সোমবার, ২১ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

সন্তানসহ আত্মহত্যার প্রস্তুতি, পুলিশের হস্তক্ষেপে রক্ষা তিন প্রাণ

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

স্ত্রীকে ফিরে না পেয়ে দুই সন্তান নিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন এক যুবক। এ জন্য নারায়ণগঞ্জ শহরের কালীরবাজার থেকে তিনজনের জন্য কাফনের কাপড়ও কেনা হয়। পরিকল্পনা ছিল নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকায় ভাড়া বাসায় গিয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবেন তিনি। এর আগে ওই যুবক নিজ ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে স্ত্রী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে উদ্দেশ করে আত্মহত্যার কথা জানিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিলেন গন্তব্যের পথে। লাইভে এমন দৃশ্য দেখে কেউ একজন বিষয়টি জরুরি জাতীয় সেবা ৯৯৯-এ  জানান। পরে পুলিশ দীর্ঘ ৪৫ মিনিট যুবকটির সঙ্গে কাউন্সিলিং করে তাকে আত্মহত্যার পথ থেকে সরে আসার অনুরোধ জানিয়ে কৌশলে থানা পুলিশের হেফাজতে আনা হয়। একই সঙ্গে যুবকটির শ্বশুর, শাশুড়ি ও স্ত্রীকে থানায় ডাকা হয়। পরবর্তীতে প্রায় চার ঘণ্টা কাউন্সিলিং শেষে সমঝোতা করে স্বামী-স্ত্রীকে শ্বশুর-শাশুড়ির কাছে তুলে দেয় পুলিশ। লাইভে আসা যুবক জানায়, ১০ বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে নয় বছর বয়সী একটি মেয়ে ও চার বছর বয়সী একটি ছেলে রয়েছে। সম্প্রতি তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহের জেরে তার স্ত্রী বাবার বাড়ি চলে যান। এর মধ্যে কয়েকদিন আগে জানতে পারেন স্ত্রী তাকে তালাক দিয়েছেন। বিষয়টি জানতে পেরে তিনি শ্বশুরের কাছে গেলে লাঞ্ছিত করে তাড়িয়ে দেন। এ নিয়ে তিনি নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। কোনোভাবেই স্ত্রীকে ফিরে পাওয়ার কোনো সুরাহা না পেয়ে দুই সন্তানসহ আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকায় একটি রুম ভাড়া নেন। সেখানেই এক সঙ্গে ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার পরিকল্পনা ছিল। এ জন্য শহরের কালীরবাজার থেকে কেনা হয়েছিল তিনজনের জন্যই কাফনের কাপড়। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাছান জানান, খবর পাওয়া মাত্র আমরা তাদের আত্মহত্যা ঠেকাতে যুবকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কাউন্সিলিং শুরু করি। কিছুদিন আগে নায়ক রিয়াজের শ্বশুরের সেই ঘটনাটি আমাদের মনে পড়ে যায়। সেই ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তাই ৪৫ মিনিট  ফতুল্লা পুলিশ যুবকের সঙ্গে ফেসবুক লাইভে হত্যা থেকে ফিরিয়ে থানা হেফাজতে নিয়ে আসে। পরে থানায় ৪ ঘণ্টা বুঝিয়ে শ্বশুর-শাশুড়িসহ স্ত্রীর সঙ্গে সমঝোতা করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন তারা এক সঙ্গেই আছেন। আমরা  সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নিয়ে মেধার সবটুকু দিয়ে তিনজনকে আত্মহত্যার পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে সামর্থ্য হয়েছি। কর্মজীবনে এটাই সবচেয়ে বড় সফলতা বলে মনে করছি সবাই। প্রসঙ্গত, সামাজিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে ওই যুবক, তার দুই সন্তান, স্ত্রী ও শ্বশুর-শাশুড়ির নাম প্রকাশ করা হয়নি।

সর্বশেষ খবর