রবিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
বিদেশে মৃত্যুর মিছিলে তরুণরা

দালালের খপ্পরে ইতালির পথে নিখোঁজ তিন তরুণ

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

বিদেশে ভালো বেতনে কাজের আশায় যে কোনো উপায়েই হোক স্বপ্নের দেশ ইতালিতে যেতে চেয়েছিলেন তিন তরুণ। প্রতিবেশী দুই প্রবাসী যুবকের সঙ্গে ইতালি যাওয়ার জন্য ৩০ লাখ টাকায় চুক্তি হয় তাদের। এর মধ্যে অভিভাবকেরা ২৪ লাখ টাকা দিয়েছেন দালালদের। বাকি টাকা দেওয়ারও প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু এরই মধ্যে লিবিয়ায় একটি ঘরে বন্দি হওয়ার পর নৌকায় সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে এক সপ্তাহ ধরে তাদের কোনো খোঁজ নেই। এ নিয়ে পরিবারের লোকেরা অজানা আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। নিখোঁজ এই তিন তরুণ হলেন ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কাইচাইল ইউনিয়নের বাবুর কাইচাইল গ্রামের ফারুক মাতব্বরের ছেলে মঈন মাতব্বর ওরফে ফয়সাল (১৮), ইউনুস শেখের ছেলে সামিউল শেখ (১৯) ও মাজেদ মিয়ার ছেলে নাজমুল মিয়া (২২)। ফয়সালের বাবা ফারুক মাতব্বর বলেন, তার ছেলেসহ তিনজনকে ৩০ লাখ টাকায় ইতালি নিয়ে যাবে বলে কথা হয়েছিল পাশের ছোট নাউডুবি গ্রামের দুই প্রবাসী শওকত চৌধুরী ও রাসেল মিয়ার সঙ্গে। এ জন্য ২৪ লাখ টাকা নগদ দিয়েছেন। ছোট নাউডুবি গ্রামের শওকত ও রাসেল আপন চাচাতো ভাই। ফারুক মাতব্বরের মামাতো ভাইয়ের ছেলে তারা। লিবিয়ায় গেছেন চার বছর আগে। এ তথ্য জানিয়ে ফারুক মাতব্বর বলেন, এর আগেও তারা তিনজনকে এভাবে ইতালি নিয়ে গেছেন। পরিচিত ও আত্মীয় বিধায় তাদের প্রতি বিশ্বাস জন্মায়। ১৭ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে বিমানযোগে ফয়সাল, নাজমুল ও সামিউলকে নিয়ে যায় লিবিয়ার একটি শহরে। তারপর তাদের দ্রুতই ইতালি নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানায় দালালেরা। এ জন্য বাকি ৬ লাখ টাকা রেডি রাখতে বলে। সর্বশেষ ২৭ জানুয়ারি রাত ১০টার দিকে ফয়সালের সঙ্গে তার কথা হয়। এ সময় ফয়সাল ও তার বন্ধুরা ভয় পাচ্ছিলেন। ‘আমাদের সাগরের পাড়ে নিয়ে আসছে। মনে হয় নৌকায় ওঠাবে। তোমরা দোয়া কইরো আমাদের জন্য।’ ছেলের কণ্ঠে সর্বশেষ এ কথাই শুনতে পেয়েছেন ফারুক মাতব্বর। ফয়সালের সঙ্গে এভাবে ইতালি যেতে গিয়ে লিবিয়ায় আটক হন নাজমুল। তার ভাই সম্রাট বলেন, ‘শওকত ও রাসেল তার ভাইদের বডি কন্ট্রাক্টে ইতালি নিয়ে যাবে বলেছিলেন।’ বডি কন্ট্রাক্ট মানে কী? এর জবাবে সম্রাট বলেন, ‘লিবিয়া যাওয়ার পথে যতবার ধরা খাবে ততবার ওরা ফেরত আনবে। ওদের বডি যে কোনো উপায়ে ইতালি পৌঁছে দেবে। ওদের ১০০ পারসেন্ট ইতালি নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তাদের। যত টাকাই লাগুক এতে।’

সম্রাট বলেন, ‘তিন মাস আগে ওদের লিবিয়ার শহরে গেছে। তারপর গেম ঘরে রাখছে। আমাদের একটা আত্মবিশ্বাস ছিল যেহেতু ওরা (দালালেরা) ওই দেশে আছে, তাই ওরা হয়তো ওদের ইতালি নিতে পারবে। সর্বশেষ আমার ভাই বলেছিল, গেম ঘর থেকে সাগরপাড়ে নিয়ে যাইতেছে। এক থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে বোটে ওঠাবে। আমরা ওদের ভরসা দিই। কোনো সমস্যা হবে না তাও বলি।’

সম্রাট আরও বলেন, “২৭ জানুয়ারির পর প্রথম দিকে দালালরা এমনও বলেছিল যে তার ভাইয়েরা ইতালি পৌঁছে গেছে বাকি টাকা রেডি রাখতে। শেষে বলেছে, ওরা মাল্টা থেকে ধরা খাইছে। থামছা থামছা জেলখানায় আছে। বৃহস্পতিবার রাতে ওরা নিশ্চিত করে যে, ওরা তিনজন থামছা থামছা জেলখানায় আছে। এরপর ওরা সামিউলের একটা ভয়েস রেকর্ড পাঠায়, যেখানে সামিউল বলছে, ‘আমরা কষ্টে আছি, আমাদের বাঁচাও’।” সম্রাট বলেন, শুক্রবার ওই তিন যুবকের সঙ্গে দেশে পরিবারের লোকদের কথা বলিয়ে দেবে বলেছিল। এদিন তারা পাশের ছোট নাউডুবি গ্রামের দালাল শওকত ও রাসেলের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন ওদের বাড়িতে কেউ নেই। এমনকি গরু ছাগল হাস মুরগি কিছুই নেই। ফারুক মাতব্বর বলেন, ‘বিষয়টি থানার ওসিকে জানিয়েছি। প্রয়োজন হলে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।’ এ বিষয়ে নগরকান্দা থানার ওসি হাবিল হোসেন বলেন, ‘ভুক্তভোগীরা এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ দেননি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর