দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রসঙ্গ নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অভিযোগ আমলে নিচ্ছে না বাংলাদেশ সরকার। নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে ২০২১ সালে সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন ও গুমের প্রমাণ নিয়ে জাতিসংঘ, দাতা এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর উত্থাপিত উদ্বেগগুলো খারিজ করে দিয়েছে সরকার। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) ‘ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট, ২০২২’-এ কথা বলা হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়- বাংলাদেশের সরকার অধিকারকর্মী, সাংবাদিক, এমনকি শিশুদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে, যারা কভিড-১৯ মহামারিতে সরকার বা এর প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করেছে। গতকাল এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এইচআরডব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস এ সময় বলেছেন, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ কভিড-১৯ মহামারি ব্যবহার করে একটি হতাশাজনক বার্তা দিয়েছে যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনার শাস্তি দেওয়া হবে। তবু সাংবাদিক, চিকিৎসাকর্মী ও অধিকারকর্মীরা স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে সেসব বাধা তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া অনেক মানুষ এ প্রতিবন্ধকতাগুলোর সম্মুখীন হয়েছেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ‘ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট, ২০২২’ ৭৫২ পৃষ্ঠায় প্রায় ১০০ দেশের মানবাধিকার চর্চার বিষয় পর্যালোচনা করা হয়। প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক কেনেথ রথ প্রচলিত অভিজ্ঞতা চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন, স্বেচ্ছাচারী কর্তৃত্ব মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। গ্রেফতার বা গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন দেশে সম্প্রতি বিপুলসংখ্যক মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। এতে প্রমাণিত হয় যে গণতন্ত্রের আহ্বান এখনো শক্তিশালী রয়েছে। এদিকে স্বৈরাচাররা তাদের পক্ষে নির্বাচনকে প্রভাবিত করা আরও কঠিন বলে দেখতে পাচ্ছে। গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে বন্দি অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদ মারা যান। গ্রেফতারের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ছয়বার তাঁর জামিন আবেদন নাকচ হয়। এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে বলা হয়- নয় মাস বিচার-পূর্ববর্তী আটকাবস্থার পর কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ফেসবুকে কভিড-১৯ নিয়ে সরকারের প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করায় ওই সময় তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মে মাসে কভিড মহামারির প্রতিক্রিয়ায় অসদাচরণের বিষয়ে রিপোর্ট করার পর কর্তৃপক্ষ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে গ্রেফতার করেন। কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে রাজনৈতিক সমালোচকদের নির্বিচার গ্রেফতার ও বিচার করেছেন। প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর, রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহ হত্যা, দুর্গাপূজার সময় হিন্দু মন্দির ও বাড়িতে হামলায় পুলিশের ব্যর্থতা, বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণ ও বিচারের বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।