শুক্রবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ড্যাপ চূড়ান্ত যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) চূড়ান্ত করেছে ড্যাপ পর্যালোচনাসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। অনুমোদনের জন্য এটা এখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। মন্ত্রিসভা কমিটির আহ্বায়ক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম জানান, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর ড্যাপের গেজেট জারি হবে। গতকাল সচিবালয়ে ড্যাপ পর্যালোচনাসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব তথ্য দেন।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘ড্যাপে কেউ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা কারও ওপর যদি অবিচার করা হয়েছে বলে মনে হয় তবে সেসব সংশোধন করা হবে। কোনো পক্ষের ক্ষতি করার জন্য ড্যাপ পাস করা হচ্ছে না। আমরা সৎ উদ্দেশ্যে কাজ করছি। সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে যতটুকু সুযোগ দেওয়া যায় তা বিবেচনায় রাখা হয়েছে। দেশের উন্নতিতে ব্যবসায়ীদের অবদান কম নয়।

বিল্ডার্সরা যদি বেসরকারি খাতে ভবন না করতেন তবে সরকারিভাবে এত ভবন করা কঠিন হতো। তাদের অবদান যাতে খর্ব না হয়, সর্বোচ্চ যতটুকু সুযোগ আাছে তা বিবেচনায় রাখা হয়েছে। এখন কেউ যদি মনে করেন কিছু কিছু এলাকায় আরও বহুতল ভবন করতে হবে তাহলে সেখানে দৈনন্দিন জীবনযাপন করা, চলাচল উপযোগী থাকবে না। সেসব কারণে ড্যাপে হাত দিতে হয়েছে। আধুনিক নগরীতে বাস-বে করা দরকার। কিন্তু সেখানেও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। মহাখালী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত রাস্তার পাশে জায়গা পাওয়া কঠিন, তবে এগুলোকেও বিবেচনায় রাখা হয়েছে।’

ভবন বা রাস্তা নির্মাণে নিয়নকানুন মানা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়ার সময় রাজউককে এ বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। বাসের সাবওয়ের কথা বলা হচ্ছে। কমলাপুর রেলস্টেশন ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘিরে উন্নয়ন হয়েছে। এখন এমন একটি জায়গায় গিয়েছে যে রেলস্টেশনটি আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণার কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। সময়ের ব্যবধানে এসব নিয়ে চিন্তা করতেই পারি। আধুনিক নগরীতে একটা বাস-বে দরকার। এটা করতে আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। মহাখালী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত রাস্তার পাশে জায়গা পাওয়া কঠিন। বাসের স্পিড, ট্রাফিকসহ সবকিছু বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। পুরো ঢাকা সিটির জন্য বারবার প্ল্যান না করে আমরা বিসমিল্লাহ আকারে করছি। এর ফলে আমাদের অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এ সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাজউক ও পূর্ত মন্ত্রণালয় লিড দিতে পারে। অন্যান্য সহযোগী হিসেবে তারা কাজ করবে। এ কাজটা আমাদের করতে হবে। না করলে এ শহর আমাদের বসবাসের জন্য হুমকির সম্মুখীন হয়ে যাবে।’

রিহ্যাবের আপত্তির বিষয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে মতামত নিয়েছি। এখানে যদি তাদের যে চাহিদা বা মতামত, যুক্তিসংগত হয়ে থাকলে শতভাগ নিয়েছি। যেখানে দ্বিমত ছিল তা নিয়ে তাদের সঙ্গে বসে ঐকমত্যে পৌঁছেছি। যে জায়গায় আর কোনো মানুষ হাঁটার জায়গা নেই, সেখানে যদি আরও মানুষ আমি ঢোকাই, যেখানে বিল্ডিং নির্মাণ করার মতো নতুন কোনো জায়গা নেই, যারা বিল্ডিংয়ে আছেন তারা বের হতে পারছেন না, সেসব জায়গায় যদি নতুন বিল্ডিং ও হাইরাইজ বিল্ডিং বানাই তাহলে মানুষের জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। তাদের জীবন রক্ষার জন্য কি আমাদের দায়দায়িত্ব নেই? সেখানে যারা বসবাস করবেন তাদের লাইফ থ্রেটের ব্যাপারটা কি কনসার্নে নেব না? এখানে এ কথাটা একেবারেই অমূলক, ছয় তলা-তিন তলার ওপরে কোথাও বিল্ডিং করতে দেওয়া হবে না। ৪০ তলা, ৫০ তলা, ১০০ তলা বিল্ডিং যদি কেউ করতে চান তাদের অভিনন্দন জানাই, তবে যেখানে করতে চাইবেন সেখানে যোগাযোগব্যবস্থাসহ অন্যসব সুযোগ-সুবিধা যদি থাকে আমরা এখানে সুপারিশ করছি তাদের অনুমোদন দিয়ে দেওয়ার জন্য। যেখানে এসব সুযোগ-সুবিধা নেই সেখানে সুযোগ দেওয়াটা কোনোভাবেই মানবিক ও নৈতিক হবে না।’ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি নতুন করে যেসব আবাসিক এলাকা হবে সেখানে প্রতিটিতে একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকবে। এ ধরনের সুবিধার কথা চিন্তা করছি। রিহ্যাবকে অভিনন্দন জানাই তাদের কাজকর্মের জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে স্বীকৃতি দিয়েছি। কারণ তারা আবাসন খাতে অনেক পরিবর্তন এনেছে এবং অবদান রাখছে। তবে যেসব স্থান এখনো অনুন্নত রয়েছে সেখানে বিল্ডিং বানান। রাস্তা এখন নেই ভবিষ্যতে হবে। ড্যাপের প্ল্যানের মধ্যে রাস্তাঘাট রয়েছে। সেসব এলাকায় বিল্ডিং বানাতে তিন-চার বছর লাগবে আমরা এর মধ্যে রাস্তা করে ফেলব।’

সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউক চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরীসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

 

সর্বশেষ খবর