কক্সবাজারের ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমা বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি তারা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে হত্যায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবিও জানিয়েছেন।
ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার এক টুইটবার্তায় বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবাধিকারের একজন সাহসী চ্যাম্পিয়ন মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহর হত্যাকান্ডে আমরা শোকাহত ও বিচলিত। আমি তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই এবং আশা করি অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।’ বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন টুইটবার্তায় বলেছেন, ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের নেতা মুহিবুল্লাহর হত্যাকান্ডে আমরা মর্মাহত ও শোকাহত। তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের জন্য এটি এক মর্মান্তিক ক্ষতি। আমার আন্তরিক সমবেদনা।’ বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত আন্নে গেরার্ড ভেন লিউইন টুইটবার্তায় বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা নেতা ও মানবাধিকার কর্মী মোহাম্মদ মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় আমরা মর্মাহত ও ব্যথিত। আমি তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই এবং আশা করি অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।’ বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) প্রতিনিধি দলের টুইটবার্তায় বলা হয়েছে, ‘রোহিঙ্গা নেতা ও মানবাধিকার কর্মী মুহিবুল্লাহ হত্যা একটি দুঃখজনক ঘটনা। আমরা তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। আশা করি যারা তার হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে তাদের বিচারের আওতায় আনতে কর্তৃপক্ষ সফল হবেন।’
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে বলেছে, মুহিবুল্লাহকে হত্যার ঘটনা পুরো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। এ হত্যার তদন্ত করে দোষীদের তাদের অপরাধের জন্য ন্যায়বিচারের মুখোমুখি করা এখন বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব। এ ছাড়া কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর বাসিন্দাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থাকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অন্য মানবাধিবকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মুহিবুল্লাহ বাংলাদেশে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর নেতা হিসেবে কাজ করেছেন। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর অপরাধের নথিগত সাক্ষ্য-প্রমাণ তৈরি এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে শরণার্থীদের অধিকারের পক্ষে কথা বলেছেন। মুহিবুল্লাহ সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তার কাজের জন্য হত্যার হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের জন্য মুহিবুল্লাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠস্বর ছিলেন। তিনি সব সময় রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের অধিকার এবং তাদের জীবন ও ভবিষ্যৎ নিয়ে মত প্রকাশ করেছেন। তার হত্যাকান্ড রোহিঙ্গা শিবিরে যারা স্বাধীনতার পক্ষে এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা বলে তারাও যে ঝুঁকিতে রয়েছেন তারই একটি স্পষ্ট প্রমাণ।
গতকাল জানাজায় ভিড়
বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে মহিবুল্লাহ হত্যার পাশাপাশি ক্যাম্পে রোহিঙ্গা কর্মীদের ওপর অন্যান্য হামলার তদন্ত করা।’ জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর গতকাল বিকালে এক বিবৃতিতে মুহিবুল্লার মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, ‘আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমরা মুহিবুল্লাহর শোকাহত পরিবার ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি সমবেদনা জানাই।’ সেই সঙ্গে অবিলম্বে তদন্ত করে হত্যাকান্ডে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানায় ইউএনএইচসিআর। জানা যায়, আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি পিস ফর হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ)-এর চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহ ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর আগে তিনি জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থায় রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব করেন। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বিদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন তিনি।