বুধবার, ২৩ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

বেশির ভাগ বিশিষ্টজনই যাননি ইসির সংলাপে

অংশগ্রহণকারীরা বলছেন দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

বেশির ভাগ বিশিষ্টজনই যাননি ইসির সংলাপে

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন পেশাজীবীদের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের দ্বিতীয় ধাপে আমন্ত্রিত প্রতিনিধির সঙ্গে গতকাল বৈঠকে বসেছে নতুন নির্বাচন কমিশন। সংলাপে মতামত দেওয়ার জন্য ৩৯ জন বিশিষ্টজনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তাদের অর্ধেকই এদিন আসেননি। আমন্ত্রিতদের মধ্যে দুজন বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন। গতকালের বৈঠকে মাত্র ১৯ জন অংশ নেন।

সকালে ঢাকায় নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে অতিথিদের স্বাগত জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। শুরু থেকেই অংশগ্রহণমূলক ভোট আয়োজনে রাজনৈতিক সমঝোতার তাগাদা দিয়ে আসছেন নতুন সিইসি। দায়িত্ব নেওয়ার দুই সপ্তাহের মাথায় ১৩ মার্চ শিক্ষাবিদদের মতামত নেয় তার নেতৃত্বাধীন কমিশন।

বৈঠকে অংশ নিয়ে কেউ কেউ বলেছেন, অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। সংলাপে বিশিষ্টজনরা জাতীয় নির্বাচনে সবার ঐকমত্য ছাড়া ইভিএম ব্যবহার না করা, ভোটারদের বাধাহীনভাবে ভোটদানের অধিকার নিশ্চিত করা, ভোটের আগে-পরে ভোটারদের বিশেষ করে নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নির্বাচনকালীন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে আনার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার এমন হতে হবে, যাদের ভোটের ফলাফল নিয়ে কোনো আগ্রহ থাকবে না।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিন আহমেদ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম প্রমুখ সংলাপে বক্তব্য দেন।

সংলাপ শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, তাঁরা বিশিষ্টজনদের প্রস্তাব ও পরামর্শ শুনেছেন। এসব পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল পেশাজীবীদের সঙ্গে সংলাপে বক্তব্য প্রদানকালে বলেন, নির্বাচন ৫০-৬০% গ্রহণযোগ্য হলেই বড় সফলতা হবে। সিইসি জানান, ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হয়।  ভোটাররা ভোট দিতে না পারলে, বাধা এলে, পোলিং অফিসারদের তাড়িয়ে দেন- এমন হলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয় না। নির্বাচনটা অসম প্রতিযোগিতা হয়ে যায়। ভোটে সহিংসতার ব্যাপকতা থাকলে ভোটাররা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এটা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ এসেছে। তিনি বলেন, জীবনের শেষপ্রান্তে এসে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন করতে পারি, যেসব পরামর্শ এসেছে তা বিবেচনায় নিয়ে এগোতে হবে। নির্বাচনকে যদি অবাধ, সুষ্ঠু করা যায় তাহলে সেটা সকলের অংশগ্রহণে হয় সেটা সফলতা হতে পারে। শতভাগ সফলতা হয়তো হবে না; কেউ কেউ বলেছেন ৫০-৬০ শতাংশও যদি গ্রহণযোগ্য হয় তাহলে সেটাও বড় সফলতা। তার মতে, বিগত সময়ে নির্বাচন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বলে অনেকে বলেছেন। আবার নারায়ণগঞ্জে ইভিএমে ভালো নির্বাচনের দৃষ্টান্তও রয়েছে। সিপিডির ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বক্তব্যে বলেন, ইভিএমের ব্যবহার অত্যন্ত বিতর্কিত বিষয়। এটা থেকে দূরে থাকা ভালো। ইভিএম নিয়ে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও জটিল করে দিতে পারে। ইভিএম ঝুঁকি নিয়ে ব্যবহার করা উচিত নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাস উদ্দিন বলেন, ইভিএম সব সময় বিতর্কিত। এটার সমাধান না করে ব্যবহার করা ঠিক নয়। জোরের সঙ্গে বলব, ইভিএম ব্যবহার না করার জন্য।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ইভিএমের বিরোধিতা করে বলেন, বিনা টেন্ডারে কীভাবে ইভিএম এলো। ইভিএম নিয়ে একজনের এত উৎসাহ কেন, তা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। কোনোভাবে বড় পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না। চাইলে ৫-১০ কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করতে পারে,  তবে এটা না হওয়াই ভালো। নির্বাচনকালীন সরকারের চরিত্রের ধরন, কেমন নির্বাচন হবে- এ নিয়ে বিদ্যমান আইন বিধিতে কি ধরনের পরিবর্তন আনা যায় সে বিষয়ে কাজ পরার পরামর্শ দিয়েছেন টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি বলেন, সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য আইনে কোনো পরিবর্তন করা যায় কি না তা চিহ্নিত করেন আপনারা। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দেন ইফতেখারুজ্জামান। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ভোটাররা নির্বাচনবিমুখ হয়ে পড়েছে। ইসি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অতীতের ভুলভ্রান্তি স্বীকার করে কাজ এগিয়ে নিতে হবে।

যারা অংশ নিয়েছেন : গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, সিপিডির ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, মোস্তাফিজুর রহমান ও সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস, লিডারশিপ স্টাডিজ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. সিনহা এম এ সাঈদ, লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ, সাবেক সচিব আবদুল লতিফ মন্ডল, সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক বেগম শাহীন আনাম, নিজেরা করির কো-অর্ডিনেটর খুশী কবির, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, বাংলাদেশ ইনডিজিনিয়াস পিপলস ফোরাম সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং ও সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজ (সিইউএস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, ঢাবি আইন বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন, গভর্নেন্স অ্যান্ড রাইট সেন্টারের প্রেসিডেন্ট জহুরুল আলম, ঢাবি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক শামীম রেজা, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মহিউদ্দীন আহমেদ।

সর্বশেষ খবর