প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ আরও সমৃদ্ধ করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানিকেন হুইটফেল্ড প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গতকাল গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি আরও বলেন, সরকার দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে আরও শক্তিশালী করার জন্য কাজ করছে।
নরওয়েজিয়ান মন্ত্রী হুইটফেল্ড আগামী নির্বাচনের বিষয়টি উত্থাপন করায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করে থাকে এবং সেটি একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ, নীতিনিষ্ঠ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সামরিক শাসকরা ক্ষমতা দখল করলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পিছিয়ে যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা (সামরিক শাসকরা) বন্দুক ব্যবহার করে ক্ষমতায় আরোহণ করে এবং তারপর রাজনৈতিক দল গঠন করে রাজনীতিতে অবতরণ করে।নরওয়ের মন্ত্রী জোরপূর্বক ১১ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদারতার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, আমরা জানি এই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করছে। নরওয়ের মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও নরওয়ের মধ্যে বিদ্যমান সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরও জোরদার হবে।
কভিড-১৯ মহামারি সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার পাশাপাশি মহামারিকে সফলভাবে মোকাবিলা করেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় নরওয়ের সমর্থন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যুদ্ধোত্তর জাতি গঠনের প্রচেষ্টার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, তখন থেকেই নরওয়ে আমাদের বন্ধু এবং মূল্যবান উন্নয়ন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদার।
বৈঠকের শুরুতে তারা দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসপেন রিক্টার-সেভেনডসেন উপস্থিত ছিলেন।
আরও অর্থনৈতিক অংশীদারি চায় বাংলাদেশ নরওয়ে : কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং সামুদ্রিক খাতে সহযোগিতার মাধ্যমে অর্থনৈতিক অংশীদারিকে আরও সম্প্রসারিত করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ও নরওয়ে। রবিবার রাজধানীতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ও সফররত নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানেকিন হুইটফেল্ডের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে দুই দেশ এ আগ্রহ প্রকাশ করে। দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েও আলোচনা করেছেন বলে গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। মন্ত্রণালয় জানায়, নবনিযুক্ত নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চলতি বছর দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে দুই দিনের বাংলাদেশ সফর করেছেন। বৈঠকে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিশেষ করে অফশোর নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তৈরি পোশাক খাতে নিরাপত্তা ও সবুজ উৎপাদন সুবিধা তৈরিতে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে অবহিত করেন। নরওয়ের মন্ত্রী জাহাজ ভাঙা শিল্পের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং হংকং কনভেনশন অনুসমর্থনের বিষয়ে বাংলাদেশের পরিকল্পনার বিষয়ে খোঁজ নেন। মোমেন মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিয়ে মানবিক সংকটের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন। হুইটফেল্ড মানবিক ভিত্তিতে বাংলাদেশের আতিথেয়তার প্রশংসা করেছেন এবং মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে রোহিঙ্গারা যে অগ্রাধিকার দিয়েছে তা স্বীকার করেছেন। দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েও আলোচনা করেন। তারা ইউক্রেনে একটি কার্যকর যুদ্ধবিরতির জন্য অগ্রাধিকারের উপরও গুরুত্ব আরোপ এবং মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এর আগে নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। পরে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত কর্তৃক কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনায় যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ডেনমার্কের রাজকুমারীর : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে দেখা করেছেন ডেনমার্কের রাজকুমার ফ্রেডরিকের স্ত্রী ম্যারি। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দেখা করেন রাজকুমারী। এর আগে সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান ম্যারি এলিজাবেথ। এ সময় তাঁকে অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। পরে বিমানবন্দর থেকে রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে আসেন রাজকুমারী। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য গণভবনের উদ্দেশে রওয়ানা দেন। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন রাজকুমারী। এ সময় টেকসই ও সবুজ ফ্রেমওয়ার্ক বিষয়ে বাংলাদেশ এবং ডেনমার্কের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। রাজকুমারী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গতকাল বিকালে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প দেখতে ডেনমার্কের রাজকুমারী ইউ-এস বাংলার একটি ফ্লাইটে কক্সবাজার গেছেন।