ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে থাকা শ্রীলঙ্কায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ সবখানে ছড়িয়ে পড়েছে। এ বিক্ষোভ দমনে গোটা দেশে জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। গত শুক্রবার রাতে সরকারি গেজেটে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এই সঙ্গে জারি করা হয়েছে ৩৬ ঘণ্টার কারফিউ। আদেশে বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতার ও তাদের বিনা বিচারে আটক রাখার জন্য সেনাবাহিনীকে বলা হয়েছে। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স।
খবরে বলা হয়, খাদ্য, তেল ও বিদ্যুতের ভয়াবহ সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। এর জেরে দেশটির প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপক্ষের বাসভবনের সামনে গত বৃহস্পতিবার রাতে ব্যাপক বিক্ষোভ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এরপর সারা দেশে এ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশটি নতুন করে ৩৬ ঘণ্টার কারফিউ জারি করেছে। এ-সংক্রান্ত নির্দেশে বলা হয়েছে, গতকাল স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে আগামীকাল সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত এই কারফিউ জারি থাকবে। কারফিউ চলাকালীন প্রয়োজনীয় পরিষেবা ছাড়া শ্রীলঙ্কানদের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না। শুক্রবার রাতের সরকারি গেজেটে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপক্ষে রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থা জারির নির্দেশ দিয়েছেন। এ নির্দেশ অনুযায়ী, সেনাবাহিনী যে কোনো বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার এবং বিনা বিচারে দীর্ঘ সময় আটক রাখতে পারবে। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, চরম রিজার্ভ সংকটের কারণে গত কয়েক মাস ধরে শ্রীলঙ্কায় পণ্য আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। এতে লাগামহীনভাবে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম। জ্বালানি সংকটের কারণে সেখানে এমনকি রান্নাবান্নাও কঠিন হয়ে পড়েছে। চুলা জ্বালানোর জন্য কেরোসিন সংগ্রহ করতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে দেশটিতে। এ ছাড়া, জ্বালানি সংকটে দেশটিতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। ফলে দৈনিক ১৩ ঘণ্টারও বেশি লোডশেডিং হচ্ছে সেখানে। কাগজ সংকটের কারণে স্কুলগুলোতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পরীক্ষা নেওয়া। ব্যাহত হচ্ছে দৈনিক পত্রিকা ছাপানোর কাজও। দেশটিতে বৈদেশিক মুদ্রার চরম সংকট চলছে, যা দেশটির অর্থনীতিকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছে। এতে জন অসন্তোষ চরমে উঠেছে। টানা কয়েকটি সরকারের অব্যবস্থাপনার ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট কভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। মহামারী দেশটির পর্যটন ও রেমিট্যান্স খাতে বড় আঘাত হেনেছে। গণমাধ্যমকর্মীরা জানান, জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর প্রথম দিনে গতকাল রাজধানী কলম্বোতে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দোকানপাট খুলতে দেখা গেছে। এদিকে জরুরি অবস্থা ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় দেশটিতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জুলি চাং বলেছেন, ‘শ্রীলঙ্কানদের শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানানোর অধিকার রয়েছে, এটা গণতান্ত্রিক মতপ্রকাশে অপরিহার্য।’ টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি আমি, আশা করছি আসছে দিনগুলোতে সব পক্ষই সংযত হবে; এর পাশাপাশি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তিও খুব দরকার।’