কানাডা ও দুবাই ঢুকতে ব্যর্থ হয়ে দেশে ফিরে আসা সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান তার ভাইয়ের বাসায় অবস্থান করছেন। বাসাটি উত্তরা এলাকায় বলে জানা গেছে। তিনি গতকাল বাসা থেকে বের হননি বলে পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে। এদিকে মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে ঢাকা ও রাজশাহীতে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের করা মামলা খারিজ করে দিয়েছে সাইবার ট্রাইব্যুনাল।
বিতর্কিত মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো মুরাদ হাসান বৃহস্পতিবার রাতে এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে দুবাই হয়ে কানাডা যান।
টরন্টোর পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পর সেখান থেকে তাকে ফিরিয়ে দেয় কানাডার বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সি (সিবিএসএ)। পরে তাকে দুবাইয়ের ফ্লাইটে তুলে দেওয়া হয়। তিনি এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে রবিবার বিকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। সেখানে আগে থেকে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের চোখ এড়িয়ে তিনি অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল দিয়ে বেরিয়ে আসেন। তার জন্য আগে থেকে অপেক্ষমাণ একটি ব্যক্তিগত গাড়িতে করে তিনি উত্তরার দিকে চলে যান। তার পরিবারের ঘনিষ্ঠ একজন জানান, তিনি উত্তরার একটি বাসায় অবস্থান করছেন। গতকাল পর্যন্ত তিনি জামালপুর যাননি। বাংলাদেশ প্রতিদিনের জামালপুর প্রতিনিধি জানান, সোমবার (গতকাল) সকালে মুরাদ হাসান সরিষাবাড়ীর দৌলতপুরে নিজ বাড়িতে ফিরতে পারেন এমন খবরে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জড়ো হন। উপস্থিত হন সাংবাদিকরাও। কিন্তু গতকাল দিনভর অপেক্ষা করেও তাকে সরিষাবাড়ীতে দেখা যায়নি। তার ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘মুরাদ হাসান বর্তমানে ঢাকায় তার ভাই মাহমুদ হাসান তালুকদার মিন্টুর বাসায় অবস্থান করছেন।’ জানা গেছে, মুরাদ হাসানের ভাই একজন বিচারপতি। ভাইয়ের বাসায় বা অন্য কোথাও অবস্থান করার বিষয়ে পরিবারের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।ঢাকায় মামলা খারিজ : বিএনপি নেতা তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমান সম্পর্কে অশালীন ভাষায় বক্তব্যের অভিযোগে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানসহ দুজনের বিরুদ্ধে করা মামলার আবেদন খারিজ করে দিয়েছে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। আদালতে বাদীপক্ষের আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার শুনানি করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে। এরপর মামলা গ্রহণ করার মতো কোনো উপাদান না থাকায় বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেন মামলাটি খারিজের আদেশ দেন। এর আগে রবিবার জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা ওমর ফারুক ফারুকী বাদী হয়ে ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করেন। সেখানে মুরাদ হাসানের সঙ্গে ইউটিউবার মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদকেও আসামি করা হয়েছিল।
বাদী অভিযোগে বলেন, বিএনপি নেতা তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমান যুক্তরাজ্যে আইনি পেশায় নিয়োজিত আছেন। জাইমা রহমানের দাদা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও দাদি তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ১ ডিসেম্বর আসামি নাহিদ অপর আসামি ডা. মুরাদের সাক্ষাৎকার নেন, যা পরবর্তী সময়ে মুরাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রচার ও প্রকাশ করা হয়। সেখানে মুরাদ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে জিয়া পরিবার ও জাইমা রহমান সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ, মিথ্যা ও অশ্লীল মন্তব্য করেন। আসামিদের এমন হীন কর্মকাণ্ড সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে, যা জাইমা রহমান ও তার পরিবারের জন্য মানহানিকর এবং অপমানজনক। আসামিরা এমন অসত্য তথ্য প্রচার ও প্রকাশ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫/২৯/৩১/৩৫ ধারার অপরাধ করেছেন।
রাজশাহীতেও মামলা খারিজ : একই অভিযোগ এনে ডা. মুরাদ হাসান ও ইউটিবার মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদ ওরফে নাহিদ হেলালকে আসামি করে মামলার আবেদন করা হয়। গতকাল রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালত এ মামলার আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। এর আগে রবিবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মো. জিয়াউর রহমান এ মামলার আবেদনটি বিবেচনার জন্য গ্রহণ করে পরে আদেশের জন্য রাখেন।