রবিবার, ২৭ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়াচ্ছে রাশিয়া

প্রতিদিন ডেস্ক

ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়াচ্ছে রাশিয়া

হামলায় জ্বলছে ইউক্রেনের জ্বালানি স্থাপনা -এএফপি

পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ভিন্নিতসিয়ায় ইউক্রেন বিমান বাহিনীর একটি কমান্ড সেন্টার গুঁড়িয়ে দিয়েছে রুশ বাহিনী। স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে রুশ বাহিনীর ছোড়া ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এ কমান্ড সেন্টারটিতে আঘাত হানে। রাতে এক বিবৃতিতে ইউক্রেন সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে ধ্বংস হয়ে যাওয়া কমান্ড সেন্টারটির ছবি টুইট করেছে দেশটির বিমান বাহিনী।

সূত্র : বিবিসি, গার্ডিয়ান, সিএনএন।

ইউক্রেন  সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ভিন্নিতসিয়া শহরে ইউক্রেন বিমান বাহিনীর কমান্ড সেন্টারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। কমান্ড সেন্টারটি লক্ষ্য করে অন্তত ছয়টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। দু-তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনের এয়ার ডিফেন্স ইউনিট ধ্বংস করতে পেরেছে, বাকিগুলোর আঘাতে কমান্ড সেন্টার ভবনসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি ভবন ও স্থাপনা সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে গেছে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়েছে কি না বিবৃতিতে তা উল্লেখ করেনি ইউক্রেন সেনাবাহিনী।

এর আগে বৃহস্পতিবার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ইউক্রেনের বৃহত্তম জ্বালানি তেলের ডিপো ধ্বংস করে রুশ বাহিনী। রাজধানী কিয়েভ সংলগ্ন ক্যালিনোভকা গ্রামের ওই ডিপো থেকে ইউক্রেন সামরিক বাহিনী ও দেশটির মধ্যাঞ্চলে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হতো। এ ছাড়া চলতি মাসের গোড়ার দিকেও এ ভিন্নিতসিয়া শহরের একটি বেসামরিক বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল রুশ সেনারা।

রাশিয়ার ভাষ্য : রাশিয়ার শীর্ষ সামরিক কমান্ডার সের্গেই রুস্কয় বুদানভ শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ইউক্রেনে চলমান অভিযানের প্রথম ধাপ শেষ করেছে রুশ সশস্ত্র বাহিনী। এক মাসের লড়াইয়ে কিয়েভের যুদ্ধসক্ষমতা অনেকখানি কমে গেছে। সংবাদ সম্মেলনে ইউক্রেনে চলমান রুশ অভিযানের অগ্রগতি তুলে ধরে রুস্কয় বলেন, ‘অভিযানের প্রথম ধাপের প্রধান কাজগুলো শেষ হয়েছে। ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর যুদ্ধসক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এর মধ্য দিয়ে দনবাসকে স্বাধীন করার প্রধান লক্ষ্যটি অর্জনের প্রচেষ্টায় মনোযোগী হতে পারব আমরা।’ এই রুশ কর্মকর্তা আরও বলেন, আট বছর ধরে এ অঞ্চলে (দনবাস) ইউক্রেনীয় বাহিনীগুলো মার্কিন সহায়তায় ‘সুসজ্জিত প্রতিরক্ষা অঞ্চল’ তৈরি করেছে। এ অঞ্চলে জ্বালানি, গোলাবারুদসহ সামরিক রসদ সরবরাহের পথ বন্ধ করতে রুশ সেনারা গুরুত্বপূর্ণ রেলস্টেশনগুলো বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। চলমান অভিযানে রুশ বাহিনীর কেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সে তথ্যও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করেন সের্গেই রুস্কয়। তিনি বলেন, যুদ্ধে রুশ বাহিনীর ১ হাজার ৩৫১ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৩ হাজার ৮২৫ জন। এদিকে যুক্তরাজ্যের একজন জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বিবিসিকে বলেছেন, বিগত বছরগুলোয় রাশিয়া তার সামরিক ব্যয়ের বেশির ভাগ পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জন, উন্নয়ন ও পরীক্ষায় খরচ করেছে। হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নয়ন ঘটিয়েছে তারা। বিশ্বের সর্বাধুনিক ট্যাংক টি-১৪ আরমাতা তৈরি করেছে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধে এসবের ব্যবহার হয়নি। বাস্তবে ব্যবহৃত হচ্ছে পুরনো টি-৭২ ট্যাংক ও রকেট লঞ্চার।

ভারী অস্ত্রের ব্যবহার চালিয়ে যেতে পারে রাশিয়া : গোয়েন্দাসূত্রের বরাত দিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল বলেছে, ইউক্রেনে নির্বিচারে বোমাবর্ষণ করছে রুশ বাহিনী। এ ছাড়া শহুরে এলাকাগুলোয় তারা ভারী অস্ত্রের ব্যবহার চালিয়ে যেতেই থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরও বলছে, ইউক্রেনের প্রতিরোধের কারণে রুশ বাহিনী বৃহদাকারে অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে অনিচ্ছা প্রকাশ করছে। তবে বড় শহরগুলোয় নির্বিচারে বিমান হামলা ও বোমাবর্ষণ করছে তারা। তারা ইউক্রেনের খারকিভ, চেরনিহিভ, মারিউপোলসহ বেশ কয়েকটি বড় শহরে হামলা অব্যাহত রেখেছে।

জার্মানির ১ হাজার ৫০০ ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেন পৌঁছেছে : অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে কিয়েভকে সহায়তা করে আসছে ন্যাটো ও ইউরোপের দেশগুলো। নিজেদের দীর্ঘদিনের নীতি থেকে সরে জার্মানিও একই পথে হেঁটেছে। গতকাল জার্মানির দেওয়া দেড় হাজার স্ট্রেলা বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ও ১০০ এমজি-৩ মেশিনগানের চালান ইউক্রেনে পৌঁছে।

জীবাণু অস্ত্র গবেষণায় অর্থ জোগানদাতা বাইডেনের ছেলে : ইউক্রেনের জীবাণু অস্ত্র গবেষণাগারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেন গোপনে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে গতকাল ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেল এ তথ্য প্রকাশ করেছে। এদিকে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে যাতে দেখা গেছে, অ্যানথ্রাক্স নামক ভাইরাসের জীবাণু ব্যবহার করে বিশেষ বিপজ্জনক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করেছে আমেরিকা। মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক দল এ প্রচেষ্টার পেছনে মূল কারিগর হিসেবে কাজ করেছে। ইউক্রেনের সামরিক অভিযান চালানোর সময় রুশ সেনারা এসব তথ্য খুঁজে পেয়েছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যচিত্রে ইউক্রেনে জীবাণু অস্ত্র গবেষণাগারের সঙ্গে মার্কিন ডেমোক্র্যটিক দল ও হান্টার বাইডেনের প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পরমাণু জীবাণু অস্ত্র গবেষণা কর্মসূচির সঙ্গে আমেরিকার এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট বা এআইডি এবং সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বা সিডিসি জড়িত ছিল।

 

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেনে জীবাণু অস্ত্র গবেষণা কর্মসূচির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেন পরিচালিত রোজমন্ট সেনেকা নামে একটি প্রতিষ্ঠান জড়িত, যারা মার্কিন সামরিক বিভাগে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাজ করে। এ প্রতিষ্ঠানের মূল কাজ হলো সারা বিশ্বে পেন্টাগনের যেসব জীবাণু অস্ত্র গবেষণাগার রয়েছে তাতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করা।

পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা : রাশিয়ান নিরাপত্তা পরিষদের চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ এক সাক্ষাৎকারে স্পুটনিককে শুক্রবার বলেছেন, ‘পারমাণবিক সংঘাতের হুমকি সর্বদা বিদ্যমান।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘ন্যাটোর পারমাণবিক অস্ত্রগুলো রাশিয়ার স্থাপনাগুলোর দিকে তাক করে রাখা হয়েছে এবং রাশিয়াও তার ওয়ারহেডগুলো ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যবস্তুর দিকে তাক করে রেখেছে। অতএব দায়িত্বশীল নীতি অনুসরণ করা প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘কেউই যুদ্ধ চায় না, কিন্তু মানবসভ্যতায় পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকি কমবেশি সব সময় বিদ্যমান রয়েছে।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘ইউক্রেন সংকট ঘিরে রাশিয়ার ওপর দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার মিত্ররা। বর্তমান পরিস্থিতি স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার অবস্থার চেয়েও খারাপ। এর কারণ হচ্ছে আগে আমেরিকা ও তার মিত্ররা রাশিয়ার শিল্পকারখানা, কৃষি খাত এবং ব্যক্তিবিশেষের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি; কিন্তু এখন তা করছে।’ মেদভেদেভ আরও বলেন, ‘রাশিয়ার নেতৃত্ব যদি দায়িত্বজ্ঞানহীন হতো তাহলে রাশিয়ার জনগণের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কারণে কৌশলগত অস্ত্র হ্রাস চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসত। এগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক যুদ্ধ ছাড়া আর কিছু নয়, যার পরিণতি হচ্ছে বিশ্বের পুরো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ধ্বংস। পশ্চিমারা কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই এ যুদ্ধ চালাচ্ছে। পশ্চিমাদের চাপিয়ে দেওয়া নিষেধাজ্ঞার ভিতর থেকে রাশিয়ার জনগণ নিজেদের পথ খুঁজে নেবে এবং অন্য কারোর ওপর নির্ভর করবে না।’

সর্বশেষ খবর