কভিড পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার হাইপ্রোফাইল আসন এলাকা ভবানীপুর উপনির্বাচনে গতকাল ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিরতিহীন ভোট চলেছে। নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হবে ৩ অক্টোবর। ভোট গ্রহণ শেষে কলকাতার সর্বত্র তীব্র জল্পনা চলছে- ‘মমতা ব্যানার্জির মুখ্যমন্ত্রিত্ব কি টিকিয়ে রাখবে তার নিজ এলাকা ভবানীপুর!’ এই আসন এলাকায় মোট ভোটার ২,০৬,৩৮৯ জন। এর মধ্যে ৯৫,১৪৩ (৪৬ শতাংশ) জন নারী ভোটার। মোট প্রার্থী ১২ জন। এর মধ্যে শুধু তিনজন ব্যাপক আলোচিত। তারা হলেন- তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, বিজেপি প্রার্থী আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিবরিওয়াল ও সিপিআইএম প্রার্থী শ্রীজীব বিশ্বাস। এই উপনির্বাচনে মমতা হেরে গেলে তিনি আর মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না। সে জন্যই জল্পনা-কল্পনা চলছে ‘কী অপেক্ষা করছে মমতার জন্য।’ তবে ভবানীপুরের অভিজ্ঞজনরা বলছেন, মমতার প্রতিদ্ব›দ্বী মমতাই, তার সমকক্ষ কেউ নেই। মমতা ব্যানার্জি বিকালের দিকে ভবানীপুরের মিত্র ইনস্টিটিউশন কেন্দ্রে এসে ভোট দিয়ে গেছেন। এক ভোটার মীনাক্ষী চক্রবর্তী জানান, মমতা ব্যানার্জির জয়ের সম্ভাবনা বেশি। তার মতে, ভবানীপুর বরাবরই শান্তিপ্রিয় জায়গা। আমরা চাই কিছুতেই যেন অশান্তি না হয়। অনিন্দিতা চৌধুরী নামে আরেক নারী ভোটার জানান, মমতা ভালোভাবেই জিতবেন। এখানে তো তাকে হারানোর মতো কাউকে দেখছি না। রাকেশ প্রসাদ নামে এক ভোটার জানান, এখানে মূল লড়াইটা হতে পারে তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে। বাকিরা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। সাধারণ নির্বাচন : গতকাল ভবানীপুর ছাড়াও আরও দুটি আসনে ভোট নেওয়া হয়েছে। তবে ওটা উপনির্বাচনের নয়, সাধারণ নির্বাচনের। আসন দুটি হলো- মুর্শিদাবাদ জেলার শমসেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুর। শমসেরগঞ্জে তৃণমূলের প্রার্থী আমিরুল ইসলাম, বিজেপির মিলন ঘোষ, সিপিআইএম প্রার্থী মোদাসসার হোসেন। আর জঙ্গিপুরে তৃণমূলের প্রার্থী জাকির হোসেন, বিজেপি প্রার্থী সুজিত দাস, বাম প্রার্থী জানে আলম মিলন। পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী গত ২৬ এপ্রিল সপ্তম দফার নির্বাচনের আগে করোনায় ওই দুই কেন্দ্রেরই ‘সংযুক্ত মোর্চা’র প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ায় সেখানে নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়েছিল।
চ্যালেঞ্জ : গতকালের উপনির্বাচনে মমতা ব্যানার্জির জন্য বিরাট একটা চ্যালেঞ্জ। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকতে হলে তাকে ভবানীপুর আসনে জিততেই হবে। দক্ষিণ কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ‘ভবানীপুর’ মমতার নিজের এলাকা। তিনি কেবলমাত্র এই বিধানসভা কেন্দ্রের বাসিন্দা বা ভোটারই নন, ২০১১ ও ২০১৬ সালের নির্বাচনেও এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন মমতা। কিন্তু গত মার্চ-এপ্রিল মাসে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে ‘ভবানীপুর’ কেন্দ্র ছেড়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ‘নন্দীগ্রাম’ কেন্দ্রে প্রতিদ্ধন্ধিতা করেন মমতা। যদিও সেই নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীর কাছে পরাজিত হন তিনি। আর মমতার ছেড়ে যাওয়া ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে বিরাট ব্যবধানে জয়ী হন সিনিয়র তৃণমূল নেতা শোভন দেব চট্টোপাধ্যায়। তিনি হারান বিজেপি প্রার্থী অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষকে। গত ৫ মে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মমতা। ১০ মে শপথ নেন তার মন্ত্রিসভার বাকি ৪৩ সদস্য। কৃষিমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন শোভন দেব। নিয়ম অনুযায়ী কোনো মন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার ছয় মাসের মধ্যেই তাকে রাজ্যের কোনো না কোনো বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জিতে আসতে হয়। সেক্ষেত্রে জল্পনা চলছিল মমতা কি তবে নিজের পুরনো কেন্দ্র ভবানীপুর থেকেই ফের প্রতিদ্ধন্ধিতা করবেন? এরই মধ্যে মে মাসেই ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে ইস্তফা দেন শোভন দেব। ফলে ওই কেন্দ্রে উপনির্বাচন জরুরি হয়ে পড়ে।