চৌধুরী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর