সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে প্রতীকী অনশন করেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’-এর ব্যানারে গতকাল দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
প্রতীকী এ অনশনে অংশ নেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, মীর্জা তসলিমা সুলতানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের কাজী মারুফুল ইসলাম, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসনীম সিরাজ মাহবুব, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজলী শেহরীন ইসলাম, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী, শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের শিক্ষক ফাহরিনা দূর্রাত ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শেখ বাতেন প্রমুখ।
কর্মসূচির বিষয়ে উপস্থিত শিক্ষকরা বলেন, ‘আমরা দুঃখ নিয়ে ক্ষুব্ধ হৃদয়ে আজকের কর্মসূচিতে এসেছি। শাবিপ্রবিতে আমাদের সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীর প্রাণ নিঃশেষ হয়ে আসছে। সেখানকার উপাচার্যের যে মনোভাব, তাতে তিনি উপাচার্য পদে থাকার সব যোগ্যতা হারিয়েছেন। তাই অনতিবিলম্বে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে আজকের কর্মসূচি পালন করছি।’আচার্যের কাছে খোলা চিঠি : এদিকে, শাবিপ্রবি উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আবদুুল হামিদের কাছে খোলা চিঠি পাঠিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। এ নিয়ে গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে এক সমাবেশ করে তারা। সংগঠনটির সমন্বয়ক ও ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন প্রিন্স ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (বাসদ) রাশেদ শাহরিয়ারের পক্ষ থেকে পাঠানো ওই খোলা চিঠিতে বলা হয়, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বর্বর হামলায় মদদ দেওয়ার পর উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ উপাচার্য হিসেবে থাকার আর কোনো নৈতিক অধিকার নেই বলে আমরা মনে করি।’ অনশনরত শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার দাবি জানিয়ে এতে অবিলম্বে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে তার উপাচার্য পদ থেকে অপসারণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে রাষ্ট্রপতির নিকট অনুরোধ জানানো হয়।
‘তৃতীয় পক্ষে’র ফায়দা : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আন্দোলনে ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বাইরে তৃতীয় একটি পক্ষ এ আন্দোলনে ফায়দা হাসিল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত’ আছে বলে মন্তব্য করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবি পরবর্তী সময়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে রূপান্তরের বিষয়টিকে ‘অনভিপ্রেত এবং উদ্বেগের’ অ্যাখ্যা দিয়ে একে খতিয়ে দেখার কথা বলছেন তারা। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রহমতউল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। এতে শাবিপ্রবিতে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন প্রকাশ করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৩ জানুয়ারি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের বিভিন্ন ইস্যুতে প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে ছাত্রীরা আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলন চলাকালে পুলিশের বলপ্রয়োগের মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে ওই হলের প্রভোস্ট পদত্যাগ করেন। আন্দোলনকে পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের মূলদাবি পূরণ হওয়া সত্ত্বেও উপাচার্যের পদত্যাগের আন্দোলনে রূপ নেয়। আন্দোলনের এ রূপান্তরের বিষয়টি অত্যন্ত অনভিপ্রেত এবং উদ্বেগের। যা খতিয়ে দেখার দাবি রাখে।
বিবৃতিতে গণমাধ্যমের তথ্য বিশ্লেষণের বরাতে বলা হয়, একটি বিশেষ মহল এ আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপান্তরের অপচেষ্টা করছে বলে প্রতীয়মান হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাই। একইসঙ্গে সরকারকে আহ্বান জানাই, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অবিলম্বে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে। পাশাপাশি পুলিশি হামলায় কারও কোনো উসকানি রয়েছে কি না- তাও তদন্তের দাবি জানান তারা।