সোমবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

বিদায় গানের পাখি

প্রতিদিন ডেস্ক

বিদায় গানের পাখি

উপমহাদেশের বর্ষীয়ান এবং কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর আর নেই। তিনি গতকাল সকাল ৮টা ১২ মিনিটে ভারতের মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

আমাদের নয়াদিল্লি ও কলকাতা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সংগীতের এ মহাতারকার চিরবিদায়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ভারতসহ  গোটা উপমহাদেশে। তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধীসহ উপমহাদেশের অন্য নেতারা। লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে ভারতে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হচ্ছে। জাতীয় পতাকা রাখা হয়েছে অর্ধনমিত। পশ্চিমবঙ্গে আজ অর্ধদিবস ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আগামী ১৫ দিন রাজ্যজুড়ে লতার গাওয়া গান পরিবেশনার ঘোষণা দিয়েছেন। এ মহাতারকার মৃত্যুর ব্যাপারে ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কভিড-পরবর্তী জটিলতার কারণে মৃত্যু হয়েছে লতা মঙ্গেশকরের। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ১১ জানুয়ারি থেকে ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল লতার। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। এরপর করোনামুক্ত হলেও শনিবার তাঁর শারীরিক অবস্থার ফের অবনতি হয়, ভেন্টিলেশনেও দেওয়া হয়েছিল। শনিবার লতা মঙ্গেশকরকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে এসেছিলেন বোন আশা ভোঁসলে, পৌঁছেছিলেন নাতনি শ্রদ্ধা কাপুর।

কলকাতা প্রতিনিধি জানান, গতকাল সন্ধ্যায় মহারাষ্ট্রের শিবাজী পার্কে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় লতা মঙ্গেশকরের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ দেশটির অন্যান্য নেতা, শিল্পী, সাহিত্যিকসহ বিশিষ্টজনরা অংশ নেন। এর আগে বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মুম্বাইয়ের পেড্ডার রোডে অবস্থিত প্রভু কুঞ্জের বাসভবনে। সেখানে তাঁর ভক্তরা তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। বিদায় জানান, তাদের প্রিয় ‘গানের পাখিকে’। বিকাল ৪টা নাগাদ নিয়ে যাওয়া হয় শিবাজী পার্কে।

কিংবদন্তি শিল্পীর জীবন : সাত দশক ধরে শ্রোতাদের হৃদয় তৃপ্ত করে চলা ভারতীয় সংগীতের এ কিংবদন্তি ১৯২৯ সালে ভারতের ইন্দোরে জন্মেছিলেন। ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ১৯৪২ সালে মারাঠি গান গেয়ে। ১৯৪৬ সালে তিনি প্রথম হিন্দি সিনেমার জন্য গান করেন। বসন্ত জোগলেকরের ‘আপ কি সেবা মে’ ছবিতে তিনি ‘পা লাগু কার জোড়ি’ গানটি গেয়েছিলেন। দুই বছর পর সুরকার গুলাম হায়দার তাঁকে প্রথম বড় সুযোগ দেন। ‘মজবুর’ ছবিতে ‘দিল মেরা তোড়া’ গানটির পর লতাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। তিনি ৩৬টি ভাষায় প্রায় ৩০ হাজার গান করেছেন। এর মধ্যে আছে বাংলাও। ‘প্রেম একবার এসেছিল নীরবে’, ‘আষাঢ় শ্রাবণ মানে না তো মন’, ‘ও মোর ময়না গো’, ‘ও পলাশ ও শিমুল’, ‘আকাশপ্রদীপ জ্বেলে’সহ আরও অনেক বিখ্যাত বাংলা গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। ২০০১ সালে লতা মঙ্গেশকর ভারতের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ভারতরত্ন অর্জন করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার লাভ করেন। 

নেতাদের শোক : লতার মৃত্যুতে দেশটির রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ শোকবাণীতে লিখেছেন- ‘ভারতরত্ন লতাজির কৃতিত্ব অতুলনীয় হয়ে থাকবে।’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন- ‘আমি লতা দিদির কাছ থেকে সব সময় অগাধ স্নেহ পেয়েছি এবং এটাকে আমি আমার সম্মান বলে মনে করি। দয়ালু এবং যত্নশীল দিদি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি আমাদের দেশে একটি শূন্যতা রেখে গেছেন যা পূরণ করা যাবে না। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাঁকে ভারতীয় সংস্কৃতির একজন বলিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে স্মরণ করবে।’ শোক জ্ঞাপন করে কংগ্রেস সংসদ সদস্য রাহুল গান্ধী লিখেছেন- ‘তাঁর সোনালি কণ্ঠ অমর এবং তাঁর ভক্তদের হৃদয়ে এই কণ্ঠ আজীবন প্রতিধ্বনিত হতে থাকবে। তাঁর পরিবার, বন্ধু-বান্ধব এবং ভক্তদের প্রতি আমার সমবেদনা।’ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি জানান, ‘তাঁর প্রয়াণে আমরা রিক্ত হলাম। সুরসম্রাজ্ঞী ও অনন্য প্রতিভাময়ী সর্বজনশ্রদ্ধেয় লতা মঙ্গেশকর দীর্ঘ আট দশক ধরে কণ্ঠের জাদুতে শ্রোতাদের মুগ্ধ করে রেখেছিলেন। হিন্দি, মারাঠি, বাংলাসহ ৩৬টিরও বেশি ভারতীয় ও বিদেশি ভাষায় তাঁর গাওয়া অগণিত ক্লাসিক্যাল, গজল, ভজন, আধুনিক ও সিনেমার গান আজও সমান জনপ্রিয়। বাংলার সংগীতজগতের সঙ্গে তাঁর গভীর যোগ ছিল। আমাদের নক্ষত্রদের সাধনা ও তাঁর প্রতিভা পরস্পরকে সমৃদ্ধ ও অভিষিক্ত করেছিল।’ এ ছাড়া শোক জ্ঞাপন করেছেন বলিউড অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন, অক্ষয় কুমার, বিশিষ্ট সুরকার এ আর রহমান, সংগীতশিল্পী কুমার শানু, হৈমন্তী শুক্লা, সাবেক ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার, মহিলা ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মিতালি রাজ, পরিচালক করণ জোহর, সিনিয়র অভিনেতা ধর্মেন্দ্র দেওল, অভিনেতা ফারহান আখতার, শিল্পা শেট্টি কুন্দ্রা, ক্রিকেটার বিরাট কোহলি, শিখর ধাওয়ান, বীরেন্দ্র শেবাগ, বিসিসিআই সহসভাপতি রাজীব শুক্লাসহ অগণিত ভক্ত।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শোক : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এক শোকবার্তায় তিনি লতা মঙ্গেশকরের আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে তাঁর শোকবার্তায় বলেন, এ সুরসম্রাজ্ঞীর মৃত্যুতে উপমহাদেশের সংগীতাঙ্গনে এক বিশাল শূন্যতার সৃষ্টি হলো। লতা মঙ্গেশকর তাঁর কর্মের মধ্য দিয়ে চিরদিন এ অঞ্চলের মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন। এছাড়া স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ অন্য নেতারাও শোক জ্ঞাপন করেছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর