শুক্রবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

বিদেশিরা সরকার পরিবর্তন করতে পারে না

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি

বিদেশিরা সরকার পরিবর্তন করতে পারে না

মার্কিন প্রশাসনসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানা অপপ্রচার প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন নিউইয়র্কে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে বললেন, ‘আমাদের দেশের কিছু লোক আছেন যারা অপপ্রচার করেন এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবরোধের জন্য অনুরোধ করেন। তারা মনে করেন অবরোধ আরোপ করলেই বাংলাদেশের সরকার বদল হয়ে যাবে। অথচ তারা জানেন না সরকার বদল বিদেশিরা করতে পারেন না। সরকার বদল করতে পারে বাংলাদেশের জনগণ। বাংলাদেশের জনগণ খুব সুখে আছে। তাই ওসব অপপ্রচারে কোনো ফায়দা আসবে না।’ জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক এবং চলমান পরিস্থিতির আলোকে বাংলাদেশের মতামত জাতিসংঘে উপস্থাপনের অভিপ্রায়ে এক সপ্তাহের সফরে ২৩ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কে এসেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। প্যারিস থেকে জেএফকে এয়ারপোর্টে অবতরণের পরই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সে সময় র‌্যাবের সাত কর্মকর্তাকে নিষিদ্ধ এবং আরও কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্যাঙ্কশনের জন্য মহলবিশেষের দেনদরবার প্রসঙ্গে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন,  ‘আমরা সবাই তো জানি যে আমেরিকা হচ্ছে স্যাঙ্কশনের দেশ। প্রতিটি দেশেই তারা কিছু না কিছু স্যাঙ্কশন দিয়ে আসছে। ভারতকেও দিয়েছিল। মোদিকেও (ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি) যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করেছিল। সব কিছুই সাময়িক। আমি আশা করছি, বাংলাদেশের র‌্যাব সম্পর্কে যখন তারা সত্য কথা জানবে, ওই সাতজনের বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাও তারা সরিয়ে নেবে। নিজেরাই নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করবে।’  এয়ারপোর্টে ড. মোমেন ও তার স্ত্রী সেলিনা মোমেনকে স্বাগত জানান জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা, ওয়াশিংটন থেকে আসা রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সেক্রেটারি আবদুল কাদের মিয়া, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সভাপতি মোর্শেদা জামান, আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা ডা. মাসুদুল হাসান, শরাফ সরকার, কৃষিবিদ আশরাফুজ্জামান, আবুল হাসিব মামুন, সাইকুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা ইফজাল চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা দরুদ মিয়া রনেল প্রমুখ।

ড. মোমেন বলেন, ‘দুটি ইভেন্ট ছিল ইউরোপে। একটি জার্মানির মিউনিখে। সেখানে আমি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছি। জলবায়ু পরিবর্তন ও জননিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এবারের সব কিছুতেই রাশিয়া ও ইউক্রেন পরিস্থিতি প্রাধান্য পেয়েছে। সবাই ভীতির মধ্যে কথা বলেছেন। মনে হচ্ছে যুদ্ধে জড়িয়ে যাচ্ছে গোটা বিশ্ব। এমন অবস্থায় আমি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করেছি, জলবায়ুর ভয়ংকর ছোবলে প্রতিবছর বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। তাদের বসবাসের কোনো অবলম্বন নেই। নিরাপত্তাহীনতা গ্রাস করছে। ব্যক্ত করেছি উদ্বাস্তু হয়ে পড়ার ঘটনাবলি। ৬৫ লাখ মানুষ ইতোমধ্যে ভিটেমাটি হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন। তাদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করছি। কিন্তু বাংলাদেশের সেই সক্ষমতা নেই। প্রযুক্তিগত সামর্থ্যও নেই। অথচ যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সে জন্য বাংলাদেশ দায়ী নয়। অর্থাৎ বাংলাদেশের মানুষ পরিস্থিতির অসহায় শিকার। তাই জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ইতিপূর্বেকার অঙ্গীকার অনুযায়ী তহবিল সরবরাহের ব্যাপারটি কি ইউক্রেন-তান্ডবে ল-ভ- হতে বসেছে কি না সে আশঙ্কাও পোষণ করেছি। জবাবে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন রোধকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। কারণ এটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ না নিলে বিরাটসংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়বে। বহু দেশ অস্থিরতায় নিপতিত হবে। তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ এবং প্রদানের ব্যাপারে জোরালো কোনো কথা শুনিনি।’ তবে করোনার টিকা প্রদানে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন ড. মোমেন। এভাবেই বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের দিগন্ত ক্রমান্বয়ে প্রসারিত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। উল্লেখ্য, ৪ এপ্রিল ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সঙ্গে ড. মোমেনের বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। ওই বৈঠকের মধ্য দিয়েই দুই দেশের মধ্যকার কিছু ইস্যু নিয়ে মতভেদের পরিসমাপ্তি ঘটবে বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো আশা করছে।

এদিকে জাতিসংঘ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ শাহিদের সঙ্গে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দ্বিপক্ষীয় একটি বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জাতিসংঘ সফরের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হচ্ছে। এরপর মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গেও বৈঠকে বসবেন ড. মোমেন। এসব বৈঠকে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি প্রাধান্য পাবে বলে সূত্রটি উল্লেখ করেছে। এ ছাড়া করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাতিসংঘের কার্যকর ভূমিকা নিয়েও বাংলাদেশের মতামত/সুপারিশ উপস্থাপন করবেন ড. মোমেন। বাংলাদেশের একটি মহল তাদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের অভিপ্রায়ে বিপুল অর্থ ব্যয়ে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার স্বাক্ষর আদায়ের পর তা জাতিসংঘ মহাসচিব সমীপে পেশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশকে নিষিদ্ধের অনুরোধও জানানো হয়েছে। এসব আবেদন নিয়ে সর্বত্র মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। যদিও র‌্যাবের কোনো সদস্যই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আসার সুযোগ পান না, তাই ওই ধরনের তদবিরের কোনো বাস্তবতা নেই। তবে জনমনে এক ধরনের ভীতি দেখা দিয়েছে। কারণ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কর্মরতরা বিপুল অর্থ পেয়ে আসছেন চাকরির বেতনের অতিরিক্ত হিসেবে। আর এ অর্থে উপকৃত হচ্ছে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় শান্তিরক্ষা মিশনে যদি আর কোনো বাংলাদেশি অংশ নিতে না পারেন, এর জের পড়বে গোটা দেশের ওপর। যদিও বাস্তবতা হচ্ছে, এ ধরনের আবেদন-নিবেদনের নেপথ্যে যারা রয়েছেন তারা বাংলাদেশের সামগ্রিক কল্যাণ চান না। যেনতেন উপায়ে  তারা ক্ষমতা দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলেও অনেকে মনে করছেন। এমন অবস্থায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ সফরকে দেশ ও প্রবাসের সবাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর