বিজ্ঞান-প্রযুক্তি এবং বিশ্ব পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষাব্যবস্থার আরও আধুনিকায়ন এবং শিক্ষা কার্যক্রম সময়োপযোগী করার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা মনে করি বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদের এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। সেজন্য শিক্ষা কার্যক্রম সময়োপযোগী করা একান্তভাবে অপরিহার্য।
গতকাল গণভবনে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা’র খসড়া উপস্থাপনা দেখার পর তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, এই বিজ্ঞান-প্রযুক্তি জ্ঞানের ক্ষেত্রে যখন বিশ্ব এগিয়ে যায় আমরা কোনোমতেই পিছিয়ে থাকতে পারি না। আরেকটা বিষয় আমি লক্ষ্য করেছিলাম আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদের বিজ্ঞানের প্রতি অনীহা। বিজ্ঞান শিক্ষা তারা নিতেই চাইত না। বিজ্ঞান বিভাগের লোকই পাওয়া যেত না। এ রকম একটা সময় কিন্তু ছিল। আমরা বিজ্ঞান শিক্ষায় গুরুত্ব দিই। আমরা ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর কথাও অনুষ্ঠানে বলেন প্রধানমন্ত্রী। দীর্ঘদিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, গতকাল (১২ সেপ্টেম্বর) থেকে আমরা স্কুল-কলেজ খুলে দিয়েছি, ধীরে ধীরে সব খুলে যাবে। যার ফলে আবার নতুনভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে। আমাদের অত্যন্ত দুর্ভাগ্য, আমরা প্রায় দেড় বছরের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলতে পারিনি। যদিও অনলাইনে বা টেলিভিশনের মাধ্যমে বা ঘরে বসে ঘরেই আমরা স্কুল- এ ধরনের বহুমুখী কার্যক্রম আমরা হাতে নিয়েছি, কাজ করেছি। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখতে সংশ্লিষ্টদের ভূমিকার প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, করোনার সময় যখন সবকিছু স্থবির তখন আপনারা যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছেন। বিশেষ করে শিক্ষার ক্ষেত্রে এখনকার যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কীভাবে শিক্ষাব্যবস্থাটাকে আরও আমাদের শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় করা যায়। আবার সেই সঙ্গে জীবন-জীবিকার পথটাও যেন খোলে সে বিষয়টার দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে আপনারা এ কার্যক্রমগুলো করেছেন। বিভিন্ন এলাকায় নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এ পর্যন্ত যথেষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছি। যেসব এলাকায় স্কুল ছিল না সেসব এলাকায় আমরা স্কুল তৈরি করে দিচ্ছি। আমাদের নদী-নালা, খাল-বিলের দেশ। ছোট ছোট শিশুদের যোগাযোগ ও যাতায়াতের ব্যবস্থা বিবেচনা করেই কিন্তু আমরা বিভিন্ন এলাকায় স্কুল তৈরি করার ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে স্বাধীনতার পরপরই দেশবরেণ্য বিজ্ঞানী ড. কুদরত-ই-খুদাকে প্রধান করে শিক্ষাব্যবস্থার যুগোপযোগীকরণে এবং নীতিমালা প্রণয়নে জাতির পিতার শিক্ষা কমিশন গঠনের কথা স্মরণ করেন। সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করেই ১৯৯৬-পরবর্তী সময়ে সরকারে এসে শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংস্কারের উদ্যোগেরও উল্লেখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাত্র পাঁচ বছর আমরা সময় পেয়েছিলাম কিন্তু সেই সময়ের মধ্যে সাক্ষরতার হারকে আমরা ৬৫ দশমিক ৫ ভাগে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছিলাম। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর সে সাক্ষরতার হার আবার অতীতের মতো ৪৫ ভাগেই ফিরে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১-পরবর্তী বিএনপি-জামায়াতের দেশ শাসনে সাক্ষরতার হার বাড়েনি, উপরন্তু কমেছে।