রবিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

চলে গেলেন পীর হাবিব

নিজস্ব প্রতিবেদক

চলে গেলেন পীর হাবিব

পীর হাবিবুর রহমান, জন্ম ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৪-মৃত্যু ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২

দেশবরেণ্য সাংবাদিক, খ্যাতিমান কলামিস্ট, বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমান আর নেই। গতকাল বিকাল ৪টা ৮ মিনিটে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৮ বছর। আজন্ম মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নিবেদিত কর্মপ্রাণ সাহসী সাংবাদিক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য পীর হাবিবের জীবনাবসানে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত বাংলাদেশ প্রতিদিন পরিবারও। আজ ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও জাতীয় প্রেস ক্লাবে সর্বস্তরের মানুষ তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। আগামীকাল বাদ জোহর তাঁকে সুনামগঞ্জের গ্রামের বাড়ি বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলামিস্ট পীর হাবিবুর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক, সাংবাদিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা। জ্যেষ্ঠ এই সাংবাদিকের মৃত্যুসংবাদ শুনে গতকাল বিকালে হাসপাতালে ভিড় জমান তাঁর দীর্ঘদিনের সহকর্মী সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। পৃৃথক শোকবার্তায় তাঁরা বলেন, পেশাগত দায়িত্বে পীর হাবিব ছিলেন অত্যন্ত সৎ, নিষ্ঠাবান। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে ছিলেন অবিচল। তাঁর অকালে চলে যাওয়ায় জাতি একজন খ্যাতিমান কলামিস্ট ও আপসহীন, সাহসী সাংবাদিককে হারাল। মহান মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে, বঙ্গবন্ধু এবং গণতন্ত্রের প্রতি তাঁর সৃজনশীল ও সাহসী লেখনী অনুপ্রাণিত করবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে। তাঁর মৃত্যুতে অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হলো। গত বছর অক্টোবরে মুম্বাই জাসলুক হাসপাতালে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশনের মাধ্যমে ক্যান্সারমুক্ত হন খ্যাতিমান সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমান। ২২ জানুয়ারি তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। ইমেরিটাস অধ্যাপক বিশিষ্ট চিকিৎসক এ বি এম আবদুল্লাহর পরামর্শে এই জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি হন। করোনামুক্ত হওয়ার পর কিডনি জটিলতার কারণে তাঁকে ভর্তি করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার স্ট্রোক (মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ) করেন। এরপর তাঁকে ল্যাবএইড হাসপাতালের আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) স্থানান্তর করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। গতকাল বিকাল ৪টা ৮ মিনিটে লাইফ সাপোর্ট খুলে দেওয়া হয় তাঁর। পীর হাবিবের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে ল্যাবএইড হাসপাতালে ছুটে যান জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল, সিনিয়র সাংবাদিক ও তাঁর দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা। সেখানে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

বরেণ্য সাংবাদিক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলামিস্ট পীর হাবিবুর রহমান ১৯৬৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ শহরে রইচ আলী পীর ও সৈয়দা রহিমা খানমের ঘরে জন্ম নেন। আট ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বাবা-মায়ের সপ্তম সন্তান। বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমানের লাশ গত সন্ধ্যায় তাঁর উত্তরার বাসায় নেওয়া হয়। বাদ এশা উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের পার্ক মসজিদে প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ঢাকা-১৮ আসনের এমপি হাবিব হাসান, সুনামগঞ্জ-৪ আসনের এমপি ও মরহুমের ছোট ভাই পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর কল্যাণ সমিতির নেতৃবৃন্দসহ বিশিষ্টজনেরা অংশ নেন। আজ বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত পীর হাবিবের লাশ সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। এরপর নেওয়া হবে জাতীয় প্রেস ক্লাবে। সাড়ে ১২টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে নামাজে জানাজা শেষে লাশ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে নেওয়া হবে। বিকাল ৩টায় লাশ নেওয়া হবে তাঁর প্রিয় কর্মস্থল বাংলাদেশ প্রতিদিন কার্যালয়ে। সেখান থেকে তাঁর জন্মস্থান ‘জল জ্যোৎস্নার শহর’ সুনামগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হবে পীর হাবিবুর রহমানকে। আগামীকাল দুপুর ১২টায় সুনামগঞ্জ পৌর শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে হাওরের সন্তান পীর হাবিবুর রহমানের লাশ। বাদ জোহর সুনামগঞ্জ কেন্দ্রীয় মসজিদে এবং নিজ গ্রাম মাইজবাড়ীতে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মা-বাবার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন পীর হাবিবুর রহমান। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে পড়াকালে ১৯৮৪ সালে সাংবাদিকতায় পীর হাবিবের হাতেখড়ি। ১৯৮৬ সালে অনার্স ও ১৯৮৭ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন তিনি। ১৯৯২ সালে বাংলাবাজার পত্রিকার নির্মাণ পর্ব থেকে মূলত তাঁর পেশাদারির সূচনা। তারপর দৈনিক যুগান্তরের নির্মাণ পর্ব থেকে যুক্ত ছিলেন দীর্ঘদিন। বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে হয়েছিলেন আলোচিত রিপোর্টার। ‘আমাদের সময়’, ‘আমাদের অর্থনীতি’ হয়ে দীর্ঘদিন বাংলাদেশ প্রতিদিনে উপসম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। সর্বশেষ বাংলাদেশ প্রতিদিনে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নিউজপোর্টাল পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজের প্রতিষ্ঠাতা।

পীর হাবিবুর রহমান সাংবাদিকতার পাশাপাশি রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। বলিষ্ঠ কলামের মাধ্যমে তিনি লাখো পাঠকের মনে আলাদা জায়গা করে নিয়েছিলেন। পীর হাবিব রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। মাঠের সাংবাদিকদের সংগঠন ‘ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র নির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। রিপোর্টার জীবনে তিনি আওয়ামী লীগ বিটের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি পীর হাবিব উপন্যাস ও কবিতা লিখতেন। ‘রাজনীতির অন্দরমহল’, ‘জেনারেলের কালোসুন্দরী’, ‘বলিউডের ট্র্যাজিক প্রেম’, ‘এক্সক্লুসিভ’, ‘পোয়েট অব পলিটিক্স’, ‘ভিউজ আনকাট’, ‘বুনোকে লেখা প্রেমপত্র’, ‘মন্দিরা’, ‘খবরের বারান্দা’, ‘অব দ্য রেকর্ড’, ‘টক অব দ্য প্রেস’ ছিল তাঁর আলোচিত বই।

মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ডায়না নাজনিন, ছেলে আহনাফ ফাহ্মিন অন্তর, মেয়ে রাইসা নাজ চন্দ্রস্মিতা, বড় ভাই মতিউর রহমান পীর, ছোট ভাই পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ এমপি ও এক বোনসহ অসংখ্য পাঠক ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর