শুক্রবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
নিরাপদ আশ্রয়ের আকুতি

পোল্যান্ডে নেওয়ার চেষ্টা বাংলাদেশিদের

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েছেন সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশিরা। এতদিন ধরে যুদ্ধ হবে না বলে মনে করা এই বাংলাদেশিরা এখন পড়েছেন অনিশ্চয়তার মধ্যে। আতঙ্কিত বাংলাদেশিরা ইউক্রেন থেকে বের হয়ে আসার জন্য আকুতি জানিয়েছেন। তাদেরকে ইউক্রেনের পার্শ¦বর্তী দেশ পোল্যান্ডে স্থানান্তরের চেষ্টার কথা জানানো হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে। তারপরও অনিশ্চয়তা কাটছে না বিপদগ্রস্ত এসব বাংলাদেশির।

জানা যায়, ইউক্রেনে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস নেই। পোল্যান্ডে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে সাধারণত তাদের দেখভাল করা হয়ে থাকে। তবে ইউক্রেনে ঠিক কত সংখ্যক বাংলাদেশি থাকেন তার কোনো হিসাবও নেই। দূতাবাসের কর্মকর্তাদের ধারণা, দেড় থেকে ২ হাজার বাংলাদেশি ইউক্রেনে অবস্থান করছেন। কিন্তু প্রবাসীদের ধারণা, ইউক্রেনে বৈধভাবে বসবাস করাদের চেয়ে শরণার্থী ও কাগজপত্রবিহীন বাংলাদেশির সংখ্যা অনেক বেশি। সেই হিসেবে এই সংখ্যা ৪ থেকে ৫ হাজার হতে পারে। ৯ বছর ধরে ইউক্রেনে বসবাসরত গাজীপুরের জয়দেবপুর উপজেলার মাহবুব পারভেজ বার্তা সংস্থা বিডিনিউজকে বলেছেন, মানুষজন প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হচ্ছে না। ওইসব এলাকায় দোকানপাট খোলা আছে। কিন্তু কোথাও মানুষজনের উপস্থিতি সেভাবে চোখে পড়ছে না। ইউএস ডলার ও ইউরোর বিপরীতে হ্রিভনিয়ার দাম পড়ে যাওয়ায় ইউক্রেনে মুদ্রাস্ফীতি এখন প্রবল। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে উত্তেজনার ফলে গত সপ্তাহে নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে শাকসবজির দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়েছে। কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে থমথমে ও ভুতুড়ে অবস্থা বিরাজ করছে। তিনি বলেন, আমাদের ভয় এখানে থাকা অনিবন্ধিত বাংলাদেশি অভিবাসী ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে। ইউক্রেনে বাংলাদেশের স্থায়ী কোনো দূতাবাস নেই। তাই যে কোনো প্রয়োজনে আমাদেরকে পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশতে বাংলাদেশের দূতাবাসে যোগাযোগ করতে হয়। এ পরিস্থিতিতে সেটা বেশ কঠিন একটি ব্যাপার। বিশেষ করে ইউক্রেনে থাকা বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও অবৈধ অভিবাসীরা সত্যিকার অর্থেই বিপাকে পড়েছেন। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোতে পাড়ি জমানোর আশায় অনেকে ইউক্রেনে পা রেখেছিলেন। অবৈধভাবে পোল্যান্ড কিংবা লিথুয়ানিয়াতে প্রবেশের সময় তাদের অনেকে এখানকার পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন। ইউক্রেনের বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পে হাজার দুয়েক বাংলাদেশি রয়েছেন বলে শুনেছি।  দুই মাস আগে শিক্ষার্থী ভিসায় ইউক্রেনে যাওয়া সিলেটের রুমন বলেছেন, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বাংলাদেশে পরিবার থেকে তাকে বারবার ফোন করে ফিরে যেতে বলা হচ্ছে। পোল্যান্ড দূতাবাস থেকে আমাদের দেশে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে আমরা কীভাবে দেশে ফিরব? শহর ছাড়ার জন্য সকালে আমি প্রথমে অনলাইনে টিকিট কেনার চেষ্টা করি। ব্যর্থ হয়ে সারা দিনে বেশ কয়েকবার বাস স্টেশন এবং রেলস্টেশনে ছোটছুটি করেছি। কিন্তু কোথাও টিকিট পাইনি। আমি যেভাবে হোক একটি নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে চাই। আপনাদের মাধ্যমে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন করছি, তিনি যেন আমাদের নিরাপত্তার একটা ব্যবস্থা করেন। আপাতত তিনি যেন আমাদের নিরাপদ কোথাও সরিয়ে নেওয়ার কথা বলেন। সেটা হতে পারে পোল্যান্ড, হতে পারে রোমানিয়া বা অন্য কোনো নিরাপদ জায়গা। নিজ শহরের অবস্থা জানিয়ে রুমন বলেন, মানুষজনের মধ্যে চাপা উত্তেজনা। প্রচুর মানুষ নানাভাবে শহর ছাড়ার চেষ্টা করছেন। রাস্তায় ইউক্রেনের সেনাদের চেকপোস্ট আমি দেখেছি। সম্ভবত শহরে যেন বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে না পড়ে, তাই এই ব্যবস্থা। কারণ, এই শহরে রুশপন্থিরাই বেশি। তবে চেকপোস্টের সেনারা এমনিতে কাউকে কিছু বলছে না বা বাধা দিচ্ছে না। অর্থ তোলার জন্য লোকজন এটিএম বুথের সামনে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। চার পাঁচ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর তবেই টাকা তোলা যাচ্ছে। এক একটা লাইন আধা কিলোমিটারের বেশি লম্বা। যদিও আমি টাকা তুলতে যাইনি। তবে শুনেছি, মেশিনে টাকা আছে এবং সবাই প্রয়োজনমতো তুলতে পারছে। এটিএমে টাকা ফুরিয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে রিফান্ড করা হচ্ছে। পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা ম্যাডাম (সুলতানা লায়লা হোসেন) আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। গতকালও জুমে আমাদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। ঢাকায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, বাংলাদেশ ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপদে দেশে আনার জন্য সরকার সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। পোল্যান্ড থেকে আমাদের দূতাবাসের কর্মকর্তারা ইউক্রেনে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একটি ফেসবুক গ্রুপ খোলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৫০ জন এতে যুক্ত হয়েছেন। আমাদের ধারণা সেখানে ৫০০ জনের মতো বাংলাদেশি নাগরিক থাকতে পারেন। সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শাহরিয়ার আলম বলেন, আমরা পোল্যান্ডের পররাষ্ট্র দফতরের সঙ্গে কথা বলেছি। ইউক্রেনে থাকা আমাদের ৫০০ জন নাগরিককে ভিসা দিয়ে পোল্যান্ডে নেওয়ার ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেছি। তারা আপাতত ১৫ দিনের ভিসা দিতে সম্মত হয়েছে। এ সময়ে তাদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করবে আমাদের দূতাবাস। পোল্যান্ডে আমাদের দূতাবাসকে এ কাজে সহায়তা করার জন্য ইতালি ও জার্মানিতে আমাদের অবস্থিত দূতাবাস থেকে কিছু কর্মকর্তাকে যোগ দিতে বলা হয়েছে। ইউক্রেনে থাকা কোনো বাংলাদেশি নাগরিক যাতে অসুবিধায় না পড়ে, সরকার সে জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর