বছরব্যাপী উন্নয়নের খোঁড়াখুঁড়িতে শীত কিংবা বর্ষা সব ঋতুতেই ঢাকাবাসী পড়েন বিপদে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বছরব্যাপী রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো যখন-তখন রাস্তা কেটে পরিবেশ দূষণ করে যাচ্ছে। ধুলার কারণে রাজধানীর অনেক জায়গায় যানবাহনে চলাচল করা কষ্টকর। পথচারীরাও নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারেন না। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু ধুলাবালি নয়, বর্জ্য, প্লাস্টিক পোড়ানোর কারণেও বায়ুদূষণ বাড়ছে। ফলে একদিকে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ, অন্যদিকে করোনা মহামারির মধ্যে শিশু থেকে বয়স্করা শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোকে বায়ুদূষণ প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। ঢাকায় বাতাসের মান ঠিক রাখতে খোঁড়াখুঁড়ি নিয়ন্ত্রণে জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল বলেন, বায়ুদূষণের জন্য রাজধানীতে চলা মেগাপ্রকল্প দায়ী। এ বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারকে দ্রুত প্রদক্ষেপ নিতে হবে। তবে বাপার পক্ষ থেকে ‘নির্মল বায়ু আইনের’ খসড়া তৈরি করেছি। এ আইনটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে এবং এটি বাস্তবায়নে সব ধরনের প্রদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, বায়ুদূষণের কারণে অ্যাজমা, ফুসফুসসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। তবে ফুসফুসজনিত রোগীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মারা যায় বেশি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা দুই সিটি করপোরেশন, ঢাকা ওয়াসাসহ সেবাদাতা সংস্থাগুলোর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। উত্তরা, বাড্ডা, রামপুরা, মগবাজার, লালবাগ, তেজগাঁও, কারওয়ান বাজার, কেরানীগঞ্জসহ অন্তত ৩০ থেকে ৪০টি স্থানে রাস্তা খুঁড়ে রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি চলছে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিআরটি, ওয়াসার পানি সরবরাহ লাইন নির্মাণ, ড্রেনেজ নির্মাণসহ নানাবিধ উন্নয়ন কাজ। এসব কারণে বাতাসে ধুলার পরিমাণ বেড়েছে। পাশাপাশি পলিথিন, কাগজ, প্লাস্টিক পোড়ানোর কারণেও বায়ুদূষণ হচ্ছে। এ দূষণ প্রতিরোধের দায়িত্ব ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি), ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এবং প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর।ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ বলেন, রাজধানীতে সিটি করপোরেশন ছাড়াও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত অধিদফতরের প্রকল্প, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজ চলছে। ধুলা নিয়ন্ত্রণে সবার দায়িত্ব রয়েছে। তারপরও ডিএসসিসির পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে প্রতিদিন দুবার পানি ছিটানো হচ্ছে। এ ছাড়া উন্নয়ন কার্যক্রমে মানুষের সমস্যা হয় এমন কোনো কাজ যেন না করে ঠিকাদারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, রাজধানীতে সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। একই সঙ্গে মেট্রোরেলসহ বড় প্রকল্পের উন্নয়ন কার্যক্রম চলায় ধুলার পরিমাণ বেশি। এতে সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা নাকে কাপড় দিয়েও রক্ষা পান না।
তিনি আরও বলেন, ধুলার কারণে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আর এ রোগে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত মানুষকে কষ্ট দেয়।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) এক গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত ধুলার কারণে জামাকাপড় পরিষ্কার, বাসাবাড়ি ধোয়া ও মোছার জন্য অতিরিক্ত পানি ও ডিটারজেন্ট ব্যবহার করতে হয়। কাপড় ইস্ত্রি করতেও অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ করতে হয়। ঢাকা মহানগরীর প্রতিটি মধ্যবিত্ত পরিবারকে ধুলাদূষণের কারণে মাসে অন্তত ৪ থেকে ১০ হাজার টাকা বেশি খরচ করতে হয়।
ডিএনসিসির সংশ্লিষ্টরা জানান, ধুলাদূষণ প্রতিরোধে ১০টি গাড়িতে করে নিয়মিত তারা পানি ছিটাচ্ছেন। তবে এটি প্রয়োজনের তুলনায় কম। গাড়ির সংখ্যা বাড়ানোর চিন্তা রয়েছে। আর ডিএসসিসির সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিদিন তারা আটটি গাড়িতে করে পানি ছিটাচ্ছেন। যেটা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য। বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে কয়েকটি গাড়ি কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে।