সোমবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
বিশিষ্টজনদের মন্তব্য

পীর হাবিবুর রহমান ছিলেন সত্যিকারের কলমযোদ্ধা

নিজস্ব প্রতিবেদক

পীর হাবিবুর রহমান ছিলেন সত্যিকারের একজন সাহসী কলমযোদ্ধা। তিনি আজন্ম স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছেন। তাঁর বলিষ্ঠ কলামের মাধ্যমে তিনি লাখ লাখ পাঠকের মনে আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন। তাঁর এই অসময়ে চলে যাওয়া জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। গতকাল ঢাকার বিভিন্ন স্থানে খ্যাতিমান সাংবাদিক ও কলামিস্ট পীর হাবিবুর রহমানের জানাজা ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও বিশিষ্টজনেরা এসব কথা বলেন। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনসহ বিশিষ্টজনেরা তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের স্মৃতিচারণা করেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পীর হাবিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, পীর হাবিব সুনামগঞ্জের হাওর থেকে উঠে এসে ঢাকায় অবস্থান করে সাংবাদিকতা এবং সাহিত্য জগতে অবদান রেখে গেছেন। তাঁর মধ্যে ছিল সাহসিকতা ও সত্যবাদিতা। তিনি সব সময় দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলতেন। এই মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আমরা সাহসী এক কলমযোদ্ধাকে হারালাম। তার এই শূন্যতা কবে পূরণ হবে তা আমি বলতে পারব না। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, পীর হাবিব সাংবাদিকতার পাশাপাশি রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তাঁর বলিষ্ঠ কলামের মাধ্যমে তিনি লাখ লাখ পাঠকের মনে আলাদা করে জায়গা করে নিয়েছেন। তাঁর এই অসময়ে চলে যাওয়া জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। দেশ এক দেশপ্রেমিক, মেধাবী সন্তানকে হারালো। হানিফ মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, ‘আমার বন্ধু ছিলেন পীর হাবিব। ছাত্রজীবন থেকে আমরা রাজনীতির জীবনে দীর্ঘদিন পথ চলেছি একসঙ্গে। দুজন দুই পেশার হলেও মানসিকতায় এক ছিলাম। পীর হাবিব গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে ছিলেন আপসহীন। তার লেখনী ছিল সমাজের অসঙ্গতি, দুর্নীতি, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। তাঁর কলামের জন্য নিজস্ব পাঠক ছিল। তাঁর মতো কলমসৈনিকের এই সময়ে চলে যাওয়া গণতন্ত্রের জন্য অপূরনীয় ক্ষতি। শারীরিক প্রস্থান হলেও মানুষের হৃদয়ে যুগ যুগ বেঁচে থাকবেন পীর হাবিব।’

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘পীর হাবিবুর রহমান যথাযথভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের গণমাধ্যমে তাঁর প্রয়োজন ছিল। অকালেই চলে গেলেন তিনি। তিনি আজন্ম স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছেন। আমরা এখন যে পরিস্থিতিতে আছি, এ সময় পীর হাবিবের মতো দক্ষ সাংবাদিকের দরকার ছিল। গণমাধ্যমে এখন যারা আছেন, তারা যথাযথ দায়িত্ব পালন এবং সঠিক লেখনীর মাধ্যমে পীর হাবিবের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, ‘পীর হাবিবুর রহমান সাহসী স্বপ্নবান মানুষ ছিলেন। তিনি ক্যান্সার থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন শুনে খুব খুশি হয়েছিলাম। হঠাৎ করেই আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।’ শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় বলেন, গণমানুষের পক্ষে কথা বলতেন সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমান। তাঁর মতো সাহসী সাংবাদিক আজ বড় প্রয়োজন। তাঁর মৃত্যুতে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী বলেন, পীর হাবিবুর রহমানের লেখনীতে ধার ছিল। তিনি সত্যের পক্ষে আজীবন লিখেছেন। তাঁর লেখা ছিল বাংলাদেশের পক্ষে, স্বাধীনতার পক্ষে।

জাতীয় প্রেস ক্লাবে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, পীর হাবিবুর রহমান এমন একজন সাংবাদিক ছিলেন, যিনি সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে দ্বিধা করতেন না। তিনি মনেপ্রাণে যা ধারণ করতেন, তা তাঁর লেখায় প্রকাশ করতেন। আমরা এমন একজন সাংবাদিককে আজ হারালাম, যে ক্ষতি কখনই পূরণীয় নয়। মরহুম পীর হাবিবুর রহমানের লেখা অপ্রকাশিত বইগুলো প্রকাশ করার উদ্যোগ নেবেন বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি। 

পীর হাবিবুর রহমানের কর্মময় জীবনের স্মৃতিচারণা করে ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, তিনি সত্যকে সত্য, আর মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে কখনই কুণ্ঠা বোধ করতেন না। শত বাধা-বিঘ্নের মধ্যেও তিনি তাঁর মত প্রকাশে ছিলেন অবিচল।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) জানাজা শেষে এক প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘পীর হাবিবুর রহমান ছিলেন সাংবাদিক জগতের একজন পথিকৃৎ। তিনি ছিলেন একজন কঠিন কলমযোদ্ধা। যুদ্ধ শেষ না করে তিনি আমাদের ছেড়ে এত তাড়াতাড়ি না ফেরার দেশে চলে যাবেন আমরা ভাবতেও পারিনি। পেশাগত দায়িত্বে পীর হাবিব অত্যন্ত সৎ ছিলেন এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করেছেন। গণতন্ত্রের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির জন্য, রাষ্ট্রবিরোধীদের প্রতিরোধ করতে পীর হাবিবুর রহমান ছিলেন সত্যিকারের একজন কলমযোদ্ধা। তিনি আমাদের মাঝে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’ ডিআরইউতে জানাজা শেষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আমরা দুজন দুই অঙ্গনে কাজ করলেও তিনি আমার অত্যন্ত কাছের মানুষ ছিলেন। সব মিলিয়ে একটি বেদনাবিধুর দিন আজ পার করছি। তিনি একজন দেশের খ্যাতিমান সাংবাদিক ও কলাম লেখক ছিলেন। পীর হাবিবুর রহমান এ দেশের জন্য, দেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও গণতন্ত্রের জন্য কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি তাঁর ছিল গভীর শ্রদ্ধা। তাঁর চিরবিদায়ের মধ্য দিয়ে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হলো।’

ডিআরইউতে জানাজার আগে সংগঠনটির পক্ষে কথা বলেন সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু। তিনি বলেন, সাংবাদিকতার মাধ্যমে মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন পীর হাবিবুর রহমান। তিনি অকালে চলে যাওয়ায় সাংবাদিক, সাংবাদিকতা ও দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তিনি বেঁচে থাকবেন তাঁর কর্মে, সাংবাদিকতার মাধ্যমে। প্রিয় কর্মস্থল বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রাঙ্গণে জানাজার আগে পীর হাবিবের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন কথাসাহিত্যিক ও ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক ইমদাদুল হক মিলন। তিনি বলেন, পীর হাবিব ছিলেন একজন সাহসী সাংবাদিক। তিনি কোনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। তিনি সব সময় মাথা উঁচু করে চলতেন। তাঁর মতো একজন সাংবাদিকের অকালমৃত্যু জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। এ সময় পীর হাবিবের ছোট ভাই পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ এমপি ও পুত্র ব্যারিস্টার আহনাফ ফাহমিন অন্তর বক্তব্য রাখেন।

সর্বশেষ খবর