সোমবার, ২১ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

স্ত্রীর কবরের পাশে সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন শায়িত

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্ত্রীর কবরের পাশে সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন শায়িত

সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের দ্বিতীয় জানাজা গতকাল রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হয় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে স্ত্রী মরহুম আনোয়ারা আহমদের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরসহ সাহাবুদ্দীনের পরিবার ও কাছের মানুষজন দাফনে অংশগ্রহণ করেন। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের ছোট ছেলে সোহেল আহমদ জানান, আগামী ২৪ মার্চ গুলশানের ৫৯ নম্বর সড়কের ১০ নম্বর বাসায় তার বাবার জন্য দোয়া-মাহফিল হবে।

এর আগে শনিবার দুপুর ২টায় নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় নিজ গ্রাম পেময়ীতে সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয় ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এ জানাজায় অংশ নিয়ে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদ ছিলেন বাংলাদেশের বিচার অঙ্গনে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার মৃত্যু বিচারাঙ্গনে পদচারণাকারী সবার জন্য একটি সুখের দিন। বিচারাঙ্গনের শাহাবুদ্দীন সাহেবের অবদান এই দেশ ও জাতি জানে। তার অগণিত জাজমেন্টের মধ্য দিয়ে বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদ আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন। আমরা সবাই তার জন্য দোয়া করি। যাতে আল্লাহ তাআলা তাকে বেহেশত নসিব করেন। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, আপিল ও হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি, সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান, সিনিয়র আইনজীবীসহ হাজারো মানুষ। জানাজা শেষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতির পক্ষে মরহুমের কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

সাহাবুদ্দীনের বড় মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক সিতারা পারভীনের স্বামী একই বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আহাদুজ্জামান মোহাম্মদ আলীর বড় ভাই হলেন সাবেকমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সিতারা ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। তালুইয়ের কথা স্মরণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে নূর বলেন, ‘আমরা যারা আত্মীয়-স্বজন ছিলাম, তিনি যতদিন বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন আমরা কখনো তার ঘনিষ্ঠ হতে পারিনি। এ ব্যাপারে তার সুনির্দিষ্ট নির্দেশ ছিল। আমার মনে পড়ে, তিনি যখন প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন, তখন তিনি আমার মাকে ফোন করে বলেছিলেন যে, আমি যেন তাদের বাসভবনে যাওয়া-আসা না করি। যেহেতু আমি রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এভাবেই তিনি জীবনযাপন করেছেন, তার জীবনটা খুবই সহজ-সরল ছিল। একজন সরল-সহজ, স্বচ্ছ ও সৎ মানুষ ছিলেন, তিনি নির্ভীক মানুষ ছিলেন।’

নব্বইয়ের সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বলেন, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে তিনি যে অবদান রেখে গেছেন, তা অবিস্মরণীয়। তিনি এমন একটা সময়ে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন, যখন দেশে একটা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছিল। এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল যে, আমরা যদি এই ক্ষণজন্মা ব্যক্তিকে না পেতাম, তাহলে হয়তোবা দেশের পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে রূপ নিত।’

উল্লেখ্য, বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ ১৯ মার্চ সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মারা যান। তিনি বেশ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। ফেব্রুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে সাহাবুদ্দীন আহমদকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় সিএমএইচে ভর্তি করা হয়।

সর্বশেষ খবর