শনিবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

এবার সংলাপ করবে বিএনপি, বাদ থাকবে জামায়াত

চিঠি পাঠাবে রাষ্ট্রপতির সংলাপে

শফিউল আলম দোলন ও শফিকুল ইসলাম সোহাগ

রাষ্ট্রপতির সংলাপে যাচ্ছে না বিএনপি। তবে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিজেরাই সংলাপের আয়োজন করছে। পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতিসহ নানা প্রস্তাব নিয়ে বিরোধী দলগুলোর কাছে যাবে দলটি। তাদের সঙ্গে আলোচনা ও মতবিনিময় করবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশনসহ সামগ্রিক রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে এ সংলাপ বা আলোচনা হবে। ডান, বাম ও মধ্যপন্থি ছোট-বড় সব ধরনের রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই আলোচনা করবে তারা। মূল লক্ষ্য হলো,  নির্বাচনী বৃহৎ ঐক্য গঠন। গত সোমবার দলের স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দলের হাইকমান্ড থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ১২ জানুয়ারি থেকে জেলা পর্যায়ে যে সমাবেশ কর্মসূচি শুরু হবে, সেসব কর্মসূচি শেষে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই সংলাপ শুরু করতে পারে বিএনপি। তবে নতুন এই বৃহৎ ঐক্য থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলাম।  বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের জেলা পর্যায়সহ অন্য যেসব কর্মসূচি চলছে, সেগুলো শেষ হলেই মতবিনিময়ের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। তবে এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আনুষ্ঠানিক কিছু নয়। রাজনৈতকি দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ হবে। আলোচনা হবে। রাজনৈতিক ঐক্যের কথা আমরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছি।  সূত্রগুলো জানিয়েছে, সমমনা বিরোধী দলগুলোর পাশাপাশি বাম সংগঠনগুলোও এতে বেশ সাড়া দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট দলগুলোর সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ইতোমধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। প্রত্যেকটি দলের সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনায় অংশ নেবে বিএনপি। এই আলোচনায় দলের কোন কোন নেতা অংশগ্রহণ করবেন, তা অবশ্য এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে ইতোমধ্যে যারা নির্বাচন কমিশন গঠন প্রশ্নে রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশগ্রহণ করেনি, সেসব দলকে ধন্যবাদ জানাবে বিএনপি। তাছাড়া সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিএনপির মতবিনিময়ের প্রকাশ্য ঘোষণার পর দলগুলোর অভ্যন্তরে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। সম্ভাব্য আলোচ্য বিষয় নিয়ে একে অপরের সঙ্গে কথা বলাও শুরু করেছেন। জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অবশ্যই বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলা দরকার। বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে বিএনপি মতবিনিময়ের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা ইতিবাচক। অবশ্যই রাজনীতিতে বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন। বিদ্যমান জোট বিরাজমান রেখেই বৃহত্তর ঐক্যের জন্য সংলাপ বা আলোচনা হতে পারে। গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, জেএসডি রাষ্ট্রপতির সংলাপে যাবে না।    

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিএনপির আলোচনা করার নতুন প্রক্রিয়া আগামী দিনের আন্দোলনের সাফল্য তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে। যেহেতু ইস্যুগুলো প্রায় সমধর্মী, সে কারণে আন্দোলনের প্রশ্নে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যে আসার সম্ভাবনাও জোরালো হয়ে উঠেছে। জানা গেছে, সিপিবি, জাসদ (একাংশ), বাসদসহ আরও বেশ কিছু দলের সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব। প্রাথমিক পর্যায়ে তারা সবাই ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। পর্যায়ক্রমে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত সব দলের সঙ্গেই কথা বলবে বিএনপি। জানা গেছে, বিএনপির এই মতবিনিময়ের উদ্দেশ্যই হলো- নির্বাচনের আগে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলা। এই ঐক্যের মাধ্যমেই বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, জাতীয় নির্বাচন ও নির্বাচন-পরবর্তী সরকার গঠন করতে চায় দলটি। এদিকে, রাষ্ট্রপতির সংলাপে বিএনপির না যাওয়ার সিদ্ধান্ত অনুসারেই দেশের ডান, বাম ও ইসলামীসহ অনেক রাজনৈতিক দলই এখন আর সংলাপে যাচ্ছে না। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপি বড়জোর সংলাপ বর্জনের কারণ জানিয়ে বঙ্গভবনে একটি চিঠি দিতে পারে বলে জানা গেছে। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মানুষের সঙ্গে প্রতারণার তো আর কিছু বাকি নেই এ সরকারের। নতুন করে এই প্রতারণা বা ঠাট্টা-তামাশারও কোনো দরকার নেই। দেশের জনগণকে এতটা বোকা ভাবারও কোনো সুযোগ নেই। আগে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। তারপর কমিশন গঠনের প্রশ্ন আসবে। এর বাইরে ইসি গঠন নিয়ে এই সংলাপে অংশ নেওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।

সর্বশেষ খবর