শনিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

শাবি শিক্ষার্থীদের দাবি শুনলেন মন্ত্রী

দায়িত্ব পালন করে যাবেন উপাচার্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট ও শাবি প্রতিনিধি

শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল রাত ৯টায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রেস ব্রিফিং করেন। এ সময় তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করার জন্য আজ বিকাল ৪টা পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করেন। শিক্ষার্থী ইয়াসির সরকার এ সময় বলেন, আমরা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আমাদের কিছু দাবি ও প্রস্তাব তুলে ধরেছি। শিক্ষামন্ত্রী আমাদের অধিকাংশ দাবি  সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। তবে প্রধান দাবি ‘উপাচার্য পদত্যাগ’-এর ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী আচার্য মহোদয়কে অবগত করবেন। আমরা আশা করছি এ ব্যাপারে পজিটিভ ফলাফল পাব। আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব নাকি স্থগিত করব এ ব্যাপারে কাল (আজ) আমরা জানাব। এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় বৈঠকে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে উত্থাপিত অধিকাংশ দাবি যুক্তিসংগত এবং দেশের শিক্ষার মানোন্নয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তবে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগের বিষয়টি আচার্যের হাতে। শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের জন্য যেসব যুক্তি তুলে ধরেছেন তা আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে অবগত করা হবে। এরপর আচার্য সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, পুলিশি হামলার ঘটনায় শিক্ষামন্ত্রী উপাচার্যকে দুঃখ প্রকাশ করার আহ্বান জানান। এ ছাড়া বিকালে তিনি সিলেট সার্কিট হাউসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন শিক্ষামন্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা সমাধানে সরকার সব ধরনের চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অধিকারের পাশাপাশি দায়িত্বও রয়েছে। শাবির মতো সমস্যা প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই হয়। জাতীয় উদ্যোগের মাধ্যমে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন কমছে। আশা করা যাচ্ছে খুব শিগগিরই খুলে দেওয়া হবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরপর সন্ধ্যায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যান শিক্ষামন্ত্রী। উপাচার্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উপাচার্যের পদত্যাগের ব্যাপারে শিক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্য আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন। যেহেতু উপাচার্য নিয়োগ ও অপসারণের ব্যাপারটি মহামান্য আচার্য দেখেন, তাই আমরা শিক্ষার্থীদের বক্তব্য আচার্যের কাছে তুলে ধরব। উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে আচার্য উনার বিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত  নেবেন।’ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার পর শিক্ষামন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন-১ এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। প্রায় ২৫ দিন পর উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ নিজ বাসভবন থেকে বের হয়ে উপাচার্য কার্যালয়ে উপস্থিত হন ও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে এ আলোচনায় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক আমিনা পারভীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, পুলিশি হামলার ঘটনায় শিক্ষামন্ত্রী উপাচার্যকে দুঃখ প্রকাশ করার আহ্বান জানান। ওই ঘটনায় পুলিশকে কে গুলি চালাতে বলেছে তা তদন্তের বিষয়। মহামান্য আচার্যের সিদ্ধান্ত আসার আগ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় তার স্বাভাবিক নিয়মে চলবে। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে উপমন্ত্রী ছাড়াও ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আফতাব উদ্দিন প্রামাণিক, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব ফেরদৌস জামান। এদিকে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে প্রতিনিধি দলের বৈঠক প্রসঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র মোহাইমিনুল বাশার রাজ বলেন, উপাচার্যের পদত্যাগ, ক্লাস-পরীক্ষা চালু, শিক্ষার্থীদের ওপর আরোপিত হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার, আন্দোলনকারীদের আর্থিক লেনদেনের বন্ধ অ্যাকাউন্ট চালু, পুলিশি হামলায় আহত সজল কুু ুকে এককালীন আর্থিক সহযোগিতা, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে বাজেট বৃদ্ধি, পরীক্ষা পদ্ধতিতে কোডিং সিস্টেম কার্যকর, শিক্ষক নিয়োগে পিএইচডি এবং ডেমো ক্লাসের ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন, অধ্যাপক জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক ইয়াসমিন হককে ইমেরিটাস প্রফেসর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী গভীর মনোযোগ দিয়ে আমাদের দাবিগুলো শুনেছেন। এদিকে গত বৃহস্পতিবার নতুন প্রক্টর হিসেবে নিয়োগ পান ইশরাত ইবনে ইসমাইল। নবনিযুক্ত এ প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থী ইয়াসির সরকার বলেন, ইশরাত ইবনে ইসমাইল সম্প্রতি এক শিক্ষার্থীর যৌন নিপীড়নের ঘটনায় উপস্থিত থেকেও এক ব্যক্তিকে বাঁচাতে গিয়ে সেই যৌন নিপীড়নের ঘটনা অস্বীকার করার অভিযোগ রয়েছে। আমরা বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রীকে অবহিত করেছি। শিক্ষামন্ত্রী বিষয়টি দ্রুত দেখবেন বলেছেন।

সর্বশেষ খবর