সোমবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার সৈনিকরা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার সৈনিকরা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার সৈনিকরা প্রস্তুত হয়েছে। আগামীতে প্রযুক্তি খাতের রপ্তানি আয় তৈরি পোশাক খাতকেও ছাড়িয়ে যাবে।

গতকাল দুপুরে ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস-২০২১ উদযাপন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে এই পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্য থেকে নতুন প্রজন্মের যারা পুরস্কার পেল, তাদের যে মেধা বিকাশের সুযোগ হলো; তাতে এখন আর আমার কোনো দুশ্চিন্তা নেই। আমি এখন বলতে পারি আমাদের দেশটা প্রযুক্তি শিক্ষায়, জ্ঞানভিত্তিক যে সমাজ গড়তে চাই, সেটা করার পথে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ ঘরে বসেই তাদের কাজ করছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে যারা বিদেশে বসবাস করছেন তাদের রেখে যাওয়া বাড়িঘর দেখতে পাচ্ছেন। কিছু দিন আগে একটা ঘটনা ঘটেছে, ধানমন্ডির একটা বাড়িতে চুরি হলো। বাড়ির মালিক লন্ডনে থাকেন। সেখানে বসে তিনি দেখলেন। তার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে ধানমন্ডি থানার ওসির কাছে পাঠিয়েছেন। আমাদের সিটি এসবি সেটা দেখে চোরকে ধরে ফেলেছে। এটাই হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ, যার শুভ ফলটা প্রবাসীরাও পাচ্ছেন। সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের লক্ষ্যটা ছিল নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। ঘরে বসে ছেলেমেয়েরা তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ পাবে। সেটা দিয়ে নিজেদের যেমন আর্থিক সচ্ছলতা আনবে, সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সৈনিক আমাদের তৈরি হচ্ছে। সেই জন্য আমাদের সজীব ওয়াজেদ জয়সহ আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেন, কেউ সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে না। আমাদের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ১০৯টি পাঠ্যবইয়ের ডিজিটাল টকিং বুক তৈরি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে তারা নতুন সুযোগ পাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রযুক্তির মাধ্যমে সরকার সবাইকে সেবা দিতে চেয়েছিল। সেটা দিতে পারছি। বাংলাদেশ সেই জায়গায় পৌঁছে গেছে। সিটি করপোরেশন থেকে শুরু করে গ্রামের তৃণমূল পর্যন্ত সেই সেবাটা পৌঁছে গেছে।

দেশে ১৮ কোটি ১৩ লাখ সিম ব্যবহার হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৩ কোটি সিমে ইন্টারনেট ব্যবহার হচ্ছে। ১৬ বা ১৭ কোটি মানুষের দেশে যদি ১৩ কোটি সিমে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে প্রায় সবার ঘরে ঘরে ইন্টারনেট সার্ভিসটা আছে। সেই সুযোগটা সবাই পাচ্ছেন। সরকারের আগামী দিনের লক্ষ্য সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন আমরা যেমন মনে করি গার্মেন্ট থেকে সব থেকে বেশি রপ্তানি আয় হয়, কিন্তু সেখানে একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। সেটা হলো আমাদের ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন ও রপ্তানি। সেখানে আমাদের মেধাবী সন্তানদের মেধা বিকাশের সুযোগ হবে। আমি মনে করি ডিজিটাল ডিভাইস রপ্তানি সব খাতকে ছাড়িয়ে যাবে। যদি এটা আমরা করতে পারি। তার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। এ রপ্তানি ২০২৫ সাল নাগাদ ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করবে। দেশের প্রযুক্তি উন্নয়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে (সজীব ওয়াজেদ জয়) স্কুলজীবন থেকে কম্পিউটার শিখত। ঢাকায় এসে আমাকেও শেখাত। (বাসায় আসার সময়) হোস্টেল থেকে কম্পিউটারটা সঙ্গে করেই নিয়ে আসত। সেই ম্যাকিন্টশ কম্পিউটারের মাধ্যমেই আমার হাতেখড়ি। তারই পরামর্শ ছিল আমাদের দেশের মানুষকে কম্পিউটার শিক্ষা দিতে হবে। এ জন্য খরচ কমাতে হবে, ট্যাক্স কমাতে হবে, সবকিছু করতে হবে।

সেনাবাহিনী সব মহলের প্রশংসা অর্জন করেছে : এর আগে সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে চট্টগ্রামের ভাটিয়ারীতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির ৮১তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সমাপনীতে রাষ্ট্রপতি প্যারেড অনুষ্ঠানে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশপ্রেম ও আন্তরিকতার সঙ্গে দেশের সেবা করা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে নবীন সেনা কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার সক্ষমতা অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশে-বিদেশে দায়িত্ব পালনে দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব দেখিয়ে আমাদের সেনাবাহিনী সব মহলের প্রশংসা অর্জন করেছে। এ সুনাম ধরে রাখতে হবে। তিনি বলেন, জাতির পিতার পররাষ্ট্রনীতি হিসেবে আমরা ‘শান্তিতে বিশ্বাস করি এবং সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এই পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাস করি। তবে, কখনো বাইরে থেকে শত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হলে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার সক্ষমতা আমরা এরই মধ্যে অর্জন করেছি। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কৃতী ক্যাডেটদের কৃতিত্বের জন্য পুরস্কৃত করেন। সব বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য ব্যাটালিয়ন সিনিয়র আন্ডার অফিসার আবদুল্লাহ আল ইসলাম ‘সোর্ড অব অনার’ এবং কোম্পানি জুনিয়র আন্ডার অফিসার ইমরুল কায়েস সামরিক বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য ‘সেনাবাহিনী প্রধান স্বর্ণপদক’ লাভ করেন। সেনাপ্রধান অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী পাসিং আউট ক্যাডেটদের মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন। কুচকাওয়াজ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী নবীন সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, তোমাদের মনে রাখতে হবে, তোমরা এ দেশের সন্তান, জনগণের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই তোমাদের সবাইকে সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ ও হাসি-কান্নার সমান অংশীদার হতে হবে। যে কোনো দুর্যোগ ও দুঃসময়ে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মনে রাখবে, অনেক রক্ত আর ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের এ স্বাধীনতা। কষ্টার্জিত এ স্বাধীনতার সুরক্ষা নিশ্চিত করা তোমাদের পবিত্র দায়িত্ব। শেখ হাসিনা সব নবীন অফিসারকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আজকের এ শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে তোমাদের ওপর ন্যস্ত হলো দেশমাতৃকার মহান স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে তোমাদের সজাগ এবং সদা প্রস্তুত থাকতে হবে। সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে হলেও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করাই হবে তোমাদের পেশাগত জীবনের প্রধান ব্রত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একটি আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। বিএমএতে প্রশিক্ষণের সব ধরনের অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ‘বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স’ নির্মাণ করা হয়েছে। একটি প্রশিক্ষিত ও আধুনিক সেনাবাহিনী গঠনে এ আধুনিক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান এবং সুযোগ্য নেতৃত্ব তৈরিতে জাতির পিতা যে মিলিটারি একাডেমির স্বপ্ন দেখেছিলেন, তারই সফল বাস্তবায়িত রূপ আজকের এই বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৭৪ সালে প্রণয়ন করেন আমাদের ‘প্রতিরক্ষা নীতি’। আওয়ামী লীগ সরকার জাতির পিতা প্রণীত সুদূরপ্রসারী প্রতিরক্ষা নীতির আলোকেই সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের জন্য ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ প্রণয়ন করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, এরই মধ্যে সেনাবাহিনীতে তিনটি নতুন পদাতিক ডিভিশন এবং প্রথম প্যারা কমান্ডো ব্রিগেড গঠন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে অত্যাধুনিক সাঁজোয়া যান এবং গোলন্দাজ কোরে মাঝারি ও দূরপাল্লার এমএলআরএস রেজিমেন্ট। বিধ্বংসী স্বয়ংক্রিয় সোরাড, ভিসোরাড এবং সর্বাধুনিক অরলিকন মিসাইল রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আকাশ প্রতিরক্ষায় সূচিত হয়েছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। অত্যাধুনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও সিগন্যাল সরঞ্জামাদি ছাড়াও বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র, হেলিকপ্টার, উড়োজাহাজ, মডার্ন ইনফ্যান্ট্রি গেজেট এবং আরও নানাবিধ অস্ত্র-সরঞ্জামাদি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সংযুক্ত হয়েছে।

এসব অস্ত্র-সরঞ্জামের জন্য প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো সম্প্রসারণ এবং বিপুল নতুন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও নানাবিধ অস্ত্র-সরঞ্জামাদি এবং ভৌত কাঠামোর সংযোজন ও সম্প্রসারণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার নারীর ক্ষমতায়ন এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নারীর অংশীদারত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সেনাবাহিনীতে ২০০০ সালে সর্বপ্রথম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে নারী অফিসার নিয়োগ এবং ২০১৩ সালে সর্বপ্রথম নারী সৈনিক ভর্তির যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

সর্বশেষ খবর