বৃহস্পতিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
নীলক্ষেতে আগুন

ক্রেতারা এসে ফিরে যাচ্ছেন খালি হাতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ক্রেতারা এসে ফিরে যাচ্ছেন খালি হাতে

নীলক্ষেতে পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপ থেকে শেষ সম্বল উদ্ধারের চেষ্টায় ব্যবসায়ীরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ছাই ঘেঁটে শেষ সম্বল খুঁজছিলেন নীলক্ষেতের পুড়ে যাওয়া মার্কেটের বই ব্যবসায়ীরা। ক্ষতিগ্রস্ত এসব ব্যবসায়ীর অনেকে করোনার ঢেউ কাটিয়ে ব্যাংক লোন, ধার-দেনা করে বইয়ের দোকানগুলোতে পুঁজি খাটিয়েছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে চোখের সামনেই আগুনে পুড়েছে তাদের দোকান ও বই। করোনা প্রভাবের পর ঘুরে দাঁড়ানো তো দূরের কথা, তাদের এখন পথে বসার উপক্রম। সব হারিয়ে ব্যবসায়ীরা গতকাল পুড়ে যাওয়া দোকানের পুড়ে যাওয়া বই বের করছিলেন। বই কিনতে এসে না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যেতে দেখা গেছে বইপ্রেমী পাঠকদের। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, তাদের অর্ধশত দোকান পুড়েছে। এর বাইরে ফুটপাথে থাকাও অন্তত চারটি বইয়ের দোকান পুড়েছে। প্রসঙ্গত, রাজধানীর নীলক্ষেত দেশের সবচেয়ে বড় বইয়ের মার্কেট। এমন কোনো বই নেই যে, এখানে পাওয়া যায় না। গত মঙ্গলবার রাত ৮টার কিছু আগে আগুন লাগে ওই মার্কেটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিটের ঘণ্টা দুয়েকের চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। একটি দোকান থেকে লাগা আগুন মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের দোকানগুলোতে। এতে কেউ হতাহত না হলেও আগুনে পুড়ে ও পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে অর্ধশতাধিক দোকানের প্রায় ১০ কোটি টাকার বই।

বই ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা বলছেন, হযরত শাহজালাল বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড মার্কেটের ‘চৌধুরী ফ্রেন্ডস বুক কর্নার’ দোকানের দোতলার গোডাউনে সেলফে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ চলছিল। এ সময় ওয়েল্ডিংয়ের পুলকি প্লাস্টিকের প্যাকেটের ওপর পড়ে আগুন ধরে যায়। আগুনে হযরত শাহজালাল মার্কেটের ২৭টি দোকান পুরোপুরি পুড়ে গেছে। পাশের সিটি করপোরেশন মার্কেটের তিনটি, বাবুপুরা মার্কেটের ১০টি, ইসলামীয়া সুপার মার্কেটের ১৫টি দোকানের বই পুড়ে ও পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের হিসেবে ৫৫টি দোকানের প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে তারা তদন্ত কমিটি গঠন করবেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে ঝালাইয়ের কাজ করায় চৌধুরী ফ্রেন্ডস বুক কর্নার কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিসসহ জবাবদিহির আওতায় আনা হবে।

গতকাল সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, ভিড় লেগে থাকা বইয়ের মার্কেটটি একদমই ক্রেতা শূন্য। মঙ্গলবার রাতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় বুধবারও পুরো মার্কেটে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করতে দেখা গেছে।

 মার্কেটের ভিতরে ছোট ছোট গলিতে পানি, ছাই ও পোড়া বইয়ের স্তূপ ভাসছিল। দোকানিরা বেলচা দিয়ে সেগুলো সরাচ্ছিলেন। এলাকাজুড়ে পোড়া বইয়ের গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছিল।

এ ঘটনায় গতকাল রাত পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল জিল্লুর বলেন, তদন্ত কমিটি শিগগিরই করা হবে। তবে পুরো মার্কেটটি অপরিকল্পিত। এখানে কোনো অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রই আমরা পাইনি। বিল্ডিং কোডের কিছুই মানেনি মার্কেট কর্তৃপক্ষ। তাই এ মার্কেটে আগুন লাগার ঝুঁকি ফের থেকেই যায়।

তবে ক্ষতিগ্রস্ত ইসলামীয়া মার্কেট কমিটির পরিচালক মো. গিয়াসউদ্দিন মিয়া বলেন, বইয়ের মার্কেট ভেঙে ছয় তলা বিশিষ্ট ভবন করার অনুমতি মিলেছে গত ঈদের পরপরই। রাজউক থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর আমরা কমিটির লোকজন কয়েকবার বসেছি, কীভাবে মার্কেট ভাঙা যায় এসব নিয়ে। বহুতল ভবন করার প্রস্তুতি নেওয়ার মাঝেই এ ঘটনা ঘটছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর