রবিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
বিশ্ববাজারে ক্রুড অয়েলের দাম সাত বছরে সর্বোচ্চ

জ্বালানি তেল ও বিটুমিনের দাম বাড়ছে

♦ এক মাসে ২৩ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি ♦ বিটুমিন উৎপাদনের খরচ বাড়বে : ম. তামিম

নিজস্ব প্রতিবেদক

উদ্বেগ বাড়িয়ে বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম ব্যারেলপ্রতি প্রায় ৮৮ ডলারে উঠেছে, যা গত সাত বছরে সর্বোচ্চ। বেড়েছে অন্যান্য অপরিশোধিত তেলের দামও। তবে নতুন বছরে টানা তিন সপ্তাহ লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম। এক মাসের ব্যবধানে এই তেলের মূল্যবৃদ্ধির হার অন্তত ২৩ শতাংশ। এতে দেশের বাজারে বিটুমিনের দাম ব্যারেলপ্রতি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফের বাড়তে পারে জ্বালানি তেলের দামও।

যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস বলছে, তেলের বাজারে সরবরাহ ঘাটতি বৃদ্ধির পরিমাণ বিস্ময়কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই সঙ্গে ওপেকের তেল সরবরাহের সক্ষমতাও কমেছে। এই বাস্তবতায় জ্বালানি তেলের দাম চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ১০০ ডলার এবং আগামী বছরের শুরুতে ১০৫ ডলারে উঠে যাবে-এমন পূর্বাভাস দিয়েছে গোল্ডম্যান স্যাকস। সরবরাহ হ্রাসের কারণে উন্নত দেশের তেলের মজুদ ২০০০ সালের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বছরের প্রথম সপ্তাহে ৫ দশমিক ১২ শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম ৮১ দশমিক ৭৬ ডলারে উঠে আসে। দ্বিতীয় সপ্তাহে ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম দাঁড়ায় ৮৬ দশমিক ৪৭ ডলার। এক মাস আগে এই তেলের দাম ছিল ৭১ দশমিক ৫৭ ডলার। গত শুক্রবার বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম প্রতি ব্যারেল ৮৭ দশমিক ৮৯ ডলারে স্থির হয়। মাসের ব্যবধানে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম বাড়ল ২৩ শতাংশ। অন্যদিকে, ডব্লিউটিআই ক্রুডের দামও ঊর্ধ্বমুখী। গত শুক্রবার এ তেলের দাম ছিল প্রতি ব্যারেল ৮৫ দশমিক ১৪ ডলার। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম. তামিম বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের হামলার নতুন এই উত্তেজনায় আন্তর্জাতিক বাজারে আবার তেলের দাম বাড়ছে। সব মিলিয়ে এখন জ্বালানি তেলের বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ক্রুড অয়েল থেকে যেহেতু বিটুমিন উৎপাদন হয় এখন ক্রুড অয়েলের দাম বাড়ায় বিটুমিন উৎপাদনের খরচও বাড়বে। সে কারণে বিটুমিনের দামও বাড়তে পারে। বিশ্ববাজার আরও পর্যবেক্ষণ করে পদক্ষেপ নিতে হবে। জানতে চাইলে জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, বিটুমিন উৎপাদনে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত ক্রুড অয়েলের দাম বাড়ার বিষয়টি আমরা এখনো পর্যবেক্ষণ করছি। বিশ্ববাজার পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

দেশে বছরে বিটুমিনের মোট চাহিদা কমপক্ষে সাড়ে ৫ লাখ টন। সরকারি পর্যায়ে উৎপাদন সক্ষমতা মাত্র ৬০ থেকে ৭০ হাজার টন। চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে নিম্নমানের ভেজাল বিটুমিন আমদানি করে আসছিল। সেসব নিম্নমানের বিটুমিনে তৈরি সড়কগুলো ছয় মাসেই খানাখন্দে ভরে যায়। বাড়ে জনদুর্ভোগ এবং সেসব সড়কে চলা যানবাহনেরও আয়ুষ্কাল কমে যায়। আবার ক্ষতিগ্রস্ত সেই সড়কগুলো মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় উন্নতমানের বিটুমিনের ব্যবহার নিশ্চিত করতে দেশে বেসরকারি পর্যায়ে বিটুমিন উৎপাদনের প্লান্ট গড়ে উঠেছে। গত এক বছরে অপরিশোধিত তেলের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে, বিশেষ করে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম গত বছর ঠিক এই সময়ে ছিল প্রতি ব্যারেল মাত্র ৫৫ দশমিক ৯০ ডলার। এক বছরের মাথায় তা বেড়ে ৮৮ ডলারে উঠে আসে। বিটুমিন উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রধান এই উপকরণের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির প্রভাব পড়তে পারে বিটুমিনের বাজারে। এ ছাড়া ডিজেল, পেট্রোলসহ বিভিন্ন জ্বালানি তেলের ওপরও পড়তে পারে নেতিবাচক প্রভাব।

সর্বশেষ খবর