সোমবার, ২১ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রে ধ্বংস ইউক্রেনের জ্বালানি ডিপো

রুশপন্থি ১১টি দল নিষিদ্ধ করলেন জেলেনস্কি

প্রতিদিন ডেস্ক

রুশ বাহিনী গতকাল দ্বিতীয় দফায় হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ইউক্রেনের মাইকোলাইভ অঞ্চলের একটি বৃহৎ জ্বালানি ডিপো ধ্বংস করেছে। পাশাপাশি মারিয়াপোলের একটি স্কুলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালে সেটি ধসে পড়ে। এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন সমঝোতা আলোচনার পরিণতি নিয়ে অনিশ্চিত প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। রাশিয়া অভিযোগ করেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র সমঝোতায় বাধা দিচ্ছে, এ কারণে আলোচনায় কোনো  সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।’ সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, আল জাজিরা, সিএনএন, স্পুটনিক।

সর্বশেষ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, শনিবারের পর গতকালও রাশিয়া আরেকটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এতে ইউক্রেনের একটি জ্বালানি স্টোরেজ সাইট ধ্বংস হয়ে গেছে। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ইউক্রেনে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করল মস্কো। এ ব্যাপারে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেজর জেনারেল ইগর  কোনাশেনকভ বলেছেন, মাইকোলাইভ অঞ্চলের কোস্ত্যন্তিনিভকার এলাকার কাছে হাইপারসনিক ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এ ঘটনায় ইউক্রেনীয় বাহিনীর জ্বালানি ও লুব্রিকেন্টের একটি বড় স্টোরেজ সাইট ধ্বংস হয়েছে। তিনি জানান, কৃষ্ণ ও কাসপিয়ান সাগরের যুদ্ধ জাহাজ থেকে ক্রুজ মিসাইলের পাশাপাশি এই হাইপারসনিক মিসাইলটি ছোড়া হয়। মিসাইলটি জ্বালানি ডিপো এবং আকাশচালিত অন্যান্য ক্ষেপণাস্ত্রগুলো উত্তর জাইটোমি অঞ্চলের ওভরুচের একটি স্থাপনায় আঘাত হানে। ওই স্থাপনায় ইউক্রেনের হয়ে যুদ্ধে অংশ নেওয়া শতাধিক বিদেশি ভাড়াটে সেনাসহ ইউক্রেনীয় সৈন্য নিহত হয়। 

রুশ সূত্র আরও বলেছে, রুশ বিমান বাহিনী গতকাল ৫৯টি ইউক্রেনীয় সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এতে ইউক্রেনের ৫টি ইউএভি ধ্বংস হয়েছে। সূত্র আরও দাবি করেছে, ইউক্রেনীয় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে মারিয়াপোলের একটি স্কুল ও হাসপাতাল বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে ইউক্রেনের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, স্কুলটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এই স্কুলে প্রায় ৪০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। পরে এক বিবৃতিতে বলা হয়, স্কুল ভবনটি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং লোকজন ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছেন।

ইউক্রেনের পক্ষ থেকে আরও দাবি করা হয়েছে, দেশটিতে রাশিয়ার নৌবাহিনীর এক শীর্ষ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। ফেসবুকে এক পোস্টে ইউক্রেনের জেনারেল স্টাফ জানিয়েছে, ক্যাপ্টেন ফার্স্ট র‌্যাঙ্ক অ্যান্ড্রিউ প্যালি ইউক্রেনে লড়াই চলাকালীন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া পূর্বাঞ্চলীয় খারকিভ শহরে গোলাবর্ষণে কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, একটি বাণিজ্যিক এলাকার কাছে একটি বহুতল ভবন হামলার শিকার হয়েছে।

সমঝোতায় বাধা যুক্তরাষ্ট্র : রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেরগেই ল্যাভরভ বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন সমঝোতায় প্রধান বাধা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সংকট সমাধানে কিয়েভকে যুক্তরাষ্ট্র বাধা দিচ্ছে। ল্যাভরভ গত শনিবার রাশিয়ার বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্সকে বলেন, ‘ইউক্রেনের প্রতিনিধি দলের হাত বেঁধে রাখা হয়েছে। মার্কিনিরা এটা করছে। আমাদের ন্যূনতম দাবিও মেনে নিতে ইউক্রেনকে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।’ ল্যাভরভ উল্লেখ করেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট ঘিরে সৃষ্ট রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রাশিয়া ও চীনের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে। আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা যেসব ভিত্তির ওপর গড়ে উঠেছে, তার সব কটিকে যখন পশ্চিমারা চরমভাবে অবমূল্যায়ন করছে- তখন দুই পরাশক্তি হিসেবে অবশ্যই আমাদের চিন্তাভাবনা করা উচিত। ভাবা উচিত বিশ্বকে আমরা কীভাবে এগিয়ে নেব।’

শান্তি চাইলে সমরাস্ত্র পাঠাচ্ছেন কেন : ইউক্রেনে সমরাস্ত্র ও ভাড়াটে সেনা পাঠানোর ব্যাপারে আমেরিকা ও তার পশ্চিমা মিত্রদের হুঁশিয়ার করেছে রাশিয়া। রুশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ দুমার চেয়ারম্যান ভ্যাজিস্তাভ ভোলোদিন তার ব্যক্তিগত টেলিগ্রাম চ্যানেলে দেওয়া এক পোস্টে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। ব্রাসেলসে ন্যাটো জোটের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা এক জরুরি  বৈঠকে ইউক্রেনের কাছে সমরাস্ত্র পাঠিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত দেওয়ার পর ভোলোদিন এ হুঁশিয়ারি দিলেন। তিনি বলেন, ‘ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো সমরাস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করে যাচ্ছে। এসব দেশের সরকারগুলোর সম্মতিতে ইউক্রেনের উগ্র জাতীয়তাবাদীদের পক্ষে যুদ্ধ করার জন্য ভাড়াটে সেনাদের আমদানি করা হচ্ছে। যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার সহকর্মীরা শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান, তখন এ বিষয়গুলো প্রশ্নবোধাক।’ তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন পরিস্থিতি বিশেষ করে দেশটিকে নিরস্ত্র ও নাৎসিমুক্ত করার কাজে যদি বিলম্ব ঘটে তার দায় সম্পূর্ণ তাদের (যুক্তরাষ্ট্রের)। ইউক্রেন একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ দেশে পরিণত হোক তা তারা চায় না।’ ‘ইউক্রেনের উগ্র জাতীয়তাবাদীরা বেসামরিক নাগরিকদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে’ উল্লেখ করে ভোলোদিন বলেন, ‘আমেরিকা ও তার মিত্ররা যদি সত্যিই শান্তি চাইত তাহলে তারা ইউক্রেনে সমরাস্ত্র না পাঠিয়ে মানবিক ত্রাণ পাঠাত।’ ভোলোদিন বলেন, ‘ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যু ও শরণার্থীদের ঢল নামার জন্য ওয়াশিংটন ও ব্রাসেলস সরাসরি দায়ী।

রুশপন্থি ১১ রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করলেন জেলেনস্কি : ইউক্রেনের ১১টি রাজনৈতিক দলের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। স্থানীয় সময় গত শনিবার রাতে আপলোড করা এক ভিডিওতে ভলোদিমির জেলেনস্কি দেশের যে ১১টি রাজনৈতিক দলের ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেন, তার মধ্যে ‘ফর লাইফ’ দলটি অন্যতম। এটি ইউক্রেনের বৃহত্তম রুশপন্থি দল। এ দলে ইউক্রেনের কয়েকজন পার্লামেন্ট সদস্যও রয়েছেন। নিষেধাজ্ঞা পাওয়া অন্য দলগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিরোধী দল, পার্টি অব শরিয়া, আওয়ার্স (আমাদের), বাম বিরোধী দল, বামদলীয় ইউনিয়ন, রাজ্য দল, ইউক্রেনের প্রগতিশীল সমাজতান্ত্রিক দল, সমাজতান্ত্রিক দল ইউক্রেন, সমাজবাদী দল ও ভ্লাদিমির সালদো ব্লক।

সর্বশেষ খবর