শুক্রবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

অনুমোদনে সিটির আইনগত ভিত্তি নেই

-------- মো. শহিদুল হাসান

অনুমোদনে সিটির আইনগত ভিত্তি নেই

রাজধানীতে ভবন নির্মাণে রাজউকের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের অনুমোদন নেওয়া প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মো. শহিদুল হাসান বলেছেন, এর আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। রাজধানীতে তো ভবনের               প্ল্যান পাস, অনুমোদনসহ যাবতীয় বিষয় দেখতে পৃথক কর্তৃপক্ষই রয়েছেন। এর পরে সিটি করপোরেশনকে যুক্ত করলে অহেতুক নাগরিক হয়রানি ও কাজে দীর্ঘসূত্রতা বাড়বে। যদি তাদের অনুমোদনের দায়িত্ব দিতেই হয়, প্রথমেই কী উদ্দেশ্যে এটা করা হবে সেই ব্যাখ্যাসহ সংসদে আইন সংশোধন করতে হবে। গতকাল তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জেলা পর্যায়ে ভবনের অনুমতি দেওয়ার দায়িত্ব পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদকে দিলে সমস্যা নেই। কারণ সেখানে এ কাজের জন্য রাজউকের মতো কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। কিন্তু যেখানে ভবনের অনুমতি দেওয়ার জন্য রাজউক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মতো বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান আছে সেখানে সিটি করপোরেশনের অনুমতি দেওয়ার আইনগত কোনো বৈধতা নেই। দ্বিতীয়ত, একটি ভবন তৈরির জন্য রাজউক যে অনুমোদন দিচ্ছে সেখানে সিটি করপোরেশনের কোনো ইউটিলিটি সরবরাহ করতে হচ্ছে না। ওয়াসা বা বিদ্যুৎ বিভাগ বলতে পারবে তারা ওই ভবনে পানি বা বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবে কি পারবে না। এজন্য ভবন তৈরির ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার বিষয় আছে। ভবনটি নির্মাণে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে কি না তা পরিবেশ বিভাগ দেখে ক্লিয়ারেন্স দিতে পারে। সিটি করপোরেশন কী বিষয়ে ক্লিয়ারেন্স দেবে? সিটি করপোরেশনের তো ওই ভবনের জন্য আলাদা রাস্তা বানাতে হবে না যে তার কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে। হয়রানির জন্য একটা পথ খোলা হচ্ছে। এতে নাগরিক হয়রানি বাড়বে, ভবন নির্মাণের অনুমোদন প্রক্রিয়ায় সময় ক্ষেপণ হবে, যার কোনো যুক্তি নেই। কেন এমনটা করা হবে এর কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়নি। এলজিইডির সাবেক এই প্রধান প্রকৌশলী বলেন, বলা হচ্ছে খাল ও জলাশয় ভরাট করে যত্রতত্র ভবন গড়ে ওঠায় রাজধানীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এজন্য সিটি করপোরেশনকে এমন দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ভবন নির্মাণের কারণে জলাবদ্ধতা হচ্ছে কি না তা দেখার দায়িত্ব তো প্ল্যান পাসে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাকে দেওয়াই আছে। মূলত জলাবদ্ধতা হচ্ছে সিটি করপোরেশন রাস্তার পাশে ড্রেন পরিষ্কার না করার কারণে। ঢাকার ড্রেনেজব্যবস্থা দেখভালের দায়িত্ব ওয়াসা ও সিটি করপোরেশনের। কীভাবে ড্রেনেজব্যবস্থাকে আবর্জনামুক্ত করা যায় তাদের সে চিন্তা করতে হবে। সিটি করপোরেশন ভবনের ক্লিয়ারেন্স দিলেই কি ভবন নির্মাণকারী ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ করে দেবে? যে সংস্থার ওপর যে দায়িত্ব তা তারা ঠিকভাবে পালন করছে কি না তা জবাবদিহির মধ্যে আনতে পারলে জলাবদ্ধতা তৈরি হবে না।

তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনকে এ দায়িত্ব দিলে তারা পারবে কি না, সেই জনবল তাদের আছে কি না তা বড় কথা নয়। মূল বিষয় হলো সিটি করপোরেশনের তো এখানে কোনো ভূমিকাই নেই। ভবন নির্মাণে আইনগত বিষয়গুলো দেখার জন্য রাজউককে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। টাউন প্ল্যানিং থেকে শুরু করে ভবন তৈরির জন্য পর্যাপ্ত জায়গা আছে কি না, বের হওয়ার রাস্তা আছে কি না সবকিছু দেখে প্ল্যান পাস করার দায়িত্ব তাদের দেওয়া আছে। সিটি করপোরেশন এখানে করবেটা কী শুধু হয়রানি করা ছাড়া?

সর্বশেষ খবর