রবিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

সার্চ কমিটি দেবে দশ নাম

নেতৃত্বে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ♦ প্রথম বৈঠক আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সার্চ কমিটি দেবে দশ নাম

নির্বাচন কমিশন গঠনে অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি গঠন করেছে সরকার। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের এ কমিটির সুপারিশ করা ব্যক্তিদের তালিকা থেকে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি। সার্চ কমিটির সদস্য হচ্ছেন হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, পদাধিকার বলে পিএসসি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, মহাহিসাব নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষক মুসলিম চৌধুরী। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুই সদস্য হলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও অধ্যাপক ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হক। গতকাল এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

এদিকে নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠক ডেকেছেন সভাপতি বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। আজ বিকাল ৪টায় সুপ্রিম কোর্ট জাজেস লাউঞ্জে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল রাতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কমিটি গঠনের পর সার্চ কমিটির সভাপতি বিচারপতি ওবায়দুল হাসান প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমকে বলেন, কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপন হয়েছে, কিন্তু এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে সদস্যদের সঙ্গে কথা হয়নি। সবার সঙ্গে কথা বলে আমরা শিগগিরই বৈঠকে বসব। ইসি গঠনের নতুন আইন অনুযায়ী, অনুসন্ধান কমিটি গঠনের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে যোগ্য ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করতে হবে সার্চ কমিটিকে। কমিটি চাইলে ১৫ কার্যদিবসের আগেও ইসি গঠনের জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করতে পারবে। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি বিদায় নেবে। ফলে এর আগেই নাম সুপারিশের জন্য সার্চ কমিটির হাতে সময় আছে ৭ কার্যদিবস। কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও কমিশনারদের প্রতিটি পদের জন্য দুজন করে মোট ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবে। এ ১০ জনের মধ্য থেকে সিইসিসহ পাঁচজনকে দিয়ে ইসি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি। স্বাধীনতার পর এবারই প্রথমবারের মতো আইনানুযায়ী ইসি গঠিত হচ্ছে। এ জন্য কিছুদিন আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২ জাতীয় সংসদে পাস হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সম্মতির পর গত সপ্তাহে বিলটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। অর্থাৎ এটি আইনে পরিণত হয়।

অনুসন্ধান কমিটির কাজ সম্পর্কে আইনে বলা হয়েছে, এ কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে। আইনে বেঁধে দেওয়া যোগ্যতা, অযোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনা করে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করা হবে।

যাদের নিয়ে কমিটি : কমিটির সভাপতি বিচারপতি ওবায়দুল হাসান দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগে দুই বছর ধরে বিচারকের দায়িত্ব পালন করছেন। ইসি গঠনের ২০১৭ সালের সার্চ কমিটিতেও হাই কোর্ট বিভাগের বিচারক হিসেবে সদস্য ছিলেন তিনি। ২০১২ থেকে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন। ৬২ বছর বয়সী ওবায়দুল হাসানের বাবা ডা. আখলাকুল হোসাইন আহমেদ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ওবায়দুল হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি নেন। আইনজীবী হিসেবে জেলা আদালতে কাজ শুরু করেন ১৯৮৬ সালে। হাই কোর্ট বিভাগে ১৯৮৮ সালে এবং আপিল বিভাগে ২০০৫ সালে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ২০০৯ সালে হাই কোর্ট বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান ওবায়দুল হাসান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ৬১ বছর বয়সী এস এম কুদ্দুস জামান চার বছর ধরে হাই কোর্ট বিভাগে বিচারকের দায়িত্বে রয়েছেন। রাজবাড়ীর সন্তান কুদ্দুস জামান ১৯৮৪ সালে জুডিশিয়াল সার্ভিসে যোগ দিয়ে ২০০৬ সালে জেলা জজ হন। সুপ্রিম কোর্টে রেজিস্ট্রারের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। ২০১৫ সালে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ হন কুদ্দুস জামান। ২০১৮ সালে হাই কোর্টে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ২০০৭-২০১২ সালে নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন। জরুরি অবস্থার সময় দায়িত্ব নেওয়া সে কমিশনই সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে আইন করার প্রথম খসড়া প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিলেন। সিলেটের সন্তান ছহুল জেলা জজ হিসেবে বিভিন্ন জেলায় দায়িত্ব পালন শেষে আইন সচিবও হয়েছিলেন তিনি। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিন হিসেবে কর্মরত। অধ্যাপক ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে দেশে এক নামে পরিচিত। লেখক হিসেবেও রয়েছে তার পরিচিতি। তার স্বামী প্রয়াত সাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হকের খ্যাতি ছিল সব্যসাচী লেখক হিসেবে। ১৯৪০ সালে যশোর জেলায় জন্ম নেওয়া আনোয়ারা সৈয়দ হক পড়াশোনা করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে এবং লন্ডনের এমআর সাইক-এ। তিনি কিছুকাল বিমানবাহিনীতে চিকিৎসক হিসেবে ছিলেন। গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ ও শিশুসাহিত্য রচনা করে যাওয়া আনোয়ারা সৈয়দ হক ২০১০ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। ২০১৯ সালে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে সরকার। ৬১ বছর বয়সী সোহরাব হোসাইন সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে। ১৯৮৪ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের এ কর্মকর্তা সর্বশেষ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব ছিলেন। অবসরোত্তর ছুটিতে যান ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর। নোয়াখালীর সন্তান সোহরাব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী ২০১৮ সালের ১৫ জুলাই থেকে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বে রয়েছেন। তার আগে অর্থ সচিব পদে ছিলেন তিনি। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের অডিট অ্যান্ড একাউন্টস ক্যাডারে যোগ দিয়ে কন্ট্রোলার জেনারেল অব একাউন্টস, কন্ট্রোলার জেনারেল ডিফেন্স ফাইন্যান্স এবং অর্থ বিভাগের উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া মুসলিম চৌধুরী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটি থেকে ফিন্যান্স অ্যান্ড একাউন্টিংয়ে ডিসটিংশনসহ এমএসসি ডিগ্রি নেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর