বৃহস্পতিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ঢাকায় কর্মব্যস্ত দিন কাটালেন ভারতের রাষ্ট্রপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকায় কর্মব্যস্ত দিন কাটালেন ভারতের রাষ্ট্রপতি

ভারতের প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হোটেল সোনারগাঁওয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন -পিআইডি

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে মুজিব জন্মশতবর্ষ ও মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ আয়োজনে অংশ নিতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে গতকাল ঢাকায় এসেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাকে স্বাগত জানান। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। সফরের শুরুতে রামনাথ কোবিন্দ সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর তিনি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে কর্মব্যস্ত দিন শুরু করেন। এরপর বিকালে হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে তাঁর হোটেল স্যুটে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। সন্ধ্যায় ভারতের রাষ্ট্রপতি যান বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে। এ সময় ভারতের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত একটি টি-৫৫ ট্যাংক এবং একটি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষণ এবং প্রদর্শনের জন্য রাষ্ট্রপতিকে উপহার দেন। এরপর রামনাথ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক আয়োজিত নৈশভোজে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী, উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

লাল গালিচা সংবর্ধনা : ঢাকায় পৌঁছানোর পর ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে তিন বাহিনীর গার্ড অব অনার ও লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। তিনি ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসের একটি বিশেষ বিমান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর সেখানে প্রতিবেশী দেশের রাষ্ট্রপতি ও ফার্স্ট লেডি সবিতা কোবিন্দকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও ফার্স্ট লেডি রাশিদা খানম। বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে ২১ বার তোপধ্বনি দিয়ে রামনাথ কোবিন্দকে স্বাগত জানানো হয়। তিন বাহিনীর সুসজ্জিত একটি চৌকশ দল গার্ড অব অনার দেয়। দেওয়া হয় লাল গালিচা সংবর্ধনা। গার্ড পরিদর্শনকালে ভারতের রাষ্ট্রপতিকে লাইন অব প্রেজেন্টেশনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ গতকাল ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে পৌঁছলে তাঁকে বই উপহার দেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা     -বাংলাদেশ প্রতিদিন

স্মৃতিসৌধে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা : সফররত ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ গতকাল সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। কোবিন্দ দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে একটি হেলিকপ্টারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পৌঁছান এবং সেখানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জাতীয় বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। সেখানে পৌঁছালে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল কমান্ডিং অফিসার (জিওসি) মেজর জেনারেল শাহীনুল হক এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা ভারতের রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর একটি চৌকশ দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। ভারতের রাষ্ট্রপতি স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে একটি অশোক গাছের চারা রোপণ করেন এবং দর্শনার্থীদের বইয়ে স্বাক্ষর করেন।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা : ঢাকায় সফররত ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। দুপুরে ধানমন্ডিতে পৌঁছালে ভারতের রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানান বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়ার পর শেখ রেহানা ভারতীয় রাষ্ট্রপতিকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখান। ভারতীয় রাষ্ট্রপতি পরে জাদুঘরে রাখা পরিদর্শন বহিতে হিন্দি ভাষায় তাঁর মন্তব্য লেখেন। 

উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে চায় ঢাকা-দিল্লি : গতকাল বিকালে হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সাক্ষাতের সময় চলমান সুসম্পর্ক বজায় রেখে একে অপরকে সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে চায় বাংলাদেশ ও ভারত বলে অভিমত ব্যক্ত করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া। এ সময় ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনের তৈরি করা মিষ্টি, কেক ও বিস্কুট উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে আম পাঠিয়েছিলেন তা খুব সুস্বাদু ও মিষ্টি বলে জানান ভারতের রাষ্ট্রপতি। ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ছিলেন সে দেশের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার, রাজদীপ রায় এমপি, ভারতের রাষ্ট্রপতির সচিব কেডি ত্রিপাঠি, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী।  সাক্ষাৎ শেষে ব্রিফিং করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল কবির। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এম আবদুল মোমেন বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের ৫০ বছরের সুসম্পর্ক। আমরা ওনাকে (ভারতের রাষ্ট্রপতি) বলেছি, এ সুসম্পর্ক সোনালি অধ্যায়, এটা অন্যান্য দেশের জন্য উদাহরণ। কারণ আমরা অনেক বড় বড় সমস্যা নিজেরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করেছি। আগামী ৫০ বছরে আমরা বিভিন্ন দিকে একে অপরকে সাহায্য করে উন্নতির শিখরে পৌঁছাব। আমরা কানেক্টিভিটির কথা তুলে ধরেছি। আগামীতে নতুন নতুন বিষয় নিয়ে কাজ করার কথা বলেছি। তিনি বলেন, বৈঠকে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যার কথা তুলে ধরেছে। এ ক্ষেত্রে ভারতের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে সফরে এসে খুবই খুশি বলে জানিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।

বাংলাদেশ কাউকে সংখ্যালঘু হিসেবে দেখে না : রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ কাউকে সংখ্যালঘু হিসেবে দেখে না, এখানে সব নাগরিকের সমান অধিকার। এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতার জন্য বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সুসম্পর্ক জরুরি। সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এই কথা জানান। তিনি জানান, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিপদের সময়ে ভারত বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে আশ্রয় দেওয়ায় দেশটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

হামিদ-কোবিন্দ বৈঠকে : বাংলাদেশ ও ভারতের বাণিজ্য সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে যৌথ উদ্যোগ নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। বাংলাদেশ সফররত ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ গতকাল সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তাদের আলোচনায় বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়টি আসে। স্ত্রী সবিতা কোবিন্দ ও মেয়ে স্বাতী কোবিন্দকে নিয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বঙ্গভবনে পৌঁছালে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং তার স্ত্রী রাশিদা হামিদ তাদের স্বাগত জানান। পরে বঙ্গভবনের ক্রেডেনশিয়াল হলে বৈঠকে বসেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান।

রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন গণমাধ্যমকে বলেন, সাক্ষাতের সময় দুই রাষ্ট্রপতি দুদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর ওপর জোর দেন। এ সময় তারা এ ব্যাপারে দুই দেশেরই যৌথ উদ্যোগ প্রত্যাশা করেন।

এ সময় বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে আবদুল হামিদ দুদেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন।

প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন বলেন, সাক্ষাতের সময় ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বলেন, বাংলাদেশে আসতে পেরে আমি গর্বিত। মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদকে ‘ওয়ার হিরো’ হিসেবে বর্ণনা করেন কোবিন্দ। তিনি বলেন, মৈত্রী দিবস উদযাপন দুদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘বড় টেস্টিমনি’।

সর্বশেষ খবর