রাজধানীর মিরপুরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে গরিবের ডাক্তার খ্যাত চিকিৎসক আহমেদ মাহি বুলবুলের খুনিদের কাউকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘটনাটি রহস্যজনক। তদন্তে অনেক অগ্রগতি হয়েছে, বেশ কিছু ক্লু পাওয়া গেছে।
রাজধানীর মগবাজারে রংপুর ডেন্টাল নামে একটি চেম্বারে চিকিৎসা দিতেন ডা. বুলবুল। সেখানে দরিদ্র ও নিম্নবিত্তদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতেন। রবিবার ভোর ৫টায় ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে তিনি মারা যান। ছিনতাইকারীরা তাকে ছুরিকাঘাত করলেও সঙ্গে থাকা ১২ হাজার টাকা, দামি মোবাইলফোন কিছুই নেয়নি। শুধু একটি পুরাতন স্যামসাং ফোন খোয়া গেছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে তিনজনকে অজ্ঞাত আসামি করে মিরপুর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। এ ঘটনায় পূর্বশত্রুতা, ঠিকাদারি ব্যবসা, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এবং ছিনতাই- এ বিষয়গুলোকে সামনে রেখে ঘটনাটি তদন্ত করছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। পাশাপাশি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এবং ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)-সহ একাধিক সংস্থা তদন্ত করছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মানস কুমার পোদ্দার জানান, তারা সব দিক নিয়ে কাজ করছেন। প্রাথমিকভাবে ছিনতাই বলে তারা ধারণা করছেন, তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত আছে।সূত্র জানায়, মিরপুরের ১১৮/এফ পশ্চিম শেওড়াপাড়া আনন্দবাজারের ভাড়া বাসায় স্ত্রী এবং দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকতেন চিকিৎসক বুলবুল। ঘটনার দিন ভোর পাঁচটায় ওই বাসা থেকে নোয়াখালীতে তার ঠিকাদারি ব্যবসার কাজের উদ্দেশে বের হন। এ সময় রংমিস্ত্রি এবং তার সহযোগী সোহরাবকে ফোন দিয়ে বের হতে বলেন। একটি রিকশা নিয়ে পশ্চিম শেওড়াপাড়ার মূল সড়কে এলে তিনজন তার গতিরোধ করে ঊরুতে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে থাকা পথচারীরা উদ্ধার করে একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে কিছুক্ষণ পর তার মৃত্যু হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাহাতাব উদ্দিন বলেন, আমরা তদন্তে অনেক ক্লু পেয়েছি। তদন্তের স্বার্থে এখন কিছু বলা যাবে না। দ্রুতই হত্যায় জড়িতদের শনাক্ত করা যাবে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘটনাস্থলের আশপাশের ভিডিও ফুটেজ জব্দ করা হয়েছে, কিন্তু পরিষ্কার কিছু বোঝা যাচ্ছে না। মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাজিরুর রহমান জানান, বলার মতো এখনো কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। এখন পর্যন্ত কেউই গ্রেফতারও হয়নি। জানা গেছে, ডা. বুলবুলের গ্রামের বাড়ি রংপুরের ভগিবালাপাড়ায়। তার বাবার নাম মৃত আবদুস সামাদ।
রংপুরে হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার, দুই সন্তানের লেখাপড়ার দায়িত্ব সরকারকে নেওয়ার অনুরোধ মায়ের : চিকিৎসক আহমেদ মাহি বুলবুলের দাফন রংপুরে সম্পন্ন হয়েছে। হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন তার মা বুলবুলি বেগম। একই সঙ্গে ডা. বুলবুলের দুই সন্তানের পড়ালেখার দায়িত্ব সরকারকে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। গতকাল ডা. বুলবুলের হত্যাকারীদের শাস্তি ও রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিতে এসএসসি-৯৭ ব্যাচ সংবাদ সম্মেলন করে। এতে বক্তব্য দেন মা বুলবুলি বেগম। এ সময় বুলবুলের অবুঝ দুই সন্তানকে কোলে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে বুলবুলের সহপাঠী বন্ধুরা বলেন, আহমেদ মাহি বুলবুল একজন সামাজিক ও মানবিক মানুষ ছিলেন। এই নৃশংস হত্যাকান্ডের পেছনে আরও কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখা উচিত। বুলবুলের ছোট ভাই আহমেদ রাহি বকুল বলেন, এটি পরিকল্পিত ঘটনা হতে পারে। পরিচিতদের কেউ জড়িত থাকতে পারে। তা না হলে এত সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার খবর পেল কীভাবে। ভাবি ও দুই শিশুসহ আমাদের পরিবারের কী হবে? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অনুরোধ- আমার ভাইয়ের খুনিদের শনাক্ত করুন।
রংপুর সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গাফফার হোসেন বলেন, বুলবুলের মৃত্যুতে দুটি সন্তান, স্ত্রী ও তার মাসহ পুরো পরিবারটি এখন অসহায়। অভিভাবক শূন্য এই পরিবারের জন্য সরকারকে কিছু করতে হবে। বুলবুলের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি। এর আগে গতকাল সকাল ৭টায় ডা. বুলবুলের লাশ ঢাকা থেকে রংপুরের ভগিবালাপাড়ার বাসায় নিয়ে আসা হয়। বাদ জোহর স্থানীয় রামপুরা জামে মসজিদে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।