শুক্রবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

শক্তি প্রয়োগে সীমানা পরিবর্তন আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন

জিন্নাতুন নূর

শক্তি প্রয়োগে সীমানা পরিবর্তন আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন

এম হুমায়ুন কবির

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেছেন,  ‘নীতিগত অবস্থানের দিক থেকে আমি বলব জোর খাটিয়ে কোনো দেশের আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করা অগ্রহণযোগ্য কাজ। আর এ কাজ থেকে বিরত থাকা সব দেশেরই উচিত। আজকাল বিশ্বে একটি বিষয় স্বীকৃত। তা হচ্ছে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে কোনো দেশের সীমানা পরিবর্তন আন্তর্জাতিক আইনের পরিষ্কার লঙ্ঘন।’ গতকাল রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে শুরু হওয়া যুদ্ধ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে হুমায়ুন কবির এসব কথা বলেন।

সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার সামরিক অভিযান অনেক দিনের ধারাবাহিক ঘটনার নেতিবাচক একটি ঘটনাপ্রবাহ। ২০১৪ সালে যখন ইউক্রেনের রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়, তখনই কিন্তু দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক বিচ্ছিন্নতাবাদী অবস্থানে চলে যায়। সেই সঙ্গে ইউক্রেন সরকার অঞ্চল দুটির নিয়ন্ত্রণ সেখান থেকে হারিয়ে ফেলে। ক্রিমিয়াও দখল করে নেয় রাশিয়া। এটা বলা যেতে পারে যে আন্তর্জাতিক আইন বা আন্তর্জাতিক প্রত্যাশা যা-ই হোক, সে অনুযায়ী এটি কিন্তু অগ্রহণযোগ্য কাজ। সে ক্ষেত্রে আমি মনে করি ২০১৪ সাল থেকেই ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার যে অবস্থান, সে জায়গায় তারা আন্তর্জাতিক আইন ও গ্রহণযোগ্যতার বাইরে ভূমিকা পালন করে আসছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যেটা হয়েছে, এটা নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটোর যে দেশগুলো আছে তাদের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাশিয়া এ ক্ষেত্রে যুক্তি দেখাচ্ছে, তাদের ভয় হচ্ছে ইউক্রেন একপর্যায়ে ন্যাটোয় যোগ দিতে পারে। রাশিয়া তার নিরাপত্তাহীনতার কারণেই, আমার ধারণা, একটি আগ্রাসী মনোভাব এখানে প্রদর্শন করছে। আমার ধারণা, দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক এ দুটি অঞ্চলে স্বাধীনতা ঘোষণা করানো এবং তাদের আহ্বানে রাশিয়ার সৈন্য প্রেরণ ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পরিষ্কার আঘাত। এটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য কাজ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। আর সে কারণেই এত দিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও ইউরোপের বিভিন্ন নেতা রাশিয়াকে ইউক্রেনের অভ্যন্তরে না যাওয়ার জন্য সতর্ক করছিলেন। যদি যায় তাহলে তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধে যাওয়ার মতো সতর্কতা দিয়ে আসছিলেন। এর আলামতও এখন দেখা যাচ্ছে। ধারণা করছি রাশিয়ার ওপর পাশ্চাত্য দেশগুলোর অর্থনৈতিক অবরোধ ধারাবাহিকভাবে আসবে। তবে এ যুদ্ধ বড় যুদ্ধ বা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হবে কি না তা এখনই বলা মুশকিল। রাশিয়া যদি দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক এ দুই স্থানে সীমাবদ্ধ থাকে সে ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর অবরোধ দিলেও যুদ্ধ আর সম্প্রসারিত হবে না। এ এলাকাগুলো কিন্তু ২০১৪ সাল থেকেই বাস্তবিক অর্থে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের বাইরে আছে। সে ক্ষেত্রে এসব জায়গায় রাশিয়া নতুন করে সৈন্য পাঠালেও সেসব স্থান কিন্তু আগে থেকেই রাশিয়ার সমর্থিত সৈন্যরাই নিয়ন্ত্রণ করছে। পাশ্চাত্য দেশগুলো রাশিয়ার ওপর অবরোধ আপাতত দিলেও যুদ্ধের যদি বিস্তৃতি ঘটে তাহলে তারা আরও কঠোর অবস্থানে যেতে পারে। এ অবরোধের ফলে রাশিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, যে কোনো অস্থিতিশীলতাই আন্তর্জাতিক তেলের বাজারের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে এবং তেলের মূল্য বৃদ্ধি পায়। আর তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের মতো যে দেশগুলো আমদানিনির্ভর, তারা অর্থনৈতিকভাবে চাপের মুখে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা আছে। এ ধরনের উত্তেজনা সার্বিকভাবেই বলা চলে বিশ্বের জন্য উদ্বেগের কারণ। বাংলাদেশের দিক থেকেও আমাদের খানিকটা উদ্বেগ আছে। বাংলাদেশ সরকার বলছে তারা ঘটনাপ্রবাহ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। আমাদের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীও কয়েক দিন আগে বলেছেন, ইউক্রেনে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা যদি দেশে ফিরে আসতে চান তাহলে সরকার তাদের সাহায্য করবে। সেদিক থেকে আমাদের সরকার এ বিষয়টির ওপর কড়া নজর রেখেছে এবং বাংলাদেশিদের যে কোনোভাবে সাহায্য করার জন্য সরকার প্রস্তুত আছে এমন ইঙ্গিত আমরা পাচ্ছি। তবে বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার ওপর যদি অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপিত হয়, তাহলে এর একটি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তেলের বাজারে পড়তে পারে। এ ছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বা পাশ্চাত্য জগৎ রাশিয়ার আচরণকে গণতান্ত্রিক কাঠামো এবং ‘এক কর্তৃত্ববাদী’ কাঠামোর মধ্যে একটি প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করবে। এটি করলে অনেক বেশি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুযায়ী যারা যথাযথভাবে চলছে সে দেশগুলোর ওপর, আমার ধারণা, নৈতিক চাপ বৃদ্ধি পাবে। আর যে দেশগুলোয় গণতান্ত্রিক চর্চার ঘাটতি আছে সে দেশগুলোর ওপর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইউক্রেনে যে বাংলাদেশিরা অবস্থান করছেন কোনো কারণে তাদের যদি এ অস্থিতিশীলতার মধ্যে দেশে ফিরে আসতে হয়, তাহলে তাদের পরিবারগুলোরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কূটনৈতিকভাবে রাশিয়া, পাশ্চাত্য দেশ ও চীন যদি ডামাডোলে যোগ দেয় তাহলে আন্তর্জাতিক বিভাজনের আশঙ্কা রয়েছে। এ ধরনের বিভাজিত পৃথিবী হলে সবার সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পর্ক রেখে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার যে চিন্তা, তা বাংলাদেশকে নতুন করে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। বিষয়গুলো বাংলাদেশের জন্য চিন্তার কারণ হতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর