বুধবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সংলাপ মার্চে

এজেন্ডায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার, র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা, জিএসপি, মেরিটাইম সহায়তা ও ঢাকা-নিউইয়র্ক সরাসরি ফ্লাইট

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

দুই বছর স্থগিত থাকার পর আসছে মার্চে ঢাকায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে অংশীদারি সংলাপ অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে, সেখানে গুরুত্ব পাচ্ছে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার, র‌্যাবের সিনিয়র কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, জিএসপি স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়া ও মেরিটাইম সহায়তার মতো চলমান ইস্যুগুলো।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১২ সালে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের ঢাকা সফরের সময় দুই দেশের মধ্যে প্রতি বছর অংশীদারি সংলাপ অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী ২০১৯ সাল পর্যন্ত নিয়মিত এ সংলাপটি চলমান ছিল। কভিডের কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে সংলাপ হয়নি। করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় এবার আবার এ সংলাপ অনুষ্ঠানের বিষয়ে দুটি দেশই সম্মত হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের অংশীদারি সংলাপ এমন একটি প্রেক্ষাপটে হতে যাচ্ছে, যার কয়েক মাস আগে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে র‌্যাবের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন প্রশাসন। সে কারণে এবারের এজেন্ডায় নিয়মিত ইস্যুর পাশাপাশি ওপরের দিকে উঠে এসেছে মানবাধিকার ও র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি। এ ছাড়া আলোচনায় ঠাঁই পেতে পারে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার দন্ডপ্রাপ্ত আসামি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত দেওয়া, মানব পাচার ও মাদক নিয়ন্ত্রণে সহায়তা, ঢাকা-নিউইয়র্ক সরাসরি ফ্লাইট চালু, কভিড-১৯ মোকাবিলায় ভ্যাকসিন সহায়তা, সমুদ্রোপকূলীয় এলাকায় বাঁধ নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক সম্ভাব্যতা যাচাই, জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে সহায়তা, মেরিটাইম সহায়তা, অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সুবিধা গ্রহণ, শান্তিরক্ষা মিশনে সহায়তা, সন্ত্রাসবাদবিরোধিতা, দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মহড়া এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার মতো ইস্যুগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট কোয়াডে বাংলাদেশের যোগদানের বিষয়েও অংশীদারি সংলাপে আলোচনা হতে পারে।

সরকারের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্বিপক্ষীয় এ সংলাপ অনুষ্ঠানের বিষয়ে ওয়াশিংটন এরই মধ্যে সম্মতি দিয়েছে। মার্চে ঢাকায় এবারের সংলাপ অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। এ সংলাপে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন দেশটির পররাষ্ট্র দফতরের রাজনৈতিক বিষয়ক আন্ডারসেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ইনপুট চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান,

অনুষ্ঠেয় সংলাপে তাঁরা জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র নতুন জিএসপি স্কিম চালু করতে যাচ্ছে, সে কারণে তাঁরা মনে করছেন পরিবর্তিত বাণিজ্য পরিস্থিতিতে নতুন জিএসপি স্কিমে বাংলাদেশকে সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় ইতিবাচক ফল পাওয়া যেতে পারে। তবে নতুন স্কিম পেতে গেলে বাংলাদেশকে আরও বেশি শর্তের মুখে পড়তে হতে পারে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাঁরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে শ্রম খাতে কমপ্লায়েন্স ছাড়াও মানবাধিকার, মেধাস্বত্বের মতো ইস্যুগুলোয় আরও জোর দেবে মার্কিন প্রশাসন। কর্মকর্তারা জানান, রানা প্লাজা ধসের পর ২০১৩ সালে ১৬টি শর্ত দিয়ে বাংলাদেশকে দেওয়া প্রচলিত জিএসপি সুবিধা স্থগিত করেছিল যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। কারখানা সংস্কার ও শ্রম খাতের কমপ্লায়েন্সের সঙ্গে সম্পৃক্ত এ ১৬ শর্ত পূরণ করা হলেও পরে আর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়নি। সংশ্লিষ্টরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা স্থগিত থাকায় দেশটির উন্নয়ন তহবিল থেকে আর্থিক সহায়তা পাওয়ার সুযোগটি হাতছাড়া হয়ে গেছে। ইউএস ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশনের (ডিএফসি) ৬ হাজার কোটি ডলারের তহবিল রয়েছে, যার আওতায় উন্নয়নশীল দেশে বেসরকারি খাতের জ্বালানি, স্বাস্থ্যসেবা, অত্যাবশ্যক অবকাঠামো ও প্রযুক্তিভিত্তিক প্রকল্প উন্নয়নে ঋণসুবিধা দেওয়া হয়। জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ওই তহবিল থেকে আর্থিক সুবিধা পাওয়ার চেষ্টাও করবে বাংলাদেশ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ৯০০ কোটি ডলারের বেশি। বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ ও রপ্তানি বাণিজ্যের দিক দিয়ে অন্যতম বড় অংশীদার প্রভাবশালী এ দেশটি। ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের ফলে ভবিষ্যতে মার্কিন বাজারে আরও বেশি করের মুখোমুখি হতে পারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক। সে ক্ষেত্রে দেশটির বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের দ্রুত প্রবৃদ্ধি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আলোচনার ইনপুট চূড়ান্ত করছে।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে আলোচনা ও মামলার প্রস্তুতি বাংলাদেশের : র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য বাংলাদেশের হয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা এবং আদালতে মামলা লড়তে প্রতিনিধি নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ সপ্তাহে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। গতকাল বিকালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে এ তথ্য জানান।

শাহরিয়ার আলম বলেন, র?্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে আমাদের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি আইনি প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। আমাদের হয়ে কথা বলার জন্য, মামলা লড়ার জন্য প্রতিনিধি নির্বাচিত করার বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে। চূড়ান্তভাবে আইনি পদক্ষেপের দিকে যাব কি না, সেটা এখনই বলব না। তবে আমরা তিনটি আইনি পরামর্শক সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছি। সেখান থেকে সবচেয়ে ভালো পরামর্শটি নিয়ে এ সপ্তাহে একটা সিদ্ধান্তে নেওয়া হবে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে তৃতীয় দেশের মধ্যস্থতার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটা মোকাবিলার যথেষ্ট সামর্থ্য বাংলাদেশের আছে। সেটা আইনানুগ হোক কিংবা কূটনৈতিক উদ্যোগ। খুব পরিষ্কারভাবেই বলছি, এখানে আমরা কোনো রাষ্ট্রকে যুক্ত করতে চাই না।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান, এপ্রিল ও মে মাসে সচিব ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক আছে। এসব আলোচনা দুই পক্ষকে একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত হতে সহায়তা করবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর