রবিবার, ২৭ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

টিপু হত্যায় ছয় মোটিভ ধরে তদন্ত

আলী আজম

টিপু হত্যায় ছয় মোটিভ ধরে তদন্ত

রাজধানীর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের তদন্তে একাধিক বিরোধ বেরিয়ে আসছে। তদন্তে ছয়টি মোটিভ ধরে চলছে টিপু খুনের রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা। কারণ হিসেবে বেশ কিছু ক্লুও পেয়েছে তদন্তকারী বিভিন্ন সংস্থা। পুলিশের পাশাপাশি এ মামলার ছায়াতদন্ত করছে র‌্যাব। এ ছাড়া পিবিআই ও ডিবির একাধিক টিম ঘাতক শনাক্তে কাজ করছে। উদ্ধার ভিডিও ফুটেজের সূত্রে হেলমেটধারী ঘাতকের পরিচয় খোঁজা হচ্ছে। ডিবি সূত্রে জানা গেছে, টিপু হত্যাকান্ডের ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। হত্যার নেপথ্যে জানতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ছাড়া মতিঝিল, পল্টন ও শাহজাহানপুরে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ঠিকাদারিতে বাটোয়ারা, মতিঝিল আইডিয়াল কলেজের ভর্তি-বাণিজ্য, মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট নিয়ে দ্বন্দ্ব, সাবেক কাউন্সিলর রিয়াজুল হক খান মিল্কী হত্যাকান্ডের রেশ এবং পাঁচ বছর আগে বোঁচা বাবু খুনের মামলার আপস-রফা নিয়ে দুই শুটারের সঙ্গে টিপুর টানাপোড়েনের তথ্যও পেয়েছে পুলিশ। একই সঙ্গে সম্প্রতি অজ্ঞাত নম্বর থেকে টিপুকে হত্যার হুমকি দেওয়া লোককেও পুলিশ খুঁজছে। ঘটনা বিশ্লেষণে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে যে, কিলারের টার্গেট ছিলেন শুধু টিপু। কলেজছাত্রী প্রীতি ঘটনার শিকার। তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেভাবে টিপুকে হত্যা করা হয়েছে সেটি আন্ডারওয়ার্ল্ডের শুটারদের সহায়তা ছাড়া সম্ভব নয়। কারণ হাজার হাজার মানুষের মধ্যে ঠান্ডা মাথায় খুন করে পালিয়ে যাওয়া কোনো ছোটখাটো বিষয় নয়। যানজট থাকা সত্ত্বেও যেভাবে টিপুকে গুলি করা হয়েছে, নিঃসন্দেহে এটি কোনো দক্ষ ভাড়াটে শুটারের কাজ। পাশাপাশি লম্বা সময়ের পরিকল্পনায় এই হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। টিপুর হত্যার পেছনে টেন্ডার, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, এমনকি পুরনো দ্বন্দ্বকে সামনে রেখে মাঠে কাজ করছে তদন্তকারী সংস্থাগুলো। টিপু ও প্রীতি খুনের ঘটনার দুই দিন পেরিয়ে গেলেও মূল হোতা বা কিলারকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি মোটরসাইকেল থেকে নেমে এক ব্যক্তি টিপুর গাড়ির পাশে এসে তাকে গুলি করেন। আর ওই মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন আরেকজন। তাদের কাউকে এখনো শনাক্ত করা যায়নি। টিপুর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নারী কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি এ ঘটনায় শাহজাহানপুর থানায় যে হত্যা মামলা করেছেন, এতে আসামি হিসেবে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। প্রায় এক দশক আগে টিপু যখন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, তখন যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কী হত্যা মামলায় তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন। সন্দেহভাজন হিসেবে কারও নাম না বললেও ‘রাজনৈতিক কোন্দলের’ কথা মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন টিপুর স্ত্রী?ডলি। এদিকে কলেজছাত্রী প্রীতি গুলিতে নিহত হলেও তার বাবা-মা মামলা করবেন না বলে জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর শাহজাহানপুরে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে। হামলাকারীর এলোপাতাড়ি গুলিতে প্রাণ হারান বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া আফরান জামাল প্রীতি। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন টিপুকে বহন করা মাইক্রোবাসের চালক মনির হোসেন মুন্না।

ডিএমপির শাহজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন মোল্লা বলেন, ‘ঘটনার পর পরই আমরা ওই মাইক্রোবাস ও গুলির খোসা উদ্ধার করেছি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজসহ আরও বেশ কিছু আলামত উদ্ধার করেছি। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আমরা বিভিন্ন ক্লু নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি শিগগিরই আসামিদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হব।’

সর্বশেষ খবর