দীর্ঘ চার মাসের বেশি সময় পর স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরছে বিচার বিভাগ। গতকাল থেকে হাই কোর্টের সব (৫৩টি) বেঞ্চে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর আজ থেকে নিম্ন আদালতেও সবকিছু স্বাভাবিক হচ্ছে। অধস্তন আদালতের বিচারকরা চাইলে সশরীরে উপস্থিতির মাধ্যমে বা ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে যে কোনো আবেদনের শুনানি গ্রহণ করতে পারবেন। সাক্ষ্য গ্রহণসহ চলবে সব ধরনের বিচারকাজ। বিচার বিভাগের কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীরা। এদিকে হাই কোর্টে আগাম জামিনের এখতিয়ারসম্পন্ন বেঞ্চ দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন অনেক আইনজীবী।
দেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির পর গত ৫ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় দফায় চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করার পর অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় আদালতের কার্যক্রমও। এই সময়ে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে উচ্চ আদালত এবং সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় নিম্ন আদালতে সীমিত পরিসরে শুধু ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কার্যক্রম চলছে। ফলে নিম্ন আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ থাকায় কোনো মামলার কার্যক্রমই এগোয়নি। এর আগে গত বছর ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি শুরু হওয়ার পর দীর্ঘ সময় ধরে প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে বিচারাঙ্গন। পরে আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে ভার্চুয়াল বিচারব্যবস্থা চালু করায় কিছুটা সংকট কাটে। এরপর অধ্যাদেশটি আইনে রূপান্তর করে সরকার। সীমিত পরিসরে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে চলে আদালতের কার্যক্রম। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করা হলেও সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলেই আবার বন্ধ হয়ে যায়।
এ বিষয়ে সাধারণ আইনজীবী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উচ্চ আদালতে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে সব বেঞ্চ খুলে দেওয়া হয়েছে। নিম্ন আদালতের কার্যক্রমও স্বাভাবিক হয়েছে। এখন আইনজীবীরা অনেকটাই স্বস্তিতে আছেন। বিশেষ করে আইনজীবীদের অর্থ সংকট এবার কাটবে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এবার হাই কোর্টে কয়েকটি বেঞ্চকে আগাম জামিনের এখতিয়ার দিলে বিচারপ্রার্থীরাও উপকৃত হবেন।ঢাকার আদালতের আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আদালত খুলেছে। এটা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের খবর। তিনি বলেন, আদালত বন্ধ থাকলে একদিকে যেমন আয় থাকে না, মক্কেলদের সঙ্গেও সম্পর্ক খারাপ হয়। এখন জমে থাকা মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হোক, এটাই দাবি। এদিকে জেলে থাকা স্বামীর জামিনের খোঁজ নিতে গতকাল হাই কোর্টে আসা সুবর্ণাও আদালত খোলার খবরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, তার স্বামীকে এক মাসের মধ্যে জামিন করিয়ে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আইনজীবী। তবে জামিন আবেদন করার কয়েক দিন পরেই লকডাউন শুরু হওয়ায় আদালতে কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়। তাই তার স্বামী প্রায় পাঁচ মাস ধরে জেলে। এবার স্বামীর জামিনের আশা করছেন তিনি।
ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে শুরু উচ্চ আদালতের কার্যক্রম : ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে উচ্চ আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগে এবং হাই কোর্টের ৫৩টি ভার্চুয়াল বেঞ্চে গতকাল থেকেই স্বাভাবিক বিচারকাজ শুরু হয়। এর আগে গত ৯ আগস্ট হাই কোর্টের ৫৩টি ভার্চুয়াল বেঞ্চ গঠন করেন প্রধান বিচারপতি। এর মধ্যে ৩১টি দ্বৈত এবং ২২টি একক বেঞ্চ রয়েছে।
আজ থেকে নিম্ন আদালতও স্বাভাবিক : আজ থেকে সব দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত এবং ট্রাইব্যুনালে স্বাভাবিক বিচারকাজ শুরু হচ্ছে। এ বিষয়ে গতকাল সার্কুলার জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেওয়ানি ও ফৌজদারি মোকদ্দমা/মামলায় বিচারক প্রযোজ্য ক্ষেত্রে শারীরিক উপস্থিতিতে অথবা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। তবে বিচারক প্রয়োজনীয় সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে শারীরিক উপস্থিতিতে সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন।