শ্রীলঙ্কার সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষেসহ তার ১৫ সহযোগীর দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে একটি আদালত। এ জন্য তাদের পলায়নের পথ বন্ধ হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। এদিকে রাজপথে গণবিক্ষোভ অব্যাহত থাকলেও পদত্যাগ করতে নারাজ মাহিন্দার ছোট ভাই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে তিনি গতকাল রনিল বিক্রমাসিংহেকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। পাঁচবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও শ্রীলঙ্কার ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) এই নেতা এদিন সন্ধ্যায় শপথ নিয়েছেন। সূত্র : বিবিসি, ডেইলি মিরর, রয়টার্স, এএফপি। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, মাহিন্দা রাজাপক্ষের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কলম্বোর আদালত। একইসঙ্গে তার রাজনীতিবিদ ছেলে নমল ও ১৫ সহযোগীর ওপরও একই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর সহিংসতার ঘটনায় এ আদেশ দিয়েছে আদালত। একইসঙ্গে আদালত শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর সংঘবদ্ধ হামলার ঘটনা তদন্ত করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে। আদালতের এক কর্মকর্তা জানান, মাহিন্দা রাজাপক্ষে এবং তার সহযোগীদের গ্রেফতারের দাবিতে একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দিয়েছে। তবে আদালতের বিচারক মাহিন্দা রাজাপক্ষকে গ্রেফতারের আবেদনটি বাতিল করে দিয়েছে, কারণ যে কোনো সন্দেহভাজনকে আটকের ক্ষমতা কেবল পুলিশের রয়েছে।
পদত্যাগে নারাজ গোতাবায়া : শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তার পদত্যাগের দাবি প্রত্যাখ্যান করে দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করেছেন। বুধবার গভীর রাতে দেওয়া এ ভাষণে তিনি প্রেসিডেন্টের কিছু ক্ষমতা সংসদের কাছে হস্তান্তর করার প্রস্তাব দিয়েছেন। একই সঙ্গে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের ঘোষণাও দেন।
নতুন প্রধানমন্ত্রীর শপথ : প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার ভাষণের পরদিন গতকাল সন্ধ্যায় নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন রনিল বিক্রমাসিংহে। এর আগে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন রনিল বিক্রমাসিংহে। প্রসঙ্গত, ৭৩ বছর বয়সী ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) নেতা রনিল বিক্রমাসিংহে পাঁচবার শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।বিক্ষোভ চলছেই, প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি : প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিলেও প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ ছাড়া জাতীয় ঐক্যের সরকারে যোগ না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিরোধী দলগুলো। তারা গণবিক্ষোভ অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছে। সে অনুযায়ী, গতকালও প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে কারফিউ উপেক্ষা করে কলম্বোয় তার কার্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানে বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী নেতারা বলেন, ‘আমরা চাই না রাজাপক্ষে পরিবারের কেউ সরকারে থাকুক।’
খবরে বলা হয়, বিক্ষোভের পাশাপাশি রাস্তায় রাস্তায় টহল দিচ্ছে শ্রীলঙ্কান সেনারা। পদত্যাগকারী মাহিন্দা রাজাপক্ষেসহ তার সহযোগীরা উত্তর-পূর্বের যে নৌঘাঁটিতে সেনা নিরাপত্তায় রয়েছেন, সেই ত্রিঙ্কোমালি এলাকায়ও হাজার হাজার বিক্ষোভকারী অবস্থান নিয়ে আছেন। তারা পাহারা দিচ্ছেন, রাজাপক্ষে যাতে সেখান থেকে পালিয়ে যেতে না পারেন।
রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, গোতাবায়ার রাতের ভাষণে বিক্ষোভকারীরা সন্তুষ্ট হতে পারেনি।
কলম্বোর বিক্ষোভকারী নেতা কিভিন্দিয়া থেন্নাকোন বলেন, ‘তিনি গত ৩০ দিন কোথায় ছিলেন? মানুষের ওষুধ নেই, খাদ্য নেই। যে সংস্কারের কথা বলছেন, তা আমাদের দরকার নেই। আমরা চাই তিনি এখনই পদত্যাগ করুন।’ অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘একজনের পতন হয়েছে, আরেক জনকে ধাক্কা দিয়ে বের করতে হবে।’