করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারি-বেসরকারি সব অফিস অর্ধেক জনবলে পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। গতকাল থেকেই এ নির্দেশনা কার্যকর করতে বলেছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কিন্তু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডিউটি রোস্টার (পালাবদল) তৈরি না হওয়ায় প্রায় সব কর্মকর্তা-কর্মচারীই অফিস করেছেন প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়সহ নিম্ন আদালত ও ব্যাংকপাড়ায়। অর্থাৎ সব দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতি ছিল স্বাভাবিক সময়ের মতোই।
গতকাল সরেজমিন দেখা গেছে এমন চিত্র। যদিও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, অর্ধেক জনবল নিয়ে অফিস পরিচালনা শুরু হয়েছে। চলমান বিধিনিষেধ আরও বাড়ানো হবে কি না তা জানা যাবে এক সপ্তাহ পর।
সচিবালয়ে গতকাল সরেজমিন দেখা গেছে- মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ অধিকাংশ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি ছিল স্বাভাবিক দিনের মতোই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, সরকারি নির্দেশনা পেয়েছি। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডিউটি রোস্টার (পালাবদল) তৈরি হয়নি। সেটা নিয়ে কাজ চলছে। এ কারণে সবাই অফিসে এসেছেন। ডিউটি রোস্টার তৈরি হলে অর্ধেক জনবলে অফিস কার্যক্রম শুরু হবে। হয়তো মঙ্গলবারই শুরু হবে।এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সচিব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা সবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা পেয়েছি। সে অনুযায়ী রোস্টার করে অর্ধেক জনবলেই অফিস পরিচালনা করা হবে। যেসব কর্মকর্তার হাতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকবে তাদের নিয়মিতই অফিসে আসতে হবে। বাকিদের পালাক্রমে অফিসে আনার ব্যবস্থা করা হবে।’
সচিবালয়ের বাইরের খাদ্য অধিদফতর, বিদ্যুৎ ভবন, শিক্ষা ভবন, মৎস্য ভবনসহ সরকারি অফিসগুলোর চিত্রও ছিল প্রায় অভিন্ন। সুপ্রিম কোর্ট আগেই ভার্চুয়ালি কার্যক্রম শুরু করলেও গতকাল নিম্ন আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি ছিল অন্যান্য দিনের মতোই। তবে আজ (মঙ্গলবার) থেকে অর্ধেক জনবলে আদালতের কার্যক্রম চলবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছেন। এদিকে ব্যাংকপাড়া খ্যাত মতিঝিলের অফিসগুলোয়ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি ছিল স্বাভাবিক দিনের মতোই। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আদেশ অনুযায়ী আজ থেকে অর্ধেক জনবলে চলবে ব্যাংকগুলো। এদিকে গতকাল নিজ দফতরে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘সোমবারই (গতকাল) করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে অর্ধেক জনবল নিয়ে অফিস পরিচালনার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। গর্ভবতী নারী এবং অসুস্থ ব্যক্তিরা ঘরে বসেই ভার্চুয়ালি অফিস করবেন। যারা সাধারণত গর্ভবতী নারী, যারা একটু অসুস্থ তারা ঘরে থেকে অফিস করবেন ডিজিটাল প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে। বিশেষ করে জুম, ই-নথি, এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তারা তাদের কাজগুলো চালিয়ে নেবেন।’
বিধিনিষেধ বাড়তে পারে কি না জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই। পরিস্থিতি বিবেচনা করে। আমাদের সচেতনতার ওপরে, এখন যে ভ্যারিয়েন্টটা দেখছি ওমিক্রন, সেটা সেরে উঠতে অল্প সময় নিচ্ছে। রিকভারি রেট কিন্তু খুবই ভালো। ৮৫ শতাংশের বেশিসংখ্যক আক্রান্ত মানুষ ঘরে থেকে ট্রিটমেন্ট নিতে পারছেন এবং তারা সেরে উঠছেন। আমরা অবশ্যই আগামী এক সপ্তাহ পর দেখব এটা কী পর্যায়ে আছে, সে অনুযায়ী পরবর্তী নির্দেশনা দেব। আমাদের উদ্দেশ্য সবাই মাস্ক পরুক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নাগাদ এটি বাড়তে থাকবে। সবাইকে সচেতন হতে হবে। এ তৃতীয় ঢেউ থেকে যত তাড়াতাড়ি উত্তরণ করতে পারি। সেজন্য সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলা করতে হবে।’ গণপরিবহন বিধিনিষেধ মানছে না- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধ সবাইকে মানতে হবে। যাদের যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, নির্দেশনাগুলো সবাই মেনে চললে তা সবার জন্যই ভালো। পরিবহন সেক্টরে যারা রয়েছেন তাদেরও আমাদের সহযোগিতা করতে হবে। নিয়ম মেনে তারা গণপরিবহন পরিচালনা করবেন। এর মধ্য দিয়ে আমরা একটা ভালো রেজাল্ট পাব। আশা করছি, অল্প সময়ের মধ্যে তৃতীয় ঢেউ উত্তরণ করব।’
সরকারি কর্মচারীসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে টিকা দেওয়া প্রসঙ্গে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘যারা ফ্রন্টলাইনে কাজ করেন, জরুরি সেবার কাজে যুক্ত থাকেন তাদের আমরা জরুরিভাবেই টিকা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম। ব্যাপকভাবে টিকা নিচ্ছে, বুস্টার ডোজে ব্যাপকভাবে সাড়া পড়েছে। টিকা দেওয়া আছে বলেই যারা সংক্রমিত হচ্ছেন তাদের আগের মতো অত সমস্যা হচ্ছে না এবং হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যাও অনেক কম। এটা টিকার সুফল।’